ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়ির ছাদে বাগান

ফুল ফল গাছ আর সবুজ ভালবেসে দৃষ্টান্ত স্থাপন

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১১ জুলাই ২০১৭

ফুল ফল গাছ আর সবুজ ভালবেসে দৃষ্টান্ত স্থাপন

বিশ্বজিৎ মনি ॥ প্রকৃতিপ্রেমী গৃহবধূ ‘প্রকৃতি মুহরী’। শিশুকালে বাবা-মা শখ করে তার নাম রেখেছিলেন ‘প্রকৃতি’। কিন্তু তারা কি তখন জানতেন? সেদিনের সেই প্রকৃতি একদিন এই প্রকৃতিকেই ভালবেসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেবে? ফুল, ফল আর নানা প্রজাতির গাছ ভালবেসে তিনি তার মনের উদারতাকে এভাবেই প্রকাশ করবেন? প্রকৃতিকে ভালবেসে তিনি আরেক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন? নওগাঁ শহরের পার-নওগাঁ গোডাউনপাড়া নিবাসী গৃহবধূ প্রকৃতি মুহরীর স্বামীর নাম বাবলু মুহরী। বাবলু মুহরী অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক। বর্তমানে তিনি ব্যাংকের নওগাঁ শাখার ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে কর্মরত। প্রকৃতি মুহরী ২০ বছর ধরে নিজের হাতে বাড়ির ছাদে এমনি দৃষ্টিনন্দন বাগান করে নিজের হাতে পরিচর্যা করে আসছেন। নিজের অজান্তেই স্থাপন করে আসছেন তার প্রকৃতির প্রতি নিঃস্বার্থ ও উদার মনের ভালবাসা। বর্তমানে তার বাগানে শোভা পাচ্ছে, গোলাপ, সাদা আর গোলাপী মিশ্রিত দুর্লভ জবা, লাল জবা, শিউলী, বেলী, নয়নতারা, বাগান বিলাস, মৌচা-া, গাঁদা, রঙ্গন, কাঠগোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, পাতাবাহার, এলাম-া, স্থলপদ্ম, কাঠমল্লিকা, বেগুনী চেরী, এরিকাপাম্প, পারিজাত, এ্যাডেনিয়াম, ন্যাস্টারশিয়াম, নাইট কুইন, মাধবীলতা, কাঞ্চন, রক্তকরবী, দোপাটি, লেবু, লিচু, মরিচ, বনসাই (বট, পাকুড়, নাকুড়-৮টি) গাছ। নিয়মিত এই বাগান পরিচর্যা করেন, প্রকৃতি মুহরী, স্বামী বাবলু মুহরী আর মেয়ে অঙ্কিতা মুহরী। এদিকে বর্ষার জলে নতুন প্রাণ পেয়েছে প্রকৃতি। বৃষ্টির জলে গাছের পাতাগুলো ধুয়ে গেছে। প্রতিটি গাছের পাতা এখন সবুজ আর সবুজ। সবুজের সমারোহের মাঝে চমৎকার সব ফুটে আছে বর্ষালী ফুলগুলো। যে কেউ তাদের ছাদ বাগান পরিদর্শন করলে মুগ্ধ না হয়ে থাকতে পারবেন না। শনিবার বাবলু মুহরীর আমন্ত্রণে তার বাসায় গিয়েছিলাম। বাসার ছাদে উঠে বিস্মিত হয়ে পড়ি। আপন মনে বেড়ে উঠছে ওই ছাদ বাগানের গাছগুলো। বসন্তের ফুল, গ্রীষ্মের ফুল, বর্ষার ফুল, শরতের ফুল সকল ঋতুর ফুল গাছ সেখানে শোভা পাচ্ছে। ফুলভর্তি গাছের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। সেই সঙ্গে সুবাস। বাবলু মুহরী জানান, এবার তার ছাদে লাগানো লিচু গাছে কয়েকটা লিচু ধরেছিল। লিচু গাছের পাশেই চোখে পড়লো মরিচ গাছ। পর্যাপ্ত মরিচ ধরেছে গাছে। একটুতেই মন ভরে যায়। দূর হয়ে যায় মনের সকল ক্লান্তি আর দুর্ভাবনা। ইচ্ছে করে ওই বাগানে একটু জিরিয়ে নিতে। এই দৃষ্টিনন্দর বাগান সম্পর্কে জানতে চাইলে গৃহবধূ ‘প্রকৃতি মুহরী’ জনকণ্ঠকে বলেন, শৈশব থেকেই তার ফুলের প্রতি আকর্ষণ বেশি ছিল। তখন থেকেই তিনি ফুলকে খুব ভালবাসতেন। কৈশরে এসে তিনি ঘরে স্থাপিত ঠাকুর পূজার প্রতি ঝুঁকে পড়েন। এই ঠাকুর পূজাতে প্রয়োজন পড়ে ফুলের। তখন থেকেই তিনি বাড়ির আশপাশে ফুল গাছ লাগাতেন। বিয়ের পর ১৯৯৭ সালে স্বামী গৃহে তিনি প্রথম একটি কাঠমল্লিকা ফুলের গাছ লাগান। ২০ বছর বয়সের গাছটি এখনও তার বাগানে শোভা পাচ্ছে। ওই গাছের ফুল দিয়ে তিনি প্রতিদিন গৃহদেবতার পূজা সারেন। এরপর ধীরে ধীরে তিনি তার স্বামীর সহযোগিতায় পুরো ছাদেই গড়ে তোলেন দৃষ্টিনন্দন বাগান। তার বাগান থেকে ফুল সংগ্রহ করে প্রতিবেশীরা তাদের প্রয়োজন মেটায়। এছাড়া বিভিন্ন পূজা-পার্বণ, মহান স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ বিশেষ বিশেষ দিবসে পাড়ার ছেলে-মেয়েরা সেখান থেকে ফুল সংগ্রহ করে থাকে। প্রকৃতি মুহরী জানান, নিজের পূজা পার্বণের পরেও প্রতিবেশী ছেলে-মেয়েরা যখন বিশেষ বিশেষ দিনে তার বাগানের ফুল দিয়ে ভাল কোন কাজে লাগায়, তখন তিনি ভীষণ আনন্দ বোধ করেন। তৃপ্ত হন তিনি। মনে করেন, এই বাগান করা যেন তার স্বার্থক হয়েছে।
×