ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চাষীদের কার্ডে

বড়াইগ্রামে সরকারী গুদামে গম সরবরাহ করেন ব্যবসায়ীরা

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ১০ জুলাই ২০১৭

বড়াইগ্রামে সরকারী গুদামে গম সরবরাহ করেন ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, নাটোর, ৯ জুলাই ॥ বড়াইগ্রামে চাষীদের পরিবর্তে ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে গম সংগ্রহের অভিযোগ করা হয়েছে। যেসব চাষীর নামে গম সরবরাহ করা হয়েছে তাদের অনেকেই দাবি করেছেন তারা জানেন না। তাদের নামে কিভাবে ব্যাংক এ্যাকাঊন্ট থেকে ওজন মান ও মজুদ চালানের বিপরীতে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে তাও তারা জানেন না। এ সকল চাষীর দাবি কতিপয় ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সহায়তায় অনিয়ম এবং দুর্নীতির মাধ্যমে গম সংগ্রহ অভিযান শেষ করেছে। ফলে ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও সরকারের অপচয় হয়েছে। সরজমিনে দেখা যায় নগর গ্রামের শরিফুল ইসলাম। তার নামে তিন মেট্রিক টন গম বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সংগ্রহ করেছেন। সোনালী ব্যাংক বনপাড়া শাখা থেকে টাকা উত্তোলনের জন্য ভারপ্রাপ্ত খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা ডব্লিউ বিসি নং ২৪৮৯৮০৪, ইস্যু করেছেন। বনপাড়া সোনালী ব্যাংক থেকে শরিফুল ইসলামের নামে টাকাও উত্তোলন করা হয়েছে। কিন্তু শরিফুল ইসলাম জানান, তিনি খাদ্যগুদামে কোন গম সরবরাহ করেননি। এবং ব্যাংক থেকে কোন টাকা উত্তোলন করেননি। তিনি বলেন, শুধু তিনি নয় নগর ইউনিয়নের বেশিরভাগ চাষীই জানে না। অথচ তাদের নামে খাদ্যগুদামে গম সরবরাহ করা হয়েছে। আরেক গম চাষী নগর গ্রামের বকুল আলী একই কথা জানিয়ে বলেন, সামাদ তার কাছ থেকে কৃষি কার্ডটি চেয়ে নিয়েছিল। কিন্তু তিনি কোন গম সরবরাহ কিংবা টাকা উত্তোলন করেননি। অথচ তার নামে গম সরবরাহ দেখিয়ে ওজন মান ও মজুদ চালান নং ২৪৮৯৯৩২ ইস্যুসহ বনপাড়া সোনালী ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। আরেক চাষী আয়নাল হক। তিনি বলেন, তিনিও বনপাড়া খাদ্যগুদামে কোন গম দেননি। তবে তার এক ভাতিজা চাষী কার্ডটি তার কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছিলেন। অথচ তার নামে ওজন মান ও মজুদ চালান নং ২৪৮৯৯৬৪ গম সরবরাহ দেখানো হয়েছে। তিনি বলেন সোনালী ব্যাংক বনপাড়া শাখায় তার কোন এ্যাকাউন্ট নেই। কিন্ত তার নামে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। একই কথা বলেন আব্দুল হালিম বলেন, এক নেতা এসে আমার কাছ থেকে কার্ড নিয়ে গেছে। তারপরে আর কিছু জানি না। তবে তিনি ওই নেতার নাম জানাতে অস্বীকার করেন। দেখা যায়, ধানাইদহ গ্রামের কৃষক রেজাউল করিম ওজন মান ও মজুদ চালান নং ২৪৮৯৯৯১১ জোনাইল গ্রামের আব্দুল মতিন ওজন মান ও মজুদ চালানের নং ২৪৮৯৯৯০৭, আদাই গ্রামের মাহাতাব সোনার ওজন মান ও মজুদ চালানের নং ২৪৮৯৯৯৩৭ নগর গ্রামের মজিবর রহমান ওজন মান ও মজুদ চালানের নং ২৪৮৯৮৩৮ ধানাইদহ গ্রামের আক্কাস আলী ওজন মান ও মজুদ চালানের নং ২৪৮৯৯৯১০ নগর গ্রামের সেলিম ওজন মান ও মজুদ চালানের নং ২৪৮৯৮৯৩ ধানাইদহ গ্রামের নুর মোহাম্মাদ ওজন মান ও মজুদ চালানের নং ২৪৮৯৯৯১২ নিতাই নগর গ্রামের ওমর আলী ওজন মান ও মজুদ চালানের নং ২৪৮৯৯৯৬৩ বিপরীতে একই কায়দায় গম সরবরাহ ও টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এ সকল অনিয়ম বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা রুহুল আমিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি মোবাইলে কোন কিছু জানাতে অস্বীকার করে লাইন কেটে দেন। বড়াইগ্রাম উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, মখলেছ আল-আমিনের সঙ্গে বারবার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবদকের ফোন রিসিভ করেননি। সোনালী ব্যাংক বনপাড়া শাখার ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান জানান, চাষীদের এ্যাকাউন্টের বিপরীতে তাদের স্বাক্ষর নিয়েই টাকা প্রদান করা হয়েছে। কোন অনিয়ম করা হয়নি। গম সংগ্রহ কমিটির সভাপতি বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইশরাত জাহান জানান, তিনি এ রকম কোন অনিয়মের অভিযোগ পাননি। তবে বনপাড়া থেকে মুলাডুলি খাদ্যগুদামে ব্যবসায়ীরা গম দিচ্ছেন সংবাদ পেয়ে তিনি গত ১৭ জুন কিছু গম আটক করেছিলেন। কিন্তু তথ্যপ্রমাণের অভাবে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন।
×