ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রূপগঞ্জে অবৈধ করাতকল ॥ চলছে বৃক্ষনিধন

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ১০ জুলাই ২০১৭

রূপগঞ্জে অবৈধ করাতকল ॥ চলছে বৃক্ষনিধন

নিজস্ব সংবাদদাতা, রূপগঞ্জ, ৯ জুলাই ॥ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই গড়ে তোলা হয়েছে ৫২টি করাতকল। এদের মাঝে একটির সনদ থাকলেও বাকি ৫১টিই নিয়ম বহির্ভূতভাবে অবাধে বৃক্ষনিধন কার্যক্রম চালাচ্ছে। ফলে গাছ চিরাই করা সহজলভ্য হওয়াতে ফার্নিচার ব্যবসায়ী ও কাঠমিস্ত্রিরা অপরিপক্ক গাছের কাঠ ব্যবহার করে বৃক্ষনিধনের কাজে অংশ নিয়েছে বেপরোয়াভাবে। ফলে গ্রামীণ এলাকায় অবাধে গাছ কেটে ফেলায় তৈরি হয়েছে পরিবেশ বিপর্যয়। শুধু তাই নয়, উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার ছাড়াও বন বিভাগের জমিতেই গড়ে তোলা হয়েছে ৫২টি করাত কল। এসব করাতকলে প্রতিদিন স্থানীয়রা হাজার হাজার ঘনফুট কাঠ চিরাই করে চলেছে। এসব চিরাই কাঠের মাঝে রয়েছে বন বিভাগের জমিতে থাকা গাছ ও উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের রাস্তাঘাটের পাশের সরকারী গাছ। এদিকে বনকর্মকর্তার অবহেলার কারণে এ করাতকলের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। তাই বাড়ছে এ অঞ্চলের পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কাও। সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার দু’টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ হাটের পাশে গড়ে উঠেছে ৪০টির বেশি করাতকল। উপজেলার সদর ইউনিয়নের ভক্তবাড়ি বাজার এলাকায় রয়েছে দুটি করাতকল। এছাড়াও একই ইউনিয়নের ইছাপুরা বাজার ও বাগবের বাজারে রয়েছে আরও ৪টি করাতকল। এসব করাতকল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নেয়া সনদ ছাড়া কোন সনদ নেই। তবে উপজেলা বন বিভাগের মাধ্যমে সনদের আবেদন করলেও বিধিবিধান যুক্ত না করার অজুহাতে সনদ দেয়নি প্রশাসন। এছাড়াও দাউদপুর ইউনিয়নের বেলদী, দেবই ও পুটিনা বাজারসহ কুলিয়াদির বন বিভাগের জমিতে রয়েছে আরও ৫টি করাতকল। এসব করাতকল মালিকরা অনেকটা প্রশাসনের আড়ালেই এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন বলে দাবি করেন স্থানীয়রা। দাউদপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কুলিয়াদি ও কালনী মৌজায় বেশ কিছু জমি রয়েছে বন বিভাগের আওতায়। এসব বনের অভ্যন্তরে স্থানীয় প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে গড়ে তুলেছে বসতভিটা। শুধু তাই নয়, এ এলাকায় একাধিক করাতকলও গড়ে তুলেছেন স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ীরা। একই চিত্র দেখা গেছে উপজেলার ভোলাব ইউনিয়ন এলাকার আতলাপুর, পাইসকা ও ভোলাব বাজার এলাকায়। এ ছাড়াও উপজেলার গোলাকান্দাইল, ভুলতা, মুড়াপাড়া, কায়েতপাড়া ইউনিয়ন, কাঞ্চন ও তারাব পৌরসভায় এসব অবৈধ করাতকলের অবস্থান দেখা গেছে। তবে তারাব পৌরসভার বরপা এলাকায় আল মিনার টিম্বার্স এ্যান্ড স’ মিল নামক একটি প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় বৈধতা রয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে উপজেলা বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, এসব প্রতিষ্ঠানের কারোরই কোন প্রকার সনদ নেই। তবে এসব সনদের জন্য তারা আবেদন করে রেখেছেন। এ বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা বন কর্মকর্তা সঞ্জয় হাওলাদার বলেন, উপজেলার ৫২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কেবল একটির সনদ রয়েছে। এছাড়াও ২০টি প্রতিষ্ঠানের সনদের নবায়ন করা হয়নি বটে। ফলে সেই মেয়াদহীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবৈধ বলা যায় না। এদিকে এসব প্রতিষ্ঠান তাদের লাইসেন্স প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। তাই তাদের সতর্ক করা হয়েছে। বনবিভাগের কাঠ কাটা ও বৃক্ষনিধনে কেউ জড়িত হয়ে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মামলা করা হবে বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইদুল ইসলাম বলেন, করাতকল স্থাপন আইন বিধি অনুযায়ী কোন করাতকল প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম চালালে ২ মাস থেকে ৩ বছরের সাজা ও এর অতিরিক্ত ন্যূনতম ২ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দ- দেয়ার বিধান রয়েছে। এ সময় তিনি আরও বলেন, রূপগঞ্জ উপজেলার করাতকলগুলোকে দ্রুত লাইসেন্স নেয়ার জন্য সতর্ক করা হয়েছে। তাদের অনিয়মের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবেন তিনি।
×