ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার নেত্রকোনার ছয় রাজাকারের বিরুদ্ধে তৃতীয় সাক্ষীর জবানবন্দী

তিন পাক সেনা আমার চাচিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে

প্রকাশিত: ০৬:২০, ১০ জুলাই ২০১৭

তিন পাক সেনা আমার চাচিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার শেখ মোঃ আবদুল মজিদ ওরফে মজিদ মওলানাসহ ছয় রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের প্রথম তৃতীয় সাক্ষী হামিদা খাতুন জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে তিনি বলেন, পাকিস্তানী আর্মি ও রাজাকাররা আমাদের বাড়িতে আসে। ভয়ে আমি ও আমার ছোট ভাই, চাচি জমিলা খাতুন ও দাদি আমার চাচি জামিলা খাতুনের ঘরে গিয়ে আশ্রয় নেই। পাকিস্তানী আর্মি ও রাজাকাররা আমার চাচি জমিলা খাতুন ওরফে নায়েবের মাকে চৌকির নিচ থেকে টেনেহেঁচড়ে বের করে নিয়ে আসে। তারা জামিলা খাতুনের কাপড়-চোপড় টানাহেঁচড়া করে খুলে ফেললে তিনি কান্নাকাটি করতে থাকে। তখন ওই রাজাকাররা ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। এরপর তিন পাকিস্তানী সৈন্য চাচিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। জবানবন্দী শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য আজ সোমবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে দুই সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রবিবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। এ সময় প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মুখলেসুর রহমান বাদল, প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি। আসামি পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট গাজী এইচ এম তামিম। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম হামিদা খাতুন। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৫৮-৫৯ বছর। আমার ঠিকানা, গ্রাম-পুর্ববুদি, থানা-পূর্বধলা, জেলা-নেত্রকোনা। আমি লেখাপড়া করি নাই। একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল আনুমানিক ১২-১৩ বছর। ১৯ ৭১ সালে অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম দিকে কোন একদিন দুপুর বেলা ৩ জন পাকিস্তানী আর্মি ও ৫ জন রাজাকার আমাদের বাড়িতে আসে। এই সময় আমার মা, আমি, আমার ছোট ভাই দুলাল, আমার দুই চাচি জমিলা খাতুন ওরফে নায়েবের মা ও তারার মা এবং আমার দাদি (বর্তমানে মৃত) আমাদের বাড়িতে উপস্থিত ছিল। পাকিস্তানী আর্মি ও রাজাকারদের দেখে আমর মা ও চাচি তারার মা দৌড়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় এবং আমিসহ আমার ছোট ভাই, চাচি জমিলা খাতুন ও দাদি আমার চাচি জামিলা খাতুনের ঘরে গিয়ে আশ্রয় নেই। আমি ও আমার ছোট ভাই দুলাল চাচির ঘরের চৌকির নিচে গিয়ে লুকাই। এই সময় জামিলা খাতুন ওরফে নায়েবের মা কার ২১ দিনের বাচ্চা নিয়ে ওই ঘরে অন্য একটি চৌকির নিচে লুকায়। এই সময় পাকিস্তানী আর্মি ও রাজাকাররা ওই ঘরের ভেতরে ঢুকে এবং রাজাকাররা আমার চাচি জমিলা খাতুন ওরফে নায়েবের মাকে চৌকির নিচ থেকে টেনেহেঁচড়ে বের করে নিয়ে আসে। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, এ সময় পাকিস্তানী আর্মিরা আমার চাচি জমিলা খাতুনের কাপড়-চোপড় টানাহেঁচড়া করে খুলে ফেললে তিনি কান্নাকাটি করতে থাকে। তখন রাজাকাররা ওই ঘর থেকে বেরিয়ে যায় এবং এরপর ওই তিন পাকিস্তানী আর্মি আমার চাচিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ধর্ষণ করার সময় আনুমানিক এক ঘণ্টা আমার চাচি চিৎকার চেঁচামেচি করে। এরপর পাকিস্তানী আর্মিরা আমাদের বাড়ির সামনে একটি পুকুরে উলঙ্গ হয়ে গোসল করে। তারপর তারা চলে যায়। কক্সবাজারে দুই যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে দায়ের মামলা ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ স্টাফ রিপোর্টার কক্সবাজার থেকে জানান, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ থেকে রক্ষা পেতে অঢেল টাকা খরচ ও আলবদর কমান্ডারের পক্ষে পুলিশ মিথ্যা রিপোর্ট দিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি কক্সবাজারের দুই যুদ্ধাপরাধীর। অবশেষে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ কক্সবাজার আদালতে দায়ের করা মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রেরণের আদেশ দিয়েছেন। শহরতলী খুরুশকুলের ২ যুদ্ধাপরাধী মাওলানা আব্দুল আওয়াল ও মাওলানা নুরুল আবছারের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বাংলাদেশ তাঁতীলীগের কেন্দ্রীয় নেতা এ্যাডভোকেট ছলিম উদ্দিন সেলিম বাদী হয়ে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (নং-৪) গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর মামলাটি (সিআর ১০৫৩) দায়ের করেন। আদালতের দেয়া আদেশটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে রবিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করা হয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে। মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় কক্সবাজার সদর খুরুশকুলসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে আলবদর কমান্ডার মাওলানা আব্দুল আওয়াল ও তার সহযোগী মাওলানা নুরুল আবছার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে নিধনে সক্রিয় ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা, বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, হিন্দু পরিবারের যুবতীদের ধর্ষণ, লুটপাটসহ পাক-হানাদার বাহিনীকে সহযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে কাজ করতেন। পাক-হানাদার বাহিনীর গুলিতে আহত মুক্তিযোদ্ধা ফরহাদ খুরুশকুলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তবে মাওলানা আব্দুল আওয়ালের নেতৃত্বে স্থানীয় শান্তি কমিটির নেতারা ফরহাদকে পুনরায় পাক-হায়েনাদের হাতে তুলে দিয়ে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় আলবদর কমান্ডার আব্দুল আওয়ালের সহযোগিতায় খুরুশকুলে পাক-হানাদার বাহিনী গুলি করে হত্যা করে সতীষ চন্দ্র মহাজন, তরণী মহাজন, সুরেন্দ্র দে ও বানেশ্বর দেসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে। আব্দুল আওয়ালের সহযোগিতায় পাক হানাদার বাহিনী হিন্দুদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট এবং হিন্দুদের দেশ ত্যাগে বাধ্য করে। আলবদর কমান্ডার আব্দুল আওয়াল চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত ডালিম হোটেলে (যুদ্ধাপরাধী ফাঁসিতে দ-িত মীর কাশেম আলীর) সঙ্গে যোগাযোগ করে কক্সবাজার সদরে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা ও নির্যাতনের নীলনক্সা করতেন। মুক্তিযোদ্ধা প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী ইতিহাসবিধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মুনতাসীর মামুনের লেখা আলবদর ’৭১ এবং আবুল কালাম আজাদের লেখা রাজাকার নামা বইতে যুদ্ধাপরাধী মাওলানা আব্দুল আওয়ালকে তৎকালীন সময়ে আলবদর কমান্ডার হিসেবে উল্লেখ করেন।
×