ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার বলছে অন্য দেশের নাগরিকের দায় বাংলাদেশ নেবে না

মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা বাংলাদেশী পরিচয়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ১০ জুলাই ২০১৭

মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা বাংলাদেশী পরিচয়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে

তৌহিদুর রহমান ॥ ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী পরিচয়ে অবৈধভাবে আশ্রয় নেয়া নাগরিকদের মধ্যে রোহিঙ্গারাও ঢুকে পড়ছেন। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকরা বাংলাদেশী পরিচয়ে বিভিন্ন দেশে আশ্রয়ও নিচ্ছেন। আর তাদের দায়ভার বাংলাদেশীদের ওপরেই পড়ছে। বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে রোহিঙ্গাদের বিদেশে পাড়ি দেয়া নিয়ে সরকার থেকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র এসব তথ্য জানায়। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের বিদেশে আশ্রয় নেয়ার ঘটনা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আর বিদেশে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশকেই প্রধান রুট হিসেবে বেছে নিচ্ছেন তারা। এদের কেউ কেউ বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ সাগরপথে বিদেশে যাচ্ছেন। মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে রোহিঙ্গা নাগরিকরা সকলেই যে বাংলাদেশে অবস্থানের জন্য আসছেন, তা নয়। অনেকেই আসছেন বিদেশে পাড়ি দেয়ার জন্য। কেননা বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাড়ি দেয়াটা এখন তাদের জন্য অনেকটা সহজ। এক শ্রেণীর দালালের মাধ্যমে বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট হাতিয়ে নিচ্ছেন রোহিঙ্গারা। আর সেই পাসপোর্ট নিয়ে চলে যাচ্ছেন ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের হিসাব অনুযায়ী ২০০৮-১৫ সাল পর্যন্ত আট বছরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রায় ৯৪ হাজার বাংলাদেশী অবৈধভাবে প্রবেশ করেছেন। ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপে আশ্রয় নেয়া বাংলাদেশীদের সংখ্যা এখন বাড়ছে। এসব বাংলাদেশীকে ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশকে এখন চাপ দিচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তবে বাংলাদেশী পরিচয়ে যারা ইউরোপে গিয়েছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোহিঙ্গাও রয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশী পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরেই তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। অন্য কোন দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনবে না বাংলাদেশ। এদিকে প্রতিবছর হজ মৌসুমে বাংলাদেশ থেকে নাগরিকরা হজ করতে যান। আর এই সুযোগে বিদেশে পাড়ি দেন রোহিঙ্গারা। আবার ওমরাহ ভিসায় বাংলাদেশী নাগরিকদের পাশাপাশি রোহিঙ্গারাও বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। রোহিঙ্গারা ওমরাহ হজের নামে সৌদি আরবে পাড়ি জমালেও নাম হয়েছে বাংলাদেশী হিসেবে। কেননা তারা বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি গেছে। হজ শেষে রোহিঙ্গাদের দেশে না ফেরার দায় নিতে হয়েছে সরকারকেও। যে কারণে সৌদি আরব এক সময় ওমরাহ ভিসা বন্ধও করে দেয়। সৌদি আরবে রোহিঙ্গাদের কারণে দুর্ভোগে পড়ছেন বাংলাদেশী নাগরিকরা। রোহিঙ্গারা সেখানে বিভিন্ন দুর্নীতি-অনিয়ম ও সামাজিক অনাচারে জড়িয়ে পড়ছেন। আর সৌদি প্রশাসন থেকে ধরা পড়লেই দাবি করছেন তারা বাংলাদেশী। এছাড়া সৌদি সরকার থেকে কাজের অনুমতি পত্রের (আকামা) জন্য রোহিঙ্গাদের প্রতি এখন অনেকটাই সদয়। একজন রোহিঙ্গা নাগরিকের জন্য কোন কোম্পানি আকামার মেয়াদ যদি চার বছর করে থাকে, বাংলাদেশীদের ক্ষেত্রে সেটা করা হচ্ছে দুই বছর। মুসলিম ও নির্যাতনের শিকার হওয়ায় রোহিঙ্গাদের প্রতি সৌদি আরব বরাবরই আন্তরিক। সৌদি আরবে এখন প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক রয়েছেন। আর এসব রোহিঙ্গার বেশিরভাগই বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহারের মাধ্যমে সে দেশে গেছে। এদিকে মালয়েশিয়ায় এখন অবৈধ নাগরিকদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। সেখানে বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি প্রায় সাড়ে ৫শ’ বাংলাদেশীকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। তবে তারা সকলেই বাংলাদেশী কিনা এ প্রশ্ন রয়েছে। কেননা মালয়েশিয়ায় অনেক রোহিঙ্গা নাগরিক আশ্রয় নিয়েছে। সাগর পথের পাশাপাশি বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়েও মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন সময়ে পাড়ি জমিয়েছে তারা। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী পরিচয়ে অনেক রোহিঙ্গা এখন অবস্থান করছে। কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এলাকার মানুষের সঙ্গে রোহিঙ্গা নাগরিকদের চেহারা ও ভাষার অনেকটা মিল রয়েছে। তাই অনেক সময় প্রশাসনের কর্মকর্তারা রোহিঙ্গা নাগরিকদের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেন না। তারা বিভ্রান্তিতে পড়েন। প্রশাসনের কর্মকর্তারা অনেক সময়ে ভুল ধারণা করেন, এরা বাংলাদেশের নাগরিক। আর সেই সুযোগেই বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়ে থাকে রোহিঙ্গারা। একই ভুল করেন এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারাও। তারা রোহিঙ্গাদের চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের লোক মনে করে ছেড়ে দেন। রোহিঙ্গা নাগরিকরা যেন কোনভাবেই পাসপোর্ট না পায়, সে বিষয়ে সরকারের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রামের পাসপোর্ট অফিসকে এ বিষয়ে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। তবে প্রশাসনের কঠোর নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও রোহিঙ্গারা পেয়ে যাচ্ছেন পাসপোর্ট। কখনওবা দালালদের মাধ্যমে তারা পাসপোর্ট জোগাড় করে পাড়ি দিচ্ছেন বিদেশে।
×