ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এসবিএফ –এফবিসিসিআই বৈঠক আজ

সিঙ্গাপুরের বিনিয়োগ চায় সরকার

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১০ জুলাই ২০১৭

সিঙ্গাপুরের বিনিয়োগ চায় সরকার

এম শাহজাহান ॥ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ সিঙ্গাপুরের বিনিয়োগ চায় বাংলাদেশ। বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশটির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি করা সম্ভব বলে মনে করছে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। এছাড়া সিঙ্গাপুরের বিনিয়োগ আকর্ষণে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও (বিডা) জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সিঙ্গাপুরের উদ্যোক্তাদের জন্য পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চল দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এছাড়া বিদেশী বিনিয়োগকারীদের যেসব সুবিধা দেয়া হয়েছে সিঙ্গাপুরের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে। দেশটির সঙ্গে বিনিয়োগ, আমদানি-রফতানি বৃদ্ধিতে করণীয় নির্ধারণে এফবিসিসিআই এবং সিঙ্গাপুর বিজনেস ফেডারেশনের (এসবিএফ) যৌথ উদ্যোগে আজ সোমবার দুপুরে সোনারগাঁও হোটেলের বলরুমে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর বিজনেস ফোরাম অনুষ্ঠিত হবে। সভায় শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া সিঙ্গাপুর বিজনেস ফেডারেশনের (এসবিএফ) নেতৃবৃন্দরা যোগ দিবেন। বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্যে সিঙ্গাপুর এসবিএফের উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল ইতোমধ্যে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন। ৩৮ সদস্যের এ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান ড. আর টেভেনড্রান। জানা গেছে, সিঙ্গাপুরের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগ আকর্ষণে সম্প্রতি দেশটি সফর করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। ওই সময় তিনি সিঙ্গাপুরের উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এছাড়া বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সিঙ্গাপুর বিজনেস ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ বিজনেস চেম্বার অব সিঙ্গাপুর একটি এমওইউ স্বাক্ষর করে। বাণিজ্যমন্ত্রী ওই সময় সরকার ঘোষিত ১০০টি স্পেশাল ইকোনমিক জোনে বিনিয়োগের জন্য সিঙ্গাপুরের উদ্যোক্তাদের আহ্বান জানিয়েছিলেন। মন্ত্রীর পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়-সরকার বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বিনিয়োগে উদারনীতি গ্রহণ করেছে। প্রয়োজনে বিনিয়োগকৃত অর্থ সম্পূর্ণ ফেরত নেয়া যাবে, এ বিষয়ে আইনদ্বারা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে। তাই সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে বেশি লাভবান হবেন। সিঙ্গাপুরের বিনিয়োগকারীরা চাইলে এক বা একাধিক ইকোনমিক জোন বরাদ্দ দেয়া হবে। কারণ, সরকার ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্টকে (এফডিআই) বিশেষ গুরুত্ব ও সহযোগিতা দিচ্ছে। এদিকে, সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়িক সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোক্তাদের কাছে বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ, সরকার প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা ও সম্ভাবনা তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ অনেক পণ্য সিঙ্গাপুরে রফতানি করে। বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশী সিঙ্গাপুরে কাজ করছে। সেখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন পণ্য রফতানির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছর সিঙ্গাপুরে ১৬৪ দশমিক ৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রফতানি করা হয়েছে, একই সময়ে আমদানি করা হয়েছে ১৯৬৫ দশমিক ৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশে পণ্য রফতানি বৃদ্ধির মাধ্যমে বাণিজ্য ব্যবধান কমিয়ে আনা সম্ভব। জানা গেছে, তথ্যপ্রযুক্তি, সেবাখাত, বিদ্যুত খাতে সিঙ্গাপুরের উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ আহ্বান করা হবে। ইতোমধ্যে দেশটির উদ্যোক্তারা বাংলাদেশের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠছেন বলে জানা গেছে। এদিকে সর্বশেষ আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে বাংলাদেশে এফডিআই আকর্ষণে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলের (এসইজেড) কথা উল্লেখ করা হয়। এসইজেডে বিনিয়োগে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট আরোপ নেই। এছাড়া বিনিয়োগে সরাসরি উন্নয়ন এবং নির্মাণে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি আমদানিকে শতভাগ শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়া হয়েছে। ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট এফডিআইর স্থিতি দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৩৩৩ কোটি ডলার। বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে বাড়লেও ২০১৬ সালে বৈশ্বিক এফডিআই ২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৭৫ ট্রিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে উন্নয়শীল বিশ্বে কমেছে ১৪ শতাংশেরও বেশি। এলডিসিতে কমেছে ১৩ শতাংশ। এছাড়া দুর্বল কাঠামোর দেশের এফডিআই পরিস্থিতি এখনও তুলনামূলক কম এবং ওঠানামার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তবে আগামী দুই বছর এলডিসিতে এফডিআই বাড়তে পারে বলে প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাপী এফডিআই বাড়াতে নীতি পরিবেশ উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে এতে। এফডিআইর বৈশ্বিক তুলনায় ভাল অবস্থানে আছে দক্ষিণ এশিয়া।
×