ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কেশবপুরে বিএনপি নেতার দাপট

খাল দখল করে ঘের ও বাড়ি নির্মাণ

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ১০ জুলাই ২০১৭

 খাল দখল করে ঘের ও বাড়ি নির্মাণ

কবির হোসেন, কেশবপুর ॥ কেশবপুরের মঙ্গলকোট বাজারের পাশ দিয়ে প্রবাহিত সরকারী খাল দখল করে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। শুধু খাল দখল নয় বুড়িভদ্রা নদী ও শায়ের খালের তীরবর্তী প্রায় দুই একর জমি দখলে নিয়ে এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক শহিদুল ইসলাম মাছের ঘের, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করেছেন। তার ভয়ে এলাকার মানুষ মুখ খুলতে সাহস পায় না। যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তখন সেই সরকারের দলীয় লোকের ছত্রছায়ায় থেকে বিএনপির নেতা শহিদুল ইসলাম প্রভাব বিস্তার করে বহাল তবিয়তে তার রামরাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রশাসন তার কাছে ঠুটো জগন্নাথ বনে গেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করা হলেও শহিদুল আবারও সব দখল করে নিয়েছেন। রবিবার সকালে সরেজমিন মঙ্গলকোট বাজারে শহিদুলের দখলকৃত খাল ও খাস জমি দেখতে গিয়ে জানা যায়, মঙ্গলকোট বাজারের উত্তরে বুড়িভদ্রা নদী থেকে শায়ের খাল বাজারের ভেতর দিয়ে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে গেছে। উত্তরের গ্রামগুলো ও মাঠের বৃষ্টির পানি এই খাল দিয়েই বুড়িভদ্রা নদীতে পড়ে। এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক শহিদুল ইসলাম উত্তরে বুড়িভদ্রা নদী ও দক্ষিণে শায়ের খালের সংযোগস্থলের কোনায় প্রায় দুই একর জমি দখল করে বসতি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। মঙ্গলকোট-বাউশলা সড়কে বাজারের ভেতরের ব্রিজ থেকে বুড়িভদ্রা নদী পর্যন্ত প্রায় ৬শ’ ফুট শায়ের খালে বাঁধ দিয়ে তিনি মাছ চাষ করছেন। এই খালের পূর্ব তীরে প্রায় দুই একর জমির ওপর সে বাড়ি, পুকুর ও সবজি ক্ষেতও নির্মাণ করেছে। খালের ধার দিয়ে খাস জমিতে শহিদুল ইসলাম ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, রান্নাঘর, গোয়ালঘর, নলকূপ ও বাথরুম তৈরি করেছেন। এলাকার অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ২০০১ সালে নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় এলে শহিদুল ইসলাম এলাকার বাড়িঘর ও মঙ্গলকোট বাজারের দোকানপাট ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছিলেন। তখন তিনি বিএনপির নেতা ও সাজাপ্রাপ্ত রাজাকার মাওলানা সাখাওয়াত হোসেনের খুব কাছের লোক ছিলেন। শহিদুলের ভয়ে এলাকার কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না। এখন তিনি ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও মঙ্গলকোট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেনের সঙ্গে থেকে খাস জমি ও খাল দখল বজায় রেখেছেন। শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি মঙ্গলকোট ইউনিয়নের বসুন্দিয়া ওয়ার্ডের বিএনপির সভাপতি। বর্তমানে এলাকার চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মনোয়ার হোসেনের সঙ্গে উঠাবসা করেন। এখানে তিনি দেড় বিঘা জমি কিনে বসবাস করছে। সরকারী খালের পাড় দিয়ে লম্বায় প্রায় ৬শ’ ফুট ও আড়ে প্রায় ১৫-২০ হাত খাস জমিতে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়ি তৈরি করেছেন স্বীকার করে শহিদুল ইসলাম জানান, বন্যার পানি তার বাড়িতে যাতে না উঠতে পারে সে জন্য খালে বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের করেছি। সরকারী কোন অনুমতি নেননি তবে কিছুদিন আগে ইউএনও এসেছিলেন তার সঙ্গে বন্দোবস্ত নেয়ার একটা কথা হয়েছে। শহিদুলের খাল দখল করে ঘের করা দেখে ব্রিজের দক্ষিণ দিকে প্রায় ৪শ’ ফুট খাল দখল করে বাঁধ দিয়ে এলাকার হাবিব, তরিকুল, নজরুলসহ ৪-৫ জন মিলে আরও একটি মাছের ঘের করেছে। এলাকাবাসী জানায়, বুড়িভদ্রা নদী থেকে প্রায় এক কিলোমিটার শায়ের খাল এভাবে দখল করে মাছ চাষ করায় এবার বর্ষার পানি বেরুতে পারবে না। ফলে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মঙ্গলকোট বাজার কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান জানান, খাল বেঁধে মাছ চাষ করা অন্যায়। আমি কোন দখলের পক্ষে না। তিনি খাল দখলমুক্ত করার দাবি করেছেন। বাজার কমিটির সভাপতি জুলফিকার আলী জানান, মাছ চাষ করা ঠিক হয়নি। তবে বন্যার পানি বন্ধ করতে তিনি খালে বাঁধ দিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ কবীর হোসেন জানান, সরকারী খাল বা জায়গা দখল করার কোন সুযোগ নেই। যেভাবেই হোক তাদের উচ্ছেদ করা হবে। ওই জায়গা দখলের একটি অভিযোগ পেয়েছি এবং নায়েবকে মতামত দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তার মতামত পেলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×