ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জটিলতা বাড়ছে শিক্ষক কর্মচারীদের ট্রাস্ট চাঁদা বাড়াতেÑ

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ১০ জুলাই ২০১৭

জটিলতা বাড়ছে শিক্ষক কর্মচারীদের ট্রাস্ট চাঁদা বাড়াতেÑ

বিভাষ বাড়ৈ ॥ এমপিওভুক্ত বেসরকারী শিক্ষক কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের চাঁদা ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে জটিলতা ক্রমশই বাড়ছে। অসন্তোষ বাড়ছে পাঁচ লক্ষাধিক বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারীর মাঝে। শিক্ষকদের মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও অবসর-কল্যাণের টাকার বোঝা শিক্ষকদের ওপর চাপানোর অভিযোগ তুলে আন্দোলন শুরু করেছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। সরকার সমর্থক ও সরকারবিরোধী প্রায় সকল সংগঠনই ১০ শতাংশ চাঁদা গ্রহণের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। আন্দোলনে যাচ্ছেন সরকার সমর্থক বৃহৎ শিক্ষক-কর্মচারী জোট জাতীয় শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্টসহ বাকি সংগঠনের নেতারাও। অধিকাংশ শিক্ষক সংগঠনেরই অভিযোগ, আমলাতান্ত্রিক মারপ্যাঁচে ফেলে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে তথাকথিত কিছু নেতার প্ররোচনায় বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কেটে রাখার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় পৃথক দুটি গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশিত গেজেটে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ প্রদান করে ভবিষ্যতে অতিরিক্ত কী সুবিধা পাবেন সে বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত উল্লেখ না থাকায় হতাশা প্রকাশ করে শিক্ষক নেতারা বলছেন, অবসর কল্যাণের টাকা শিক্ষকদের থেকে নিতে হলে পূর্ণাঙ্গ অবসরসহ সকল সুবিধা দিতে হবে। অবসর-কল্যাণের টাকার বোঝা শিক্ষকদের ওপর চাপানোর সিদ্ধান্ত অবিলম্বেব প্রত্যাহার করতে হবে। এদিকে বেশকিছু শিক্ষক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনার পরও সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে একের পর কর্মসূচীর ঘোষণায় বিব্রত শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন। অবসর সুবিধা বোর্ডের সদস্য সচিব শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ শরীফ আহমদ সাদী তাদের অবস্থানের ব্যাখ্যা দিয়ে বলছিলেন, সারাদেশে বর্তমানে ৬৭ হাজারের বেশি শিক্ষক অবসরে গিয়েছেন। যারা এখন আর্থিক সুবিধার জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছেন। সম্প্রতি আবেদনের পাহাড় নিষ্পত্তির জন্য সব শিক্ষক নেতাকে নিয়ে সরকার বসেছিল। সেখানেই সরকারের পাশাপাশি শিক্ষকদের পক্ষ থেকে কন্ট্রিবিউশনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকার গত বছরের বাজেটে জট দূর করতে অবসর বোর্ডে ১শ’ কোটি ও কল্যাণ ট্রাস্টে ৫০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দেয়। এর বাইরে অবসর বোর্ডে ৫শ’ কোটি টাকা সিডমানি (যা খরচ করা যাবে না) দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, থোক বরাদ্দ, সিডমানির সুদ এবং চাঁদাসহ অন্যান্য অর্থ মিলিয়ে এক বছরে ৮ হাজার আবেদন নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়েছে। এবারের বাজেটেও অবসর খাতে দেড়শ’ এবং কল্যাণ খাতে ৫০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ এসেছে। যেহেতু সরকার এগিয়ে এসেছে, তাই এক বছর পর শিক্ষকদের চাঁদা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কার্যকরের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু বাড়তি হারে টাকা দেয়ার পরও শিক্ষকদের অবসরে গিয়ে আগের হারেই অর্থ তুলতে হবে। এ নিয়েই শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সচিব ও স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সাজাহান আলম সাজু বলছিলেন, এটাতো অস্বীকার করা যাবে না যে দুই বোর্ডে ৪৫ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর আবেদন পড়ে আছে। তারা তো শিক্ষক-কর্মচারী। তাদের টাকাতো দিতে হবে। এজন্য সরকারের যেমন করণীয় আছে আমাদের শিক্ষদেরও এগিয়ে আসতে হবে। তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, নিয়মানুসারে এজন শিক্ষক-কর্মচারী তার সর্বশেষ স্কেল অনুসারে অবসর কল্যাণের টাকা পান। আগে যে বেতন পেতেন নতুন পে-স্কেলের পর বেতন তার ডাবল হয়েছে। এখন তো একজনকে আগের টাকার ডাবল দিতে হচ্ছে। তাহলে এই টাকা কোথা থেকে আসবে? তবে শিক্ষক নেতা হিসেবে আমার দাবি হবে শিক্ষা জাতীয়করণ হোক। এটা হলে সব সমস্যই কেটে যাবে। আমি এও মনে করি অতিরিক্ত যে টাকা নেয়া হচ্ছে তার জন্য যেন অতিরিক্ত সুবিধাও দেয়া হয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন অনেকেই অনেক কথা বলছেন যে শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা হয়নি। কিন্তু তা ঠিক নয়। বোর্ড সভায় সকলের মতামত নিয়েই এটা করা হয়। বোর্ড সভায় প্রতিনিধিত্বশীল প্রায় সকল শিক্ষক সংগঠনের প্রতিনিধিই থাকেন। জানা গেছে, আগে নিয়মানুযায়ী বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ ভাতা দেয়ার লক্ষ্যে তাদের এমপিওর (পান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) অর্থ থেকে ৬ শতাংশ কেটে রাখা হতো। যার মধ্যে ছিল অবসরের জন্য ৪ শতাংশ ও কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য ২ শতাংশ। তবে নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ দুই খাতে এখন মোট ১০ শতাংশ হারে টাকা কেটে রাখা হবে। অবসর বোর্ডের জন্য ৬ আর কল্যাণের জন্য ৪ শতাংশ টাকা কাটা হবে। কিন্তু বাড়তি ৪ শতাংশ অর্থ কেটে রাখার বিনিময়ে চাকরি শেষে শিক্ষকরা অতিরিক্ত কোন আর্থিক সবিধা পাবেন না। একদিনে কেটে রাখা টাকার পরিমাণ বাড়ানোর অন্যদিকে এর বিনিময়ে অবসরের পর বাড়তি সুবিধা না দেয়ায় দ্রুতই অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে শিক্ষকদের মাঝে। শিক্ষক নেতাদের অভিযোগ, শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে কার্যকর কোনরকম আলোচনা ছাড়াই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যাকে তারা আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মারপ্যাঁচে বলেও দাবি করছেন। পাশাপাশি সুবিধাভোগী ও তথাকথিত শিক্ষক সংগঠনের কোন কোন নেতাদের প্ররোচনায় বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তন করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় পৃথক দুটি গেজেট প্রকাশ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষক নেতারা। একাধিক শিক্ষক নেতারা জানিয়েছেন, নতুন করে জোরপূর্বক বাড়তি এ অর্থ কাটার সিদ্ধান্ত বাতিল না করলে তারা বৃহত্তর আন্দোলনে যাবেন। পাশাপাশি আইনী লড়াইয়ে নামতে বাধ্য হবেন। আমলাতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে শুধু শিক্ষকদের নয়, সরকারেরও ব্যাপক ক্ষতি করা হয়েছে বলেও শিক্ষক নেতারা মনে করেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার বেসরকারী শিক্ষকদের প্রতি সবসময় আন্তরিক। অবসর ও কল্যাণ খাতে চাঁদা হিসেবে শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রতি তিন মাসে যে অর্থ পাওয়া যায়, তা দিয়ে অবসরপ্রাপ্তদের দাবি মেটাতে এক মাসেই খরচ হয়ে যায়। সেই হিসাবে ১২ মাসের চাঁদার অর্থ ৪ মাসে ব্যয় হয়। ফলে বাকি ৮ মাস শিক্ষকদের অবসর কল্যাণ সুবিধার আবেদন নিষ্পত্তি করা কঠিন হয়ে পড়ছে। এ বিষয়টি মাথায় নিয়েই আলোচনা করে চাঁদা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শিক্ষকরা বাড়তি যে অর্থ দেবেন, তা তাদের পেছনেই ব্যয় হবে। এদিকে সরকার সমর্থক সর্ববৃহৎ শিক্ষক কর্মচারী ফোরাম জাতীয় শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্টের পক্ষ থেকে আগামী শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনের নামার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
×