ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কুমিল্লার আমলী আদালতে রিজভীর জামিন ॥ সম্পূরক চার্জশীট দাখিলের নির্দেশ

পেট্রোলবোমায় ৮ যাত্রী হত্যা মামলা, আদালতে চার্জশীট গৃহীত হয়নি

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ১০ জুলাই ২০১৭

পেট্রোলবোমায় ৮ যাত্রী হত্যা মামলা, আদালতে চার্জশীট গৃহীত হয়নি

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা, ৯ জুলাই ॥ চৌদ্দগ্রামে যাত্রীবাহী নৈশকোচে পেট্রোলবোমা হামলায় ঘুমন্ত ৮ যাত্রী হত্যা মামলার চার্জশীট গ্রহণ করেনি আদালত। ওই মামলার চার্জশীটে নিহতদের নাম-ঠিকানা উল্লেখ না থাকায় তা গ্রহণ না করে সম্পূরক চার্জশীট দাখিলের জন্য চৌদ্দগ্রাম থানার ওসিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রবিবার ওই চাঞ্চল্যকর মামলার চার্জশীট গ্রহণসংক্রান্ত শুনানির দিন ধার্য ছিল। কিন্তু আদালতে দাখিলকৃত ওই চার্জশীটে অসঙ্গতি থাকায় কুমিল্লার ৫নং আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সাইফুল ইসলাম চার্জশীট গ্রহণ না করে এ আদেশ দেন। তবে ওই মামলায় একই আদালত থেকে রবিবার জামিন পেয়েছেন বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এবং দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরী। জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াতসহ ২০-দলীয় জোটের ডাকা হরতাল-অবরোধ চলাকালে ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ভোর রাতে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আইকন পরিবহনের একটি নৈশকোচ চৌদ্দগ্রামের জগমোহনপুর নামকস্থানে পৌঁছলে দুর্বৃত্তরা বাসটি লক্ষ্য করে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে। এতে আগুনে পুড়ে ঘটনাস্থলে ৭ জন ও হাসপাতালে নেয়ার পর ১ জনসহ মোট ৮ ঘুমন্ত যাত্রী মারা যায়। নিহতরা হচ্ছেনÑ যশোর জেলা সদরের নুরুজ্জামান পপলু, তার একমাত্র মেয়ে ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী মাইশা নাঈমা তাসনিন, কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার আবু তাহের ও আবু ইউসুফ, নরসিংদীর পলাশ উপজেলার আসমা আক্তার ও তার ছেলে শান্ত, শরীয়তপুর জেলার ঘোষের হাটের দক্ষিণ গজারিয়া গ্রামের ওয়াসিম ও কক্সবাজারের রাশেদুল ইসলাম। ওই হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই নূরুজ্জামান হাওলাদার বাদী হয়ে পরদিন ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক ২টি মামলা দায়ের করেন। এ ২টি মামলার পৃথক এজাহারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা ও চৌদ্দগ্রামের সাবেক এমপি ডাঃ সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরকে প্রধান আসামি, স্থানীয় বিএনপি নেতা কামরুল হুদা, জামায়াত নেতা শাহাব উদ্দিন, শাহ মিজানুর রহমান, এ্যাড. শাহ জাহান, জামাল ও মনিরসহ বিএনপি-জামায়াতের ৫৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এছাড়া ওই ২টি মামলায় অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়। এ দুটি মামলায় ২ বছর ১ মাস তদন্ত ও পুলিশসহ ৬২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই মোঃ ইব্রাহিম গত ৬ মার্চ আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। মামলার প্রতিটিতে ৭৮ জনকে চার্জশীটভুক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে উভয় মামলার চার্জশীটে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী ও সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিঞা, যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ, দফতর সম্পাদক এ্যাড. রুহুল কবির রিজভীকে হুকুমের আসামি করা হয়। চাঞ্চল্যকর ওই মামলার চার্জশীটে নিহত ৮ যাত্রীর নাম-ঠিকানা না থাকায় রবিবার আদালত ওই চার্জশীট গ্রহণ না করে সম্পূরক চার্জশীট দাখিলের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন। একই মামলায় আদালত বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কবির রিজভী ও সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরীকে জামিন প্রদান করেন। মামলার আসামি পক্ষের আইনজীবী এ্যাডভোকেট কাজী নাজমুস সাদাত জানান, ‘তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলার চার্জশীটে নিহত ৮ জনের নাম-ঠিকানা উল্লেখ করেননি। এমন অসঙ্গতির জন্য আদালত চার্জশীট গ্রহণ না সম্পূরক চার্জশীটের জন্য সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। তাই এ মামলার সম্পূরক চার্জশীট আদালতে দাখিল ও গ্রহণ না হওয়া পর্যন্ত আসামিদের জামিন বহাল থাকবে।’ তবে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ ইব্রাহিম জানান, চার্জশীটে নিহত ৮ জনের নাম-ঠিকানা উল্লেখ না থাকলেও মামলার কেস ডায়েরি (সিডি), ময়নাতদন্ত রিপোর্টসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাগজপত্রে নিহতদের নাম-ঠিকানাসহ যাবতীয় তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
×