ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গত সপ্তাহে নৌকা উল্টে ৪৯ জনের মৃত্যু

ইউরোপ যেতে ঝুঁকিপূর্ণ রুট বেছে নিচ্ছেন অভিবাসীরা

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ১০ জুলাই ২০১৭

ইউরোপ যেতে ঝুঁকিপূর্ণ রুট বেছে নিচ্ছেন অভিবাসীরা

ইউরোপের অন্যতম প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত স্পেনে গত বছরের তুলনায় এবার অভিবাসন প্রত্যাশীদের স্রোত দ্বিগুণ হয়েছে। বিপুলসংখ্যক শরণার্থী প্রতিদিন দেশটির দক্ষিণ উপকূলে এসে পৌঁছাচ্ছে। আগে এই শরণার্থীরা লিবিয়া হয়ে ইউরোপ পাড়ি জমাত। কিন্তু এখন লিবিয়ার যুদ্ধ, সংঘাত ও সহিংসতার হাত থেকে রক্ষা পেতে এই সব শরণার্থী স্পেন হয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যেতে চাইছে। খবর এএফপির। আলবোরান সমুদ্রে বুধবার থেকে এখন পর্যন্ত আটটি নৌকার আরোহী ৩৮০ শরণার্থীকে উদ্ধার করা হয়েছে। এই সমুদ্রটি মরক্কোর উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে স্পেনের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলকে সংযুক্ত করেছে। মানবাধিকার সংগঠন এসওএস র‌্যাসিসমের স্প্যানিশ শাখার মুখপাত্র মিকেল আরাগুয়াস বলেন, ‘আমরা শঙ্কিত। কারণ কয়েক বছরের মধ্যে চলতি বছরেই সবচেয়ে বেশি শরণার্থী প্রবেশ করেছে এবং এলাকাটি অত্যন্ত বিপদসংকুল। এখানকার স্রোত অত্যন্ত শক্তিশালী।’ গত সপ্তাহে শক্তিশালী ঢেউয়ের আঘাতে সাগরে একটি নৌকা উল্টে যায়। ৫২ আরোহীসহ নৌকাটি সম্ভবত মরক্কো থেকে আসে। কোস্টগার্ডের সদস্যরা নৌকাটির মাত্র তিনজনকে জীবিত উদ্ধার করেছে। বিপদসংকুল পথ পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পৌঁছানো শরণার্থীদের অধিকাংশই সাব সাহারা আফ্রিকান দেশের বাসিন্দা। নিজ দেশে চরম দারিদ্র্য অথবা সংঘাত-সহিংসতা থেকে রক্ষা পেতে তারা এই পথ বেছে নিয়েছে। নৌকাটি দৃশ্যত মরক্কো থেকে যাত্রা করেছিল। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) স্পেনীয় ভূমধ্যসাগরে অভিবাসী সংক্রান্ত এ দুর্ঘটনাকে সবচেয়ে মারাত্মক বলে উল্লেখ করেছে। অভিবাসীদের জন্য ইতালীয় রুটটি সবচেয়ে জনপ্রিয়। ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) বলেছে, এ বছর সমুদ্র পথে যে ১ লাখ লোক ইউরোপে পৌঁছেছে তাদের মধ্যে প্রায় ৮৫ হাজার অভিবাসী ইতালি হয়ে বিভিন্ন দেশে প্রবেশ করেছে। কিন্তু প্রত্যন্ত পশ্চিমাঞ্চলীয় স্পেনীয় রুটটিতে ভিড় বেড়ে গেছে। জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে মরক্কো, আলজিরিয়া ও স্পেনের মধ্যে সমুদ্র এলাকা থেকে ৬ হাজার ৪শ’র বেশি লোক উদ্ধার করা হয়েছে। অথচ ২০১৬ যে এখানে উদ্ধার করা হয়েছে ৮ হাজার ১৬ জনকে। ইউরোপে যে অভিবাসীরা আসছে তাদের এক বিশাল অংশ সাব-সাহারান আফ্রিকান। তারা দরিদ্র বা সংঘাতের কারণে তাদের দেশ ত্যাগ করে। এদের বেশির ভাগ লোকের বাস গিনি, গাম্বিয়া বা আইভরিকোস্টে। তারা লিবিয়া হয়ে ইতালিতে পৌঁছাবার জন্য ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়ার আশা করে। কিন্তু এ পথ আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠছে। দেশটিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নাটুকে ঘটনার রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে। অভিবাসীরা বলেছে, তাদের দাস বাজারে বিক্রি করে দেয়া হয়। এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অভিযোগ তুলেছে। অভিবাসীদের নির্যাতন করা হয় এবং কারাগারে পাঠানো হয়। ইউএনএইচসি আর প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয় লিবিয়ার অভিবাসী আটক কেন্দ্রগুলোতে তাদের আশঙ্কাজনক পরিস্থিতিতে রাখা হয়। পরিনামে, তারা মরক্কো বা আলজিরিয়া যাওয়ার পথ ধরে এবং স্পেনে যাওয়ার জন্য ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়। আসলে এখানটায় সমুদ্রপথ কিছুটা কম এবং খরচও পড়ে কম। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সীমান্ত সংস্থা ফ্রনটেক্স বলেছে, মরস্কোও এর সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ বেশ কমিয়ে এনেছে বলে মনে হচ্ছে। স্পেনে ইউএনএইচসিআরয়ের মুখপাত্র জেসাস ভেগা বলেন, ইউরোপ অভিবাসীদের কোন সমাধান না দিলে, তাদের সমাধান দেবে মাফিয়া নেটওয়ার্কস। তারা তখন তাদের বেপরোয়া হয়ে ওঠার সুযোগ নেবে। এ বিষয়ে মন্তব্য করার অনুরোধ জানালে স্পেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোন সাড়া দেয়নি।
×