ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্পকে বাদ দিয়েই মতৈক্য

প্রকাশিত: ০৩:৩৮, ১০ জুলাই ২০১৭

ট্রাম্পকে বাদ দিয়েই মতৈক্য

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বিশ্বনেতারা শনিবার জার্মানির হামবুর্গে জি-২০ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে নিজেদের মধ্যকার মতপার্থক্য নিরসন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। জলবায়ু চুক্তি এবং বিশ্বায়নের মতো ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অন্য দেশগুলোর মতপার্থক্য থেকেই গেছে। এএফপি ও ওয়াশিংটন পোস্ট। প্যারিস জলবায়ু চুক্তির বিষয়ে ট্রাম্পকে সিদ্ধান্ত বদলাতে ব্যর্থ হয়েছেন বিশ্বনেতারা। এ চুক্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকার বিষয়ে ১৯ জন সরকার প্রধান একমত হলেও ট্রাম্প নিজের ভিন্ন অবস্থান বজায় রেখেই জার্মানিতে থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ভিন্ন অবস্থান সম্মেলনের প্রথম দিকে কিছুটা অচলাবস্থা তৈরি করলেও, শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিয়েই বিশ্বনেতারা ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত নেন। তুরস্ক বলেছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোকে যে ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা বলা হয়েছে সেটি বাস্তবে কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় আছে। ট্রাম্প অনেকটা তড়িঘড়ি সম্মেলনস্থল ত্যাগ করেছেন। প্রথা অনুযায়ী শেষদিনের সংবাদ সম্মেলনে তিনি অংশ অংশ নেননি। ট্রাম্পের এ আচরণের জন্য ফলে অনেকে এবারের সম্মেলনকে জি-নাইনটিন প্লাস ওয়ান হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কোন কোন বিশ্ব নেতার মতে ট্রাম্প যে কোন সময়ই নিজের অবস্থান পাল্টাতে পারেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রচারাভিযানের সময় থেকেই প্যারিস জলবায়ু চুক্তির বিপক্ষে নিজের অবস্থান তুলে ধরছিলেন ট্রাম্প। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিকে তিনি ‘ধাপ্পাবাজি’ বলেও আখ্যা দেন। শেষ পর্যন্ত জুনে এ চুক্তি থেকে তিনি তার দেশকে প্রত্যাহার করে নেন। প্যারিসে ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সম্মেলনে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার কমিয়ে আনতে প্রায় ২০০টি দেশ একমত হয়েছিল। ট্রাম্পের এ অবস্থান তার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বৈশ্বিক জোট গঠনের ভবিষ্যত শঙ্কায় ফেলতে পারবে। সম্মেলনের যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, ‘প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমরা আমলে নিয়েছি। তারপরও নেতারা এ বিষয়ে একমত হয়েছেন যে প্যারিস চুক্তি অপরিবর্তনীয়।’ অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসর ২০টি দেশের জোট জি-২০ এর এবারের সম্মেলনে যে মাত্রায় অনৈক্য ও মতভেদ দেখা গেছে সেটি আগে কখনও দেখা যায়নি। এমন একটি বিষয়ে মতপার্থক্য ঘটেছে যেখানে সহজেই তারা মতৈক্যে পৌঁছাতে পারতেন। ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো কিছুটা হতাশার সঙ্গে বলেছেন, বিশ্ব আগে কখনও এখনকার মতো দ্বিধা বিভক্ত ছিল না। কেন্দ্রবিমুখী শক্তিও আগে কখনও এতটা জোরাল ছিল না। আমাদের অভিন্ন স্বার্থগুলোও আগে কখনও এতটা হুমকির মুখে পড়েনি। জলবায় চুক্তি নিয়ে সবচেয়ে বেশি তীব্রতর মতভেদ হয়। এই ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও বাকি বিশ্ব দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। এবারের সম্মেলন নিয়ে যে মতপার্থক্য হতে পারে সে বিষয়ে আগেই অনুমান করে গিয়েছিল। ম্যাক্রোঁ বলছেন, বিশ্ব নেতৃবৃন্দ কেবলমাত্র সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। জি-২০ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন শনিবার একটি বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন ট্রাম্প। সেসময় ট্রাম্প ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করতে গেলে আর মেয়ে ইভাঙ্কা সম্মেলনস্থলে ট্রাম্পের জন্য রাখা নির্ধারিত আসনে বসেন। সংবাদদাতারা বলছেন, এ ধরনের ঘটনা আগে কখনও ঘটেছে বলে মনে হয় না। যদিও ইভাঙ্কা তার পিতার উপদেষ্টা পদে আছেন কিন্তু সাধারণত প্রেসিডেন্টের অনুপস্থিতিকে তার আসনে কেবল পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা কোন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা বসতে পারেন। এ ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমগুলোতে সমালোচনার ঝড় ওঠে। তবে তা খুব বেশি সময়ের জন্য হয়নি। বৈঠক শুরুর কিছু সময় পর ট্রাম্প ফিরে এসে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যবর্তী নিজের আসনটি গ্রহণ করেন। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে শনিবার বৈঠক করেন ট্রাম্প। দুই নেতা এ সময় উত্তর কোরিয়াকে নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা আলোচনার ভিত্তিতে সমাধানের ওপর জোর দেন।
×