ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাজ্জাদ কাদির

তিনটি বিষয় ॥ একটি পর্যালোচনা

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ১০ জুলাই ২০১৭

তিনটি বিষয় ॥ একটি পর্যালোচনা

গত মাসের মধ্যভাগে ভয়াবহ পাহাড় ধসের ৬ দিন পর ১৮ জুন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু“মাহমুদ চৌধুরীসহ দলের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ বিএনপি নেতার একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল পাহাড়ধসে দুর্গত পার্বত্যাঞ্চল পরিদর্শনে পার্বত্য চট্টগ্রাম যান। এর আগে ঢাকায় বসেই তাঁরা নানা বক্তৃতা, বিবৃতিতে ব্যস্ত ছিলেন। এমনকি নানা দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ একই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর ৩ দিনের সুইডেন সফরকে নিয়ে কথা বলতেও ছাড়েননি। পার্বত্য জেলায় পাহাড়ধসে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুইডেন সফরকে ‘আনন্দ ভ্রমণ’ বলে সমালোচনা করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরটি ছিল সুইডেনে বাংলাদেশের কোন সরকারপ্রধানের প্রথমবারের মতো দ্বিপাক্ষিক সরকারী সফর। সুইডেন বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। উন্নয়ন সহযোগী একটি দেশও। স্বাধীনতার পর প্রথম দিকে মাত্র দুই মাসের মধ্যে এবং ইউরোপিয়ান দেশগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল ইউরোপের অন্যতম সমৃদ্ধ এই দেশটি। সুইডেনের সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে বিশাল বাণিজ্যিক সম্পর্ক। বাংলাদেশি সব পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার রয়েছে সুইডেনের বাজারে। সুইডেনের একটি কোম্পানিই বাংলাদেশ থেকে বছরে ৫০০ কোটি ডলারের বেশি তৈরি পোশাক কেনে, যা আমাদের রফতানি আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এই সফর দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক নতুন দুয়ার উন্মোচন করতে যাচ্ছে- এমনটি বলেছেন সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী স্তেফান লোফভেন নিজেই। সুইডেন অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগতভাবে অগ্রসর। দেশটি বাংলাদেশকে নানাভাবে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। দুই প্রধানমন্ত্রীর বর্তমান আলোচনায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে জ্বালানি নিরাপত্তা সৃষ্টি, প্রযুক্তি খাতে সহায়তা, বিনিয়োগ ও সন্ত্রাস দমন ইত্যাদি। বাংলাদেশ নানা ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও এগিয়ে নেয়া জরুরী। সুইডেন বাংলাদেশের এক পরীক্ষিত বন্ধু রাষ্ট্র। প্রধানমন্ত্রীর সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার ও সহযোগিতার নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হোক আমরা সাধারণ মানুষ এটিই প্রত্যাশা করব। যতই বিপরীত হন না কেন প্রধানমন্ত্রীর এ রকম একটি আশা জাগানিয়া সফরকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করা কতটা যুক্তিযুক্ত, বিএনপি নেতৃত্বই ভাল বলতে পারবেন। এবার আসি বিএনপি প্রতিনিধিদলের পার্বত্যাঞ্চল পরিদর্শনে চট্টগ্রাম যাওয়া প্রসঙ্গে। ওই সময়ের পত্রপত্রিকার খবরে প্রকাশ, ‘১৮ জুন রোববার সকালে দলটি চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে নৌপথে রাঙামাটির উদ্দেশে রওনা হয়। সেখানে দুর্গত মানুষের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি ত্রাণবিতরণ ও কয়েকটি পথসভা করার কথা ছিল। কাপ্তাই যাওয়ার পথে ইছাখালি পার হয়ে কাপ্তাই বাজার যাওয়ার মুখেই ৩০-৩৫ সশস্ত্র যুবক অতর্কিত বিএনপির ত্রাণবহরে হামলা চালায়। এ সময় তারা রড, হকিস্টিকসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মির্জা ফখরুলের বহনকারী গাড়িতে ভাংচুর চালায়। এতে গাড়িতে থাকা মহাসচিব মির্জা ফখরুল, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু“মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আমিন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবে রহমান শামীম সামান্য আহত হন। এরপর দুর্বৃত্তরা সাংবাদিকসহ আরও তিনটি গাড়িতে হামলা চালায়। এতে আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। পরে চালকরা দ্রুত গাড়ি চালিয়ে নিরাপদে চলে যায়। একপর্যায়ে আতঙ্কিত নেতারা স্থানীয় একটি মসজিদ ও মাদ্রাসায় আশ্রয় নেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।’ ঘটনাটি যেই ঘটাক এটি একটি চরম নিন্দনীয় কাজ, তা যে কোন বিবেকবান মানুষ মাত্রই উপলব্ধি করবেন। ঘটনার পরে বিএনপি নেতা আমীর খসরু“মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘হামলার সময় দুর্বৃত্তরা জয় বাংলা সেøাগান দেয়।’ এ ছাড়া ঘটনার পরে বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী হামলার জন্য ড. হাছান মাহমুদের সমর্থকদের দায়ী করেন। উল্লেখ্য, যেখানে হামলার ঘটনাটি ঘটেছে সেটি আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদের নির্বাচনী এলাকা। এটিও কেমন রাজনৈতিক শিষ্টাচার যে যেখানেই অঘটন ঘটবে সেটি যদি তাদের মতো- পথের নেতার বা সাংসদের এলাকা না হয় তাহলে ঘটনার জন্য ঢালাওভাবে ওই নেতা বা সাংসদকে দোষী সাব্যস্ত করতে হবে? ঘটনা যেই ঘটাক হামলা ভাংচুর একটি গুরুতর অপরাধ, এটিই বিবেচ্য বিষয়। হামলায় অংশগ্রহণকারীরা হামলার সময় ‘জয় বাংলা’ সেøাগান দিয়েছে বলে জানা যায়। হ্যাঁ, এখন বাংলাদেশে যত অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে সব জায়গায় ‘জয় বাংলা’ সেøাগান দিয়েই অপরাধ কর্মগুলো করা হচ্ছে। এমনকি ‘জয় বাংলা’ সেøাগান দিয়ে ভোটের বাক্সও ভরা হচ্ছে, সেটিও দেখা গেছে কিছুদিন আগে হয়ে যওয়া কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে।বিএনপির মেয়র প্রার্থীর ভোটের বাক্স এই ‘জয় বাংলা’ সেøাগানেই ভরে উঠেছিল। অথচ ‘জয় বাংলা’ এদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সেøাগান, স্বাধীনতার সেøাগান। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বজ্রকণ্ঠে বার বার উচ্চারিত সেøাগান। ৭১-এ এই সেøাগান দল মত নির্বিশেষে এদেশের লাখো কোটি মুক্তিপাগল মানুষকে উজ্জীবিত করেছে, মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়েছে। মুক্তির এই মহান সেøাগানটিই ব্যবহার করে থাকে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। কিন্তু এখন এই সেøাগানটি আমরা কাদের কণ্ঠে তুলে দিয়েছি? দুর্বৃত্ত আর গু-াপা-ার হাতে কী আমরা তুলে দেইনি স্মরণকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই সেøাগানটি? পাহাড়ে যাবার পথে বিএনপি মহাসচিবের গাড়িবহরে ‘জয় বাংলা’ সেøাগান দিয়ে কারা হামলা চলালো এটি খুঁজে বের করতে হবে। শুধু তাই নয়, অতীতেও ‘জয় বাংলা’ সেøাগান দিয়ে কারা কোথায় কোথায় কোন অপরাধ সংগঠিত করেছে, সেটিও খুঁজে বের করতে হবে। কারণ ‘জয় বাংলা’ সেøাগান দিয়ে সমানে অপরাধ করা হচ্ছে আর আওয়ামী লীগের ঘাড়ে এর দায় চাপানো হচ্ছে। এই ঘটনাটি কে বা কারা ঘটিয়েছে সেটি তদন্ত সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সত্যিকার অর্থে যে দলটি মুক্তিযুদ্ধে ‘জয় বাংলা’ কালজয়ী সেøাগানটি ব্যবহার করেছে এবং বর্তমানে দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির প্রতীক হিসেবে সার্বক্ষণিক ‘জয় বাংলা’ সেøাগানটি ব্যবহার করে থাকে, তাদের পক্ষে এটি কোন অপরাধ কর্ম ঘটানোর সময় ব্যবহার করা সম্ভব নয় কখনই। কারণ সত্যিকারের আওয়ামী লীগের কোন বিবেকবান নেতা, কর্মী, সমর্থক সামনে নির্বাচন আসন্ন এ রকম একটি সময়ে দলের জন্য আত্মঘাতী এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটাতে পারে না। কারণ দলের স্বল্প শিক্ষিত কর্মীটিও বোঝার কথা যে এই ধরনের ঘটনাগুলো ভোটের রাজনীতিতে সাধারণ মানুষের মনে দারুণ বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। তবে দীর্ঘদিন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকলে ক্ষমতার মধু খেতে একটি রাজনৈতিক রং সাইডার বা রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত শ্রেণীর জন্ম হয়। তেমনি বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেও প্রচুর রাজনৈতিক রং সাইডার বা রাজনৈতিক দুর্বৃত্তের জন্ম হয়েছে। যারা সমানে ক্ষমতার মধু খেয়ে যাচ্ছে এবং শাসক দলের ভাবমূর্তির বারোটা বাজাচ্ছে। এই রাজনৈতিক রং সাইডাররা হামলার ঘটনা ঘটাল কিনা, সেটিও খতিয়ে দেখতে হবে। যদি সত্যিই এই শ্রেণীটি ঘটিয়ে থাকে তাহলে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। নইলে প্রতিনিয়ত এরা এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে যাবে। আর দল এবং সরকারের ভাবমূর্তির ক্ষতি হবে। অন্যদিকে আরেকটি শঙ্কাও আমাদের পিছু ছাড়ে না। সেটি হচ্ছে বিএনপি শিবিরে কথায় কথায় বলা হয়ে থাকে আওয়ামী লীগ সরকার তাদের নির্বিঘেœ চলাচল করতে দেয় না, কোন কর্মসূচী পালন করতে দেয় না। এটি যে অসার এবং অসত্য বক্তব্য নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক মহল সেটি দেখতে পান। যদি তাই হতো তাহলে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া সদ্য শেষ হওয়া রমজান মাসে প্রতিদিন ইফতার পার্টিতে গিয়ে এত সুন্দর সুন্দর বক্তব্য দিতে পারেতেন না।পাহাড় প্রসঙ্গেই যদি আসি তাহলে দেশের মানুষ দেখতে পায় যে, পাহাড় ধসের প্রায় এক সপ্তাহ পর তারা তাদের কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে পাহাড়ে গেছে। এই এক সপ্তাহ ঘরে বসে কথামালার মধ্যেই কেন তারা সীমাবদ্ধ ছিল? দেশের একটি অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল যারা দীর্ঘ সময় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল, তাদের পাহাড়ের দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে এক বিরাট অবদান রাখার সুযোগ ছিল; অনেক বড় দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার সুযোগ ছিল। এতে করে পাহড়ের মানুষগুলোই শুধু নয়, সারা দেশের মানুষ তাদের দায়িত্বশীল ভূমিকায় খুশি হতে পারত। ভোটের রাজনীতিতে তারা মনে হয় খানিকটা এগিয়েও যেতে পারত। এক সপ্তাহ সময় নেয়া হয়েছিল কি পাহাড় নিয়ে সুপরিকল্পিত বিশেষ কোন রাজনৈতিক কূটকৌশল বাস্তবায়নের জন্য? পাহাড় নিয়ে রাজনীতির পানি ঘোলা করার কি কোন দুরভিসন্ধি ছিল বিএনপি শিবিরে? নির্বিঘেœ চলাচল করতে দেয় না, কোন কর্মসূচী পালন করতে দেয় নাÑ বিএনপি নেতৃত্বের মুখের এই কথাগুলো সত্যে পরিণত করতেই কি বিএনপি নিজেরাই সুপরিকল্পিত এই হামলার নাটক রচনা করেছিল? যাতে জনগণের কাছে না গিয়ে ঘরে বসেই বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে রাজনীতি করা যায়, সেই জন্যই কি এই নাটক? হামলার পর বিএনপি নেতাদের পুলিশ সহায়তা দিয়ে রাঙামাটি পৌঁছে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু যত বাধাই আসুক বিএনপি নেতৃবৃন্দ পাহাড়ের দিকে না গিয়ে ওইদিন বেলা পৌনে একটায় চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে? আবার দলের সিনিয়র যগ্ম-মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী একই সময়ে কুমিল্লা থেকে পরেরদিন সোমবার সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচীও ঘোষণা করে? এগুলো কী হঠাৎ করেই ঘটে গিয়েছিল, নাকি পূর্বপরিকল্পিত? এ রকম নানা প্রশ্ন ভিড় করে পর্যবেক্ষক মহলে। আওয়ামী লীগের বিবেকবান নেতা, কর্মী, সমর্থকের কথা বলছিলাম। বিএনপির ক্ষেত্রে বিবেকবান নেতা, কর্মী, সমর্থকের কথা বলতে পারছি না এজন্য, আজ প্রায় দশ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি যে বিবেক বিসর্জন দিয়েছে অতীতে কয়েকটি মিথ্যাচার তারই প্রমাণ দেয়। স্বাক্ষর জাল করে ছয় মার্কিন কংগ্রেসম্যানের নামে ভুয়া বিবৃতি কিংবা ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপির প্রেসিডেন্ট অমিত শাহ টেলিফোনে বিএনপি চেয়ারপার্সনের খোঁজ নেয়ার মতো মিথ্যা নাটকের কাহিনী দেশবাসী ভোলেনি। আমরা দেশের সাধারণ মানুষ আর বিশ্বাস করতে পারি না দলটিকে। আজকে বিএনপি-শিবিরের অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, যে কোন কিছুর বিনিময়ে তারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে মরিয়া। এজন্য দেশের মানুষকে আন্দোলনের নামে অতীতে সীমাহীন কষ্ট দিয়েছে তারা। দেশের জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের সেই আন্দোলনের নামে হরতাল, অবরোধকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের অন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা নেই বলেই তারা এই মুহূর্তে কোন কঠোর কর্মসূচি দিতেও ভীত। কারণ জনগণ তাদের কর্মসূচীকে প্রত্যাখ্যান করবে। নইলে হামলার পরেরদিন নিশ্চিতভাবে হরতালের মতো একটি সহিংস কর্মসূচী ঘোষণা করে বসে থাকত তারা। যাক, দেশের মানুষ অন্তত একটি সহিংস হরতালের কবল থেকে বেঁচেছে। সত্যিকার অর্থে বিএনপি প্রতিনিয়ত ভুলের রাজনীতিতে বসবাস করছে এবং ভুল করে যাচ্ছে। প্রকৃত গণমানুষের রাজনীতি না করলে রাজনীতি নিজেই ক্ষমা করবে না দলটিকে। কাজেই এখনও সময় আছে জনগণের কষ্ট হয় এমন কোন কূটকৌশলের রাজনীতি না করে জনগণের কাছে গিয়ে গণমুখী গণমানুষের রাজনীতি করার। এই গণমানুষের রাজনীতি করলেই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আপনাআপনিই দরজায় এসে কড়া নাড়বে। অতীতে যেসব মিথ্যাচার করা হয়েছে, তার জন্য জনগণের নিকট ক্ষমা চাইতে হবে। জনগণের আস্থা এবং বিশ্বাসের জায়গাটি মজবুত করতে হবে। নইলে দল হিসেবে ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যেতে হবে। আর বিএনপির এই বিলীন হয়ে যাওয়া দেশের জন্যও অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিএনপি আজ মাঠে নেই বলেই সারাদেশে শাসক দল আওয়ামী লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে খাওয়া একটি রাজনৈতিক রং সাইডার শ্রেণীর জন্ম হয়েছে। মাঠে থাকলে এই সুবিধাবাদী শ্রেণীটি হালে পানি পেত না। সারাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশটি সুস্থ থাকত। কারণ গণতন্ত্র কোন প্রকার সমালোচনা এবং নির্বাচনে হেরে যাওয়ার ভয় ছাড়া মোটেই ভাল চলতে পারে না। কাজেই দেশের স্বার্থে বিএনপি গঠনমূলক রাজনীতি করে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াক, সেটিই প্রত্যাশা। পাশের দেশ ভারতে বিজেপির মতো একটি সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল কীভাবে গণমুখী রাজনীতি করে বিপুল জনপ্রিয়তায় রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়া যায়, বিএনপি সেখান থেকেও শিক্ষা নিতে পারে। প্রকৃত সত্য প্রতিষ্ঠা করতে হলে দল হিসেবে আওয়ামী লীগেরই এই হামলার ঘটনার তদন্ত করতে হবে। কারণ ঢালাওভাবে এর দায় চাপানো হচ্ছে আওয়ামী লীগের ওপর। সেই সঙ্গে সরকার পরিচালনায়ও যেহেতু রয়েছে আওয়ামী লীগ, কাজেই সরকারের পক্ষ থেকে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করা হোক। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কঠোর হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও ঘটনার পনেরো দিন পেরিয়ে গেলেও এই হামলায় কারা জড়িত, সে বিষয়ে কিছুই জানা যায়নি। দেশের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব সরকারের। সেখানে একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের মহাসচিবের গাড়িবহরে হামলার দায় সরকার কোনভাবেই এড়িয়ে যেতে পারে না। নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দল হিসেবে এবং সরকারে থাকা আওয়ামী লীগের জন্য এ রকম ন্যক্কারজনক ঘটনা নিঃসন্দেহে বিব্রতকর। নির্বাচনের আগে পাহাড়কে নিয়ে বিএনপি একটি নাটক মঞ্চায়ন করল কিনা সেই হিসাব বোঝে না সাধারণ ভোটাররা। হামলা হয়েছে এটিই তাদের নিকট নিন্দনীয় বিষয়। এই নিন্দা ভোটের রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। কাজেই আওয়ামী লীগের নিজের স্বার্থেই অতি দ্রুত প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করে হামলাকারীদের মুখোশ উন্মোচন করা হোক। ‘জয় বাংলা’ সেøাগান উচ্চারণকারী এই দুর্বৃত্তদের দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হোক। এই শাস্তিই যেন বলে দেয় যে, ভবিষ্যতে আর কোথাও ‘জয় বাংলা’ সেøাগান দিয়ে অপরাধ করা যাবে না। শুধু কথায় নয়; মুক্তির সেøাগান ‘জয় বাংলা’কে পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত করা হোক। সত্যিকার অর্থেই সত্য এবং ন্যায়ের পথে আওয়ামী লীগ আছে কিনা এটি প্রমাণের সুযোগ এসে দরজায় কড়া নাড়ছে আওয়ামী-শিবিরে। আওয়ামী লীগের এ সুযোগ হেলায় হারানো ঠিক হবে না। এই ঘটনাটি দিয়েই তা প্রমাণ করা যেতে পারে। সত্যের পথে থাকলে দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে। আর এই হামলার সঙ্গে আওয়ামী লীগ জড়িত নয়, এটি প্রমাণ করতে পারলে ভবিষ্যতেও আওয়ামী লীগের সঙ্গেই থাকবে। লেখক : সংস্কৃতিকর্মী
×