ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ড. এবিএম আব্দুল্লাহ, ;###;মোল্যা মোঃ মিজানুর রহমান, কৃষক;###;মোঃ বখতিয়ার রহমান

পাট থেকে পলিথিন

প্রকাশিত: ০৩:৩৬, ১০ জুলাই ২০১৭

পাট থেকে পলিথিন

রাতে, কলকাতার বন্ধু টেলিফোনে জিজ্ঞাসা করেন, তোমরা পাট থেকে কি প্রক্রিয়ায় পলিথিন উৎপাদন করলে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা জাতীয় পাট দিবসের প্রধান অতিথির বক্তব্যে এটি উল্লেখ করেছেন। পাট থেকে জামদানি শাড়ি তৈরির প্রক্রিয়াও প্রদর্শিত হয়। পাটের সুদিনের সুসংবাদ, মনে পড়ে বন্ধু জনাব মোনায়েম সরকারের মাধ্যমে ২০০৯ সালের এপ্রিল/মে মাসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী ও পাটমন্ত্রী মহোদয়কে পাটের জামদানি শাড়ি উপহার দেয়া হয়, তৈরি করেন প্রখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল। তবে পাটের বিশেষ ধরনের সুতা লেখক তাকে প্রদান করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপে ও পাট মন্ত্রণালয়ের তৎপরতায় জেডিপিসির (ঔউচঈ)-এর উদ্যোগে দ্রুত বাণিজ্যিকভাবে পাটের জামদানি উৎপাদন ও বিপণন করা সম্ভব হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের জুট সেক্টর রিস্ট্রাকচারিং প্রজেক্টের (ঔঁঃব ঝবপঃড়ৎ জবংঃৎঁপঃঁৎরহম চৎড়লবপঃ) আওতায় বাংলাদেশের ২৫ হাজার পাটের তাঁতশিল্প কমিয়ে ১৬ হাজার করা এবং পরবর্তীতে আদমজী বন্ধ করা ইত্যাদি পাট সেক্টরের দফারফা করে দেয়। তবে রিস্ট্রাকচারিং প্রজেক্টে কিন্তু পাটের বহুমুখী পণ্য উৎপাদনের ব্যবস্থা, বিপণন ও উৎপাদনশীলতা উন্নয়ন/ ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হয়নি। তবে এক দিকে গোল্ডেন হ্যান্ডসেক (অপর দিকে পুনর্নিয়োগের বাণিজ্য চলে। দুঃখ হলেও সত্য তখন আমাদের এড়ষফবহ ঐধহফংযধশব) বিজ্ঞ অর্থনীতিবিদ ‘পাটের মৃত্যু ঘণ্টা’ পাট শিল্প ‘সানসেটিং সেক্টর’ বলে জাতিকে প্রতারিত করেন। এমনকি আদমজী বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এ বিষয়ে একটি বিশ্লেষণ ধর্মী গবেষণা করার চিন্তা-ভাবনা করেনি। আইজেও/ আইজেএসজি (ওঔঙ/ওঔঝএ) বন্ধ হলেও এ বিষয়ে কোন প্রতিক্রিয়া নেই। ১৯৮৭-১৯৮৮ সালের বন্যার পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক্সপোর্ট স্ট্যাবিলাইজেশনের (ঊীঢ়ড়ৎঃ ঝঃধনরষরুধঃরড়হ) জন্য ১০ লাখ ডলার অনুদান প্রদান করেন। পাট থেকে পাল্প/পেপার, পাট বীজ, উন্নত মানের পাট উৎপাদন ইত্যাদি বিষয়ে নানা রকম উন্নয়নমূলক প্রকল্প গ্রহণ করে। শুধুমাত্র পাট, কাঁচা পাটগাছ, পাট কাটিং থেকে পাল্প/ পেপার উৎপাদনের উন্নয়নের বিষয়ে ৩০ কোটি টাকা ব্যয় করেও কোন গ্রহণযোগ্য ফলাফল আজ পর্যন্ত প্রকাশ পাইনি। এখানে উল্লেখযোগ্য যে উক্ত ফান্ডের অব্যবহৃত ব্যাংকে গচ্ছিত টাকার সুদ থেকে অর্থায়নের ব্যবস্থা করে ১৯৯৭-১৯৯৯ সালে জেডিপিসি স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করলেও আইজেও/ আইজেএসজি ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কতিপয় দেশী স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গ্রুপের বিবিধ কারণে ২০০২ সালে জেডিপিসির কার্যক্রম শুরু হয় অত্যন্ত সীমিত আকারে, এমনকি অফিস স্থাপনের কোন ব্যবস্থাও ছিল না। আইজেএসজি সেক্রেটারি জেনারেল ড. ম-ল ও পাট সচিব সারওয়ার কামালের সহযোগিতায় আইজেএসজি ভবনের তৃতলে মাত্র ছোট ছোট ২টা কক্ষ নিয়ে কাজ শুরু হয়। তবে ৫ বছরের প্রকল্প কর্মসূচী ছিল নির্দিষ্ট। সম্পূর্ণ নতুন উক্ত বিষয়ে অনভিজ্ঞ সীমিত অর্থে যাত্রা শুরু হয়েছিল। অতিদ্রুত নি¤েœর ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করা হয়। প্রযুক্তি নির্ধারণ করা (২৩২টি) উদ্যোক্তা সংগঠিত করা (প্রায় ২৫০০-৩০০০ জনকে তালিকাভুক্ত করা) পণ্যের বিভিন্ন রকম ডিজাইন নির্ধারণ (শপিংব্যাগ, হ্যান্ডব্যাগ, ভেনেটিব্যাগ, হেভার সেক ইত্যাদি) ট্রেনিং ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা প্রায় ২০০০ (উদ্যোক্তা) দেশের প্রতিটি বিভাগীয় ও বৃহত্তর জেলায় তিন দিনের বহুমুখী পাট পণ্যের মেলা সংগঠিত করা বড় বড় চেম্বার/এ্যাসোসিয়েশন (অংংড়পরধঃরড়হ) সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক সেমিনার করা যেমন: এফবিসিসিআই, ঢাকা চেম্বার, মেট্রোপলিটান চেম্বার, চট্টগ্রম চেম্বার, রাজশাহী চেম্বার, যশোর চেম্বার, সিলেট চেম্বার, ফরিদপুর চেম্বার, রংপুর চেম্বার, ময়মনসিংহ চেম্বার, লালমনিরহাট চেম্বার, আমেরিকান চেম্বার, ফ্রান্স চেম্বার, মালয়েশিয়া চেম্বার, ইতালীয় চেম্বার ইত্যাদি। বাংলাদেশের বিদেশে অবস্থিত ১২টি দূতাবাসে বহুমুখী পাট পণ্যের ডিসপ্লে সেন্টার স্থাপনের জন্য ৫০ লাখ টাকা মূল্যের বহুমুখী পাটপণ্য প্রেরণ করা (পণ্যের মূল অংশই বিভিন্ন উদ্যোক্তা প্রদান করেন) ঢাকা, নরসিংদী, রংপুর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও যশোরে জেডিপিসির অফিস স্থাপন, কাঁচামাল ব্যাংক স্থাপন করা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বহুমুখী পাটপণ্যের বৈশাখী ও ঈদমেলার সূচনা করা মূলত এসএমই সেক্টরকে উৎসাহিত করা। এ ছাড়া বিজেআরআই, বিসিক, বিজিএসসি, হ্যান্ডলুম বোর্ড, হ্যান্ডিক্যাট ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চারুকলা ইনস্টিটিউট, ইপিজেট, ব্রিটিশ কাউন্সিল, এফএও, এলিও ফ্রান্সি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান এ্যাম্বাসি, জিটিজেট, চীন এ্যাম্বাসি, জার্মান এ্যাম্বাসি, মালয়েশিয়ান এ্যাম্বাসি, বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ব্যুরো প্রভৃতি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ এবং এ্যাম্বাসি পর্যায় বহুমুখী পাটপণ্যের মেলা ও বিপণনের ব্যবস্থা করা। প্রতিবছর ঢাকায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক মেলায় জেডিপিসির ফ্রেভিলিয়ন স্থাপন এবং বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদনের উদ্যোক্তাদের নিজেদের পণ্য বিপণনের ব্যবস্থা করা। বাংলাদেশ ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, যুব উন্নয়ন ব্যাংক , সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর, জেনারেল ম্যনেজার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকতাদের বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদন, প্রযুক্তি, বিপণন ও ব্যাংকের ঋণ প্রদানের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা বৈঠক করেন যাতে উদ্যোক্তারা সহজে ঋণ পেতে পারে। এই সময় বিপুলসংখ্যক ছোট ছোট পাটপণ্য উৎপাদনকারী উদ্যোক্তা, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, বাবুরহাট, শাহজাদপুর, বেলকুচি, দাউদকান্দি, ভাগলপুর, কুমিল্লা অঞ্চলে পাটের সুতার সংযোগে প্রচেষ্টা গ্রহণ করে এবং বিপুলসংখ্যক তাঁতীকে পাটপণ্য উৎপাদনের জন্য সহযোগিতা করা হয়। তেমনিভাবে রংপুরের শতরঞ্জি, কুষ্টিয়ার কুমারখালী, ফরিদপুর প্রভৃতি স্থানে পাট মিশ্রিত কাপড় তৈরির জন্য কারিগরি সহয়তা প্রদান করে, এ বিষয়ে বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল ও জনাব চন্দ্র শেখর সাহা বিশেষভাবে সহয়তা করেন। তেমনিভাবে প্রচারের জন্য বিভিন্ন রকম ফ্লিম শো ও ডিজাইন তৈরিতে বিটিইবির অবসরপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ফারুক, বিসিকের প্রাক্তন পরিচালক মরহুম সামছুল হুদা, বিজিএমসির প্রাক্তন জেনারেল ম্যানেজার মরহুম ছাব্বির আহমেদ ও শিল্পী ইমদাদুল হক, ওয়ার্ল্ড ক্রাপ্ট কাউনসিলের রুবী গজনবি, প্রাক্তন সচিব মরহুম সিরাজুদ্দীন বিশেষভাবে সহয়তা করেন। ক্রমশ
×