বাংলাদেশের প্রথম ন্যানো স্যাটেলাইট ‘ব্র্যাক অন্বেষা’ গত শুক্রবার অপরাহ্ণে যাত্রা শুরু করেছে। কৃত্রিম এই উপগ্রহটির দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-উচ্চতায় মাত্র ১০ সেন্টিমিটার, ওজনে প্রায় ১ কেজি। এটি উৎক্ষেপণে সহায়তা করেছে জাপানের কিউশু ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (কিউটেক)। সংস্থাটির একটি প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ ছাড়াও একই সঙ্গে ঘানা, মঙ্গোলিয়া, নাইজিরিয়া ও স্বাগতিক দেশ জাপানের একটি করে ন্যানো স্যাটেলাইটও পৃথিবী প্রদক্ষিণ শুরু করেছে। আরও যা শ্লাঘার বিষয় তা হলো, ছোট এই কৃত্রিম উপগ্রহটির নক্সা তৈরি, উপকরণ সংগ্রহ ও নির্মাণের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশের তিন তরুণ। তারা সবাই ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিকস বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করে বর্তমানে জাপানের কিউটেকে স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত। তবে এই কৃতিত্বের অংশীদার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, জাপানের পাশাপাশি বাংলাদেশও। এখানে স্মর্তব্য যে, ইতোপূর্বে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষ থেকে সর্বপ্রথম যখন নভোচারী ইউরি গ্যাগারিন পৃথিবীর কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নীল আর্মস্ট্রং প্রথম চাঁদে পা রাখেন, তখন তারা স্ব স্ব দেশের প্রতিনিধিত্ব করলেও প্রকৃতপক্ষে তা ছিল মানবসমাজের পক্ষ থেকে সুবিশাল পদক্ষেপ। উল্লেখ্য, গত ৪ জুুন যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্পেস এক্স ফ্যালকন রকেটে চড়ে যাত্রা শুরু করে ব্র্যাক অন্বেষা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশে। অতঃপর সেখান থেকেই এটি উৎক্ষেপিত হয়। এমনিতেই মহাকাশ যাত্রা ও পৃথিবীর কক্ষপথ প্রদক্ষিণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল প্রকল্প ও পরিকল্পনা। ন্যানো টেকনোলজি ততোধিক সূক্ষ্ম ও ব্যয়সাপেক্ষ। ফলে স্বভাবতই জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া এর উৎক্ষেপণ আদৌ সহজসাধ্য ছিল না। তবে এমন দিন নিশ্চয়ই আসবে যেদিন বাংলাদেশও ধাবিত হবে মহাকাশের পথে। উৎক্ষেপণ করবে নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহ। চলতি বছর শেষ নাগাদ বাংলাদেশের কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপিত হবে বলে আশা করা যায়। এর মাধ্যমে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক বিপ্লব সাধিত হতে পারে।
কৌতূহলীদের মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক যে, কক্ষপথে ব্র্যাক অন্বেষা ঠিক কী করবে? এটি পৃথিবী থেকে ৪০০ কিলোমিটার ওপরে প্রতিদিন চার থেকে ছয়বার প্রদক্ষিণ করবে। ক্ষুদ্র এই স্যাটেলাইটটি বাংলাদেশের কৃষি, খরা, বন্যা, দুর্যোগ মোকাবেলাসহ মহাকাশ সংক্রান্ত নানাবিধ তথ্য-উপাত্ত ও উচ্চমানের ছবি প্রেরণ করবে। সময় সময় বাজাবে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত। এসব সংগ্রহের জন্য ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষও স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ মহাকাশ ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের (স্পারসো) পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থীরাও গবেষণার সুযোগ পাবে।
বিশ্বখ্যাত তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংসহ অনেকেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, আগামী কয়েক শ’ বছরের মধ্যে বর্তমান পৃথিবী মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। সে অবস্থায় বাধ্য হয়ে মানুষকে পাড়ি জমাতে হবে অন্য কোন গ্রহ কিংবা উপগ্রহে। পৃথিবীর কাছাকাছি চাঁদ এবং মঙ্গল আপাতত রয়েছে মহাকাশ বিজ্ঞানীদের পছন্দের তালিকায়। বিশ্ববাসী পরাশক্তিসমূহের কাছে মজুদ বিপুল পরিমাণের পারমাণবিক অস্ত্রশস্ত্রের পাশাপাশি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের সমূহ ঝুঁকির কারণে মানুষকে নিতান্ত বাধ্য হয়ে চলে যেতে হবে অন্যত্র, অন্য কোথাও। তবে এও সত্য যে, শেষ পর্যন্ত পৃথিবীর সব মানুষকে স্থানান্তর করা সম্ভব হবে না সঙ্গত কারণেই। তবে আশা করতে দোষ কি, সেখানেও নিশ্চিতই স্থান পাবে বাংলাদেশের ন্যানো স্যাটেলাইটসহ কয়েকজন তরুণ প্রতিনিধি।
শীর্ষ সংবাদ: