ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে ইভানের তথ্য

সেই তরুণী টেলিফোন পেয়ে রাত ১২টায় ছুটে যায় বনানীর ফ্ল্যাটে

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ৯ জুলাই ২০১৭

সেই তরুণী টেলিফোন পেয়ে রাত ১২টায় ছুটে যায় বনানীর ফ্ল্যাটে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বনানীর ন্যাম ফ্ল্যাটে তরুণী ধর্ষণ মামলার একমাত্র আসামি ইভানের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তার দেয়া তথ্যে- পুলিশ ওই তরুণীর তিনটে মোবাইল ফোনের কললিস্ট খতিয়ে দেখছে। সেই রাতে ইভান ছাড়া আর কে ওই তরুণীর মোবাইল ফোনে কথা বলেছিল সেটারও তালিকা পেয়েছে পুলিশ। চারদিনের রিমান্ডে থাকা ইভান জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানিয়েছে, টেলিফোন পেয়ে রাত ১২টায় বনানীতে তার পৈত্রিক ফ্ল্যাটে ছুটে যায় তরুণী। ফেসবুক বান্ধবী হিসেবে রাত কাটানোর পর ভোরে তাকে তাড়িয়ে দেয় ইভান। এজন্যই ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করে মেয়েটি। রিমান্ডে থাকার প্রথমদিনে এমনই তথ্য প্রকাশ করে ইভান। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানায়, এগারো মাস আগে ফেসবুকে পরিচয় হলেও এর আগেও একবার মেয়েটির সঙ্গে মেলামেশা করেছে। বনানীর একাধিক হোটেল রেস্টুরেন্টে গিয়ে তারা একত্রে ডিনার করার কথাও জানিয়েছে ইভান। পুলিশ মেয়েটির গ্রামের বাড়িতেও অনুসন্ধান চালিয়েছে। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তরুণী ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্তদের শাস্তি দাবির পাশাপাশি গভীর রাতে তরুণীদের পার্টিতে যোগ দেয়ার সমালোচনা হচ্ছে। এ সম্পর্কে শহীদুল্লাহ পাটওয়ারী নামের ইভানের এক দূর সম্পর্কের আত্মীয় জনকণ্ঠকে বলেন, মামলার এজাহারে বাদী অভিযোগ করেছেনÑ সেই রাতে ইভান যে ব্যাগটি রেখে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় সেটিতে তিনটি ড্রেস, দুটি জিন্সপ্যান্ট, একটি কুর্তা, তিনটি মোবাইল চার্জার, সিমকার্ড, মেমোরি কার্ড এবং নগদ ১৫ হাজার টাকা ছিল। এখন প্রশ্ন হচ্ছে মাত্র ক’দিন আগেই ঘটনাস্থলের অনতি দূরে রেইন ট্রি হোটেলে আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলের হাতে দুই তরুণী ধর্ষিত হওয়ার ঘটনা দেশে-বিদেশে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। এ ঘটনা বাংলাদেশের প্রতিটি নারী অবগত হয়ে ধর্ষকের নিন্দার পাশাপাশি ওই মেয়ে দুটোকেও রাতে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার সমালোচনা করেছেন। ইভানের ফ্ল্যাটেও যেটা ঘটেছে-সেটা কোন অভিভাবকেরই কাম্য নয়। প্রশ্ন হচ্ছে মেয়েটির অভিভাবকের দায় দায়িত্ব নিয়ে। এত রাতে কোন ভদ্র পরিবারের অভিভাবক তার মেয়েকে বাইরে একাকী ছেড়ে দিতে পারেন না। কি কারণে এতগুলো ড্রেস, ৩টি মোবাইল ফোন ও চার্জার ব্যাগে নিয়ে তিনি ওই ইভানের ডাকে সাড়া দিলেন? মেয়েটির অভিভাবক সম্পর্কে জানতে চাইলে বনানী থানার পুলিশ জানিয়েছেন, এ বিষয়ে পুলিশ এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি। মেয়েটি মামলার এফআইআর-এ তার সুনির্দিষ্ট ঠিকানা লিখেনি। শুধু নাম ও মোবাইল ফোন দিয়েছেন। তবে মৌখিকভাবে তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, বারিধারার একটি ঠিকানায় থাকেন। পুলিশ সেখানে গিয়ে জানতে পারে- মিজানুর রহমান নামের এক ব্যবসায়ীর নামে ওই বাসাটি ভাড়া নেয়া। মিজানুর রহমানের পরিচয় জানতে বনানী থানার ওসি ফরমান আলী জনকণ্ঠকে বলেছেন, মেয়েটির বক্তব্য সুস্পষ্ট নয়। একবার তিনি মিজানকে স্বামী পরিচয় দিচ্ছেন আবার বলছেন পরিচিত। তবে প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে মিজানের সঙ্গে তিনি লিভ-টুগেদার করছেন। পুলিশ জানিয়েছে, মেয়েটির বাবা মায়ের পক্ষ থেকে কিংবা অন্য কোন অভিভাবক এখনও থানায় যোগাযোগ করেননি। তদন্তে দেখা গেছেÑ তার বিয়ে হয়েছিল। সেই সংসারে একটি বাচ্চাও গর্ভপাত করানো হয়। সে ঘটনাার তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যায় স্বামী। এরপর থেকেই মূলত মেয়েটি বাবা মার সঙ্গে কোন ধরনের সম্পর্ক না রেখে নিজের মতোই চলাফেরা করে। সেই রাতের ঘটনা সম্পর্কেও ওসি ফরমান আলী জানিয়েছেন, ওই তরুণী স্বে”চ্ছায় ইভানের ফোন পেয়ে ওই ফ্ল্যাটে গিয়েছিল নাকি জন্মদিনের অজুহাত দেখিয়ে তাকে ফুসলিয়ে সেখানে নেয়া হয়েছিল সেটাই তদন্ত করা হচ্ছে। এজন্য ইভানের কললিস্ট দেখে সেদিন কে কথা বলেছিলেন তা জানারও চেষ্টা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে কেন ওই তরুণী একাধিক সেট পোশাক নিয়েছিলেন- সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মামলার এজাহারে বাদীর অভিযোগ- তার ৩টি মোবাইল ও নগদ টাকা কেড়ে নিয়েছিল আসামি বাহাউদ্দিন ইভান। এখন সেগুলো উদ্ধারের চেষ্টা করছে পুলিশ। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সেই মোবাইল ফোন উদ্ধার করতে পারেননি পুলিশ। এ সম্পর্কে বনানী থানার দারোগা সুলতানা আক্তার বলেন, এখন পর্যন্ত তরুণীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া মোবাইল ফোন ও টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তরুণীর টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়ার কারণ ও তা খুঁজে বের করার জন্যই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ইভানও ধর্ষণের কথা স্বীকার করলেও মোবাইল ফোন ও টাকার বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে। এ সব বিষয়ে পুলিশ মেয়েটির গ্রামের বাড়িতেও খোঁজ খবর নিচ্ছে। উল্লেখ্য, তরুণীর অভিযোগ গত ৪ জুলাই বনানীতে জন্মদিনের পার্টির কথা বলে ইভান তাকে বাসায় দাওয়াত দিয়ে ধর্ষণ করে। এরপর ৫ জুলাই ওই তরুণী বনানী থানায় গিয়ে ইভানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। পুলিশ তরুণীকে নিয়ে ইভানের বাসায় তাৎক্ষণিক অভিযান চালায়। তাকে না পেয়ে ওই দিন দুপুরেই পুলিশ তরুণীর অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে। ইভান বাসা থেকে পালিয়ে নারায়ণগঞ্জে আশ্রয় নিলে, র‌্যাব তাকে গ্রেফতার করে। বর্তমানে ইভানকে চারদিনের রিমান্ডে নিয়ে বনানী থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
×