ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বৃষ্টির জলে ধোয়া রঙিন পাপড়ি, পবিত্র অনুভব

প্রকাশিত: ০৬:১০, ৯ জুলাই ২০১৭

বৃষ্টির জলে ধোয়া রঙিন পাপড়ি, পবিত্র অনুভব

মোরসালিন মিজান ॥ ঘাসফুল বিশেষ দেখা হয়েছিল বনানী কবরস্থানে। মৃত্যুদিবসে কবি শামসুর রাহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে যাওয়া। যেতে যেতে এবং আসতে আসতে আরও বেশকিছু সমাধি চোখে পড়ে। মার্বেল পাথরের এপিটাফে বিখ্যাত অনেকের নাম লেখা। সেসব নাম দেখে নয়, মাটিতে যে ফুল ফুটে ছিল, আকর্ষণ করছিল খুব। তাই খুটিয়ে দেখা। ঘন সবুজ ঘাসের কার্পেট। তার ওপর মাথা তুলে ছিল চোট্ট রঙিন ফুল। সংখ্যায় এত যে, চট করে গুণে ফেলা যায় না। বর্ষার বৃষ্টিতে ধোঁয়া সতেজ ফুল মৃত্যুর কথা কিছু সময়ের জন্য হলেও ভুলিয়ে দিয়েছিল। ভেতরে বেজে উঠেছিল সেই গানÑ প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে/মোরে আরো আরো আরো দাও প্রাণ।/তব ভুবনে তব ভবনে/মোরে আরো আরো আরো দাও স্থান...। মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানেও আছে ঘাসফুল। সযতেœ বড় হচ্ছে। তাই বলে ফুলটি শুধু সমাধির সৌন্দর্য পবিত্রতা আর ভাবগাম্ভীর্য রক্ষা করে, এমনটি ভাবা যাবে না। বাড়ির বাগানে-ছাদে-বারান্দায় চমৎকার ফুটে থাকে। অন্য ফুল আকারে বড়। উঁচু গাছ। সহজে দৃশ্যমান হয়। পায়ের কাছে আলো ছড়ানো ঘাসফুল খুঁজে নেন সৌন্দর্যপ্রেমীরা। এর ইংরেজী নাম আবার রেইন লিলি। হ্যাঁ, বৃষ্টির নামে নাম। বর্ষায় সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। ঘাসফুল বা রেইন লিলি ভূমিসংলগ্ন। উচ্চতা মাত্র ১৫ থেকে ২০ সেমি। ফলে পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় পা ছুঁয়ে দেয়। ফুলের মাঝখানে রাখা কোন কিশোরীর নগ্ন পা দেখে মনে হয়, রঙিন নূপুর পরিয়ে দেয়া হয়েছে! অনেকে আবার ভুল করে পায়ে মাড়িয়ে চলে যান। তারা দুর্ভাগা তো বটেই! রেইন লিলি আমারিলিডাসি পরিবারের সদস্য। আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকা। বাংলাদেশেও আছে বহু বছর। একই ফুল রেইন ফ্লাওয়ার, ফেয়ারি লিলি, জেফাইর লিলি, ম্যাজিক লিলি, আটামাসকো লিলি নামেও পরিচিত। ফুল হয় তিন রঙের। সাদা হলুদ ও গোলাপী। সাদা ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম জেফাইরান্থেসিস ক্যানাডিডা। হলুদ ফুলটি জেফাইরান্থেসিস সিট্রিনা। আমাদের দেশে বেশি দেখা যায় গোলাপী রঙের ফুলটি। ঢাকার বিভিন্ন বাসার ছাদে, বারান্দায় রাখা টবের কোন না কোনটিতে পিঙ্ক রেইন লিলি উঁকি দিয়ে আছে। গোলাপী দেখতে হওয়ায় একই ফুলের নাম রোজি রেইন লিলি, রোজ ফেয়ারি লিলি ও রোজ জেফির লিলি। আর বোটানিক্যাল নাম জেফাইরান্থেসিস রোজ। ঘাসফুলের কোন ঘ্রাণ নেই। সৌন্দয-ই শেষ কথা। প্রকৃতিপ্রেমীদের মুগ্ধ করে রাখে। সে কথা জানিয়ে উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মা বলেন, মাটির দিকে তাকিয়ে হাঁটলে এ ফুল মনোযোগ কাড়বেই। গ্রীষ্ম থেকে এর ফোটা শুরু হয়। শরৎ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। তিনি জানান, ফুলটি সন্ধ্যায় বুজে যায়। দিনের আলোয় পূর্বের অবস্থায় ফেরে। আকর্ষণীয় হলেও, ঘাসফুলের জন্য তেমন যতেœর প্রয়োজন হয় না। অযতেœ অবহেলায় বেঁচে থাকা বহু বর্ষজীবী ফুল রেইন লিলি।
×