ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সহায়ক সরকার নয়, নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করা উচিত

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৯ জুলাই ২০১৭

সহায়ক সরকার নয়, নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করা উচিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) শক্তিশালী করা প্রয়োজন। কারণ নির্বাচন হয় ইসির অধীনে। তাই নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার ফর্মুলার পরিবর্তে রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত ইসি বিষয়ক আলোচনায় জোর দেয়া। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল ও জনসাধারণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করলে কোন কারচুপি হবে না। তবে যারা বাংলাদেশের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না, তাদের নির্বাচনের বাইরে রাখতে হবে। ভোটে ধর্মের ব্যবহার, নমিনেশন বাণিজ্য এবং লাগামবিহীন নির্বাচনী ব্যয় বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি বাস্তবতা বিবেচনায় নারী প্রার্থীদের বিশেষ সুরক্ষাও দেয়া উচিত। শনিবার ‘রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় এমন মত প্রকাশ করেছেন বিশিষ্টজনরা। রাজধানীর গুলশানে লেকশোর হোটেলে এ আলোচনার আয়োজন করে ইনস্টিটিউট অব কনফ্লিক্ট এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (আই ক্ল্যাডস)। এতে শিক্ষাবিদ, সমাজবিজ্ঞানী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, আইনজীবী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী নেতা, নিরাপত্তা বিশ্লেষক, রাজনীতিক ও সাবেক কূটনীতিকসহ বিশিষ্টজনের অংশ নেন। আলোচনার শুরুতে আই ক্ল্যাডসের নির্বাহী পরিচালক মেজর জেনারেল (অব) মোঃ আবদুর রশীদ বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়টুকু বাংলাদেশের রাষ্ট্র কাঠামোর ‘একিলিস হিল’ (দুর্বল জায়গা)। আদালতের রায়েও বলা হয়েছে, এদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতার মালিক জনগণ, যা এক মুহূর্তের জন্যও অনির্বাচিত ব্যক্তিদের হাতে তুলে দেয়ার কোন সুযোগ নেই। আলোচনায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক বলেন, দেশে ব্যবসাবান্ধব বিনিয়োগের জন্য একটি অর্থবহ নির্বাচন প্রয়োজন, যা প্রায় সর্বজনগ্রাহ্য। কারণ পৃথিবীর কোন দেশেই শতভাগ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয় না, এটি সম্ভবও না। বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়ে খুব বেশি তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে না। সব রাজনৈতিক দল ইসির সঙ্গে আলোচনা করছে। বিএনপিও দুই-তিনবার আলোচনা করেছে। গণতান্ত্রিক পরিবেশে ভাল নির্বাচন হোক, এটি সবার কামনা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশীদ বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ করে স্থায়ী ব্যবস্থার চর্চা করতে হবে। এজন্য সহায়ক সরকার নয়, ইসিকে শক্তিশালী করার আলোচনা প্রয়োজন। ১৯৮৮ সাল এবং ১৯৯৬ এর ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ছাড়া আওয়ামী লীগ কোন নির্বাচন বর্জন করেনি। দলটির ৬৭ বছর সাফল্যের সঙ্গে টিকে থাকার এটি অন্যতম কারণ বলে আমি মনে করি। গণতন্ত্রে বিশ্বাস থাকলে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ওয়াজের নামে অনেক সময় সাম্প্রদায়িকতার সৃষ্টি করা হয়। যারা এরকম করবে তাদের শাস্তির আওতায় এনে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করতে হবে। ভোটের প্রচারণায় ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে। পাশাপাশি সহিংসতার উস্কানিদাতাদেরও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। সংখ্যালঘুদের নিরাপদে ভোটদান নিশ্চিত করা ও নির্বাচনী ব্যয়ে লাগাম টানার ব্যবস্থা নিতেও পরামর্শ দেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, কিছু কিছু ওয়াজে জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ হওয়ার মতো কথা বলা হচ্ছে। এটা বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, মনে হচ্ছে বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আসার প্রতিযোগিতা চলছে। তারা অংশ নিলেই যেন গণতন্ত্র অর্জন হবে। এ প্রবণতাও ঠিক নয়। বিএনপি যদি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস করে তারা অবশ্যই নির্বাচনে অংশ নেবে। এছাড়া জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনে অংশ না নিলেও দলটির নেতারা অন্য কোন নামে অংশ নিলে সেটা গ্রহণযোগ্য হবে কিনা- তা ভেবে দেখার আহ্বানও জানান তিনি। শহীদ বুদ্ধিজীবী কন্যা অধ্যাপক নুজহাত চৌধুরী বলেন, গণতন্ত্রে অংশগ্রহণের সুযোগ সবার আছে। কিন্তু গণতন্ত্রের নামে ধর্ম ব্যবসায়ী ও যুদ্ধাপরাধীদের সুযোগ দেয়া যাবে না। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, অংশগ্রহণমূলক আর তার থেকে জরুরী কোন রাজনৈতিক দল যেন সহিংসতায় না জড়ায়। নির্বাচন কমিশনকে সে বিষয়টি দেখতে হবে। নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা হলে তারা যেন বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন না করেন সে ব্যাপারে সতর্ক করে তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে সহিংসতা কাম্য নয়। নৈরাজ্য ও গণতন্ত্র এক সঙ্গে চলবে, এটাও কাম্য নয়। ধর্মের ব্যবহারও জিরো টলারেন্স হিসেবে দেখাতে হবে বলেও মনে করেন তিনি। শহীদ বুদ্ধিজীবী কন্যা শমী কায়সার বলেন, আমি এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচিত পরিচালক। দেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় যে কোন নির্বাচনে নারী প্রার্থীদের ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করা হয়। গণতন্ত্রে দেশের অর্ধেক অংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হলে এটি বন্ধ করতে হবে। এজন্য জাতীয় নির্বাচনে নারী প্রার্থীদের বিশেষ সুরক্ষার দাবি জানান তিনি। আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করে বেসরকারী একাত্তর টিভির উপস্থাপক মিথিলা ফারজানা। আলোচনা সভাটি একাত্তর টিভিতে সরাসরি সম্প্রসারিতও হয়। সভায় অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন আই ক্ল্যাডস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জমির, একাত্তর টেলিভিশনের মোজাম্মেল হক বাবু, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান, অধ্যাপক সাদেকা হালিম, অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, সাংবাদিক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, নারী নেত্রী রোকেয়া কবীর প্রমুখ।
×