ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সে ছিল শায়খ আব্দুর রহমান, বাংলা ভাইসহ ছয় শীর্ষ জঙ্গীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ;###;খাগড়াগড়ে জেএমবির আস্তানায় গ্রেনেড তৈরির সময় বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনার অন্যতম হোতা ;###;তিন সহযোগীসহ চাঁপাই থেকে গ্রেফতার হয়েছে

হলি আর্টিজান হামলায় অস্ত্রের যোগানদাতা সোহেল গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৯ জুলাই ২০১৭

হলি আর্টিজান হামলায় অস্ত্রের যোগানদাতা সোহেল গ্রেফতার

গাফফার খান চৌধুরী/মামুন-অর-রশীদ/ডিএম তালেবুন্নবী/ সাজেদুর রহমান শিলু ॥ অবশেষে গ্রেফতার হলো বহুল আলোচিত গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তরাঁ ও বেকারিতে জঙ্গী হামলার অন্যতম পরিকল্পনা এবং অস্ত্রগোলাবারুদ সরবরাহকারী সোহেল মাহফুজ। জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ার পর দীর্ঘ ১৫ বছর পর তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। ফাঁসিতে মৃত্যু হওয়া শায়খ আব্দুর রহমান, বাংলা ভাইসহ শীর্ষ ছয় জঙ্গীর অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিল সে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমানের খাগড়াগড়ে জেএমবির নেটওয়ার্ক ও আস্তানা গড়ে তোলার অন্যতম কারিগর সোহেল মাহফুজ। ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সে নসরুল্লাহ নামে পরিচিত। খাগড়াগড়ে জেএমবির একটি আস্তানায় গ্রেনেড তৈরির সময় বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনার অন্যতম হোতাও এই সোহেল মাহফুজ। সে ভারতের মোস্টওয়ান্টেড আসামি। ভারত সরকার তাকে জীবিত বা মৃত ধরিয়ে দিতে ১০ লাখ রুপী পুরস্কার ঘোষণা করেছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি উচ্চ পর্যায়ের দল বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ চলছে। তিন সহযোগীসহ গ্রেফতারের পর সোহেল মাহফুজকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে শনিবার বিকেলে ঢাকায় আনা হয়েছে। আজ তাকে হলি আর্টিজান মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ঢাকার সিএমএম আদালতে সোপর্দ করে দশ দিনের রিমান্ড চাইবে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। সোহেল মাহফুজের অন্য তিন সহযোগী নব্য জেএমবির সদস্য। গুলশান হামলায় তাদের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া না যাওয়ায় তাদের চাঁপাইনবাবগঞ্জের আদালতে হাজির করা হচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আমাদের স্টাফ রিপোর্টার জানান, শুক্রবার রাত পৌনে তিনটার দিকে জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার পুষ্কনি এলাকায় অভিযান চালায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা, রাজশাহী জেলা, পুলিশ সদর দফতরের এলআইসি শাখা ও পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। অভিযানে গ্রেফতার হয় গুলশানের হলি আর্টিজান হামলার অন্যতম প্রধান আসামি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার সাদিপুর কাবলিপাড়ার রেজাউল করিমের ছেলে সোহেল মাহফুজ ওরফে শাহাদাত ওরফে নসরুল্লাহ ওরফে রিমন (৩৫), চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরমোহনপুর গ্রামের ইয়াসিনের ছেলে নব্য জেএমবির অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক জামাল ওরফে মোস্তফা (৩৪), একই জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার পার্বতীপুর গ্রামের আফজাল হোসেনের ছেলে নব্য জেএমবির আইটি বিশেষজ্ঞ হাফিজুর রহমান ওরফে হাসান (২৮) ও একই উপজেলার বিশ্বনাথপুর কাটিয়াপাড়া গ্রামের আসলামের ছেলে নব্য জেএমবির সামরিক শাখার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্য জুয়েল ওরফে ইসমাইল (২৬)। এরমধ্যে সোহেল মাহফুজ ও জুয়েল জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার শিবনগর গ্রামে গত ২৬ এপ্রিল জঙ্গী আস্তানায় অপারেশন ঈগল হান্টের ঘটনায় শিবগঞ্জ থানায় এবং ২৪ মে নাচোল থানায় দায়েরকৃত এজাহারভুক্ত পলাতক আসামি। দিনাজপুর থেকে আমাদের স্টাফ রিপোর্টার জানান, সোহেল মাহফুজ ২০০৮ সালের ৪ ডিসেম্বর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলার কশিগাড়ি গ্রামের জয়পুরহাট র‌্যাব-৫ ক্যাম্পের সদস্যরা শহিদুল ইসলামের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির উপকরণ, বিস্ফোরকদ্রব্য, জিহাদী বই, লিফলেট, গামবুট উদ্ধার করে। অভিযানের সময় বাড়ি থেকে সোহেল মাহফুজ ওরফে তুহির পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এরপর জেলা কশিগাড়ি গ্রামের শহিদুল ইসলামের কন্যা শহিদা বেগমকে বিয়ে করে ওই বাড়িতেই বসবাস শুরু করেছিল। সোহেল পালিয়ে যাওয়ার পর তার শ্বশুর শহিদুলকে (৬০) আটক করা হয়। এ বিষয়ে র‌্যাবের তরফ থেকে ঘোড়াঘাট থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলার আসামি সোহেল মাহফুজ। পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে সোহেল মাহফুজ, তার শ্বশুর শহিদুল, জেএমবির এহসার সদস্য রফিকুল ইসলাম ও শাহিনুর ইসলামের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। মামলায় শহিদুল, রফিকুল ও শাহিন গ্রেফতার হলেও সোহেল মাহফুজ পলাতক ছিল। সোহেল মাহফুজের অনুপস্থিতিতেই মামলাটির বিচার কাজ চলছে। এ মামলায় সোহেল মাহফুজকে শোনএ্যারেস্ট দেখানোর প্রস্তুতি চলছে। রাজশাহী থেকে আমাদের স্টাফ রিপোর্টার জানান, নব্য জেএমবির উত্তরাঞ্চলীয় কমান্ডার সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে জঙ্গীদের নেটওয়ার্ক তছনছ হয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এম. খুরশীদ হোসেন। শনিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা সাংবাদিকদের আরও বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ, রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও তানোরের জঙ্গী আস্তানায় সোহেলের যাতায়াত ছিল। সে দেশের বিভিন্ন স্থানে অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহ করত। বোমা বানাতেও পারদর্শী সে। সোহেল মাহফুজের সঙ্গে যে তিনজন গ্রেফতার হয়েছে, তারা মূলত জঙ্গীদের বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করে থাকে। সোহেল উত্তরাঞ্চলে নব্য জেএমবিকে সংগঠিত করছিল। পলাতক থেকেই নানা কৌশলে নব্য জেএমবির কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছিল। গত ঈদে এ অঞ্চলে নাশকতার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গীদের। তবে পুলিশের কঠোর তৎপরতায় জঙ্গীদের সেই পরিকল্পনা সফল হয়নি। সোহেল মাহফুজসহ জেএমবির অন্তত দুই ডজন নেতা ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআই’র টার্গেটে রয়েছে। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বেনীপুর ও তানোরের ডাঙ্গাপাড়ার জঙ্গী আস্তানায় যাতায়াত ছিল সোহেল মাহফুজের। এসব আস্তানা থেকে শক্তিশালী বিস্ফোরক উদ্ধার হয়েছিল। যা তৈরি করেছিল সোহেল মাহফুজ। শনিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সোহেল মাহফুজকে ঢাকায় আনে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। এ ব্যাপারে বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, মাদ্রাসায় পড়াশোনা করার সময় জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ে সোহেল মাহফুজ। ২০০২ সালে রাজশাহী অঞ্চলের বাঘমারার হামিরকূৎসা এলাকায় জঙ্গীবাদের ব্যাপক উত্থান ঘটে। ওই সময় থেকেই সোহেল মাহফুজ জেএমবির সঙ্গে জড়িত এবং জেএমবির হয়ে নানা কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে ২০০৪ সালে পুরনো জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইয়ের আমলে তার তৎপরতা ছিল ব্যাপক। ওই সময় সর্বহারা নিধনের নামে ওইসব এলাকায় বাংলা ভাই ও শায়খ আব্দুর রহমান ব্যাপক তৎপরতা চালায়। তারা নানা ধরনের অপারেশন পরিচালনা করে। সোহেল মাহফুজ বাংলা ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। বাংলা ভাইয়ের সঙ্গে সর্বহারা নিধনের নামে বহু মানুষকে নির্যাতন ও হত্যার সঙ্গে জড়িত। ২০০৪ সালে বাংলা ভাইয়ের সঙ্গে এক অপারেশনে গিয়ে বোমার বিস্ফোরণ ঘটানোর সময় তার ডান হাতের কব্জি উড়ে যায়। এরপর থেকেই সে হাতকাটা সোহেল নামে পরিচিতি লাভ করে। ওই সময় জেএমবি জেএমজেবি (জাগ্রত মুসলিম জনতা অব বাংলাদেশ) নামে পরিচিত ছিল। পরবর্তীতে জঙ্গীবাদের ব্যাপক উত্থানে সরকার জেএমবি ও জেএমজেবিকে নিষিদ্ধ করে। এরপর ২০০৬ সালের দিকে মাহফুজ পালিয়ে ভারতে চলে যায়। সেখানে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের খাগড়াগড়ে জেএমবির নেটওয়ার্ক ও আস্তানা গড়ে তুলে। সে পশ্চিমবঙ্গ শাখা জেএমবির আমীর হয়। তার সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে বর্ধমানে জেএমবির আস্তানায় শক্তিশালী বিস্ফোরক তৈরি ও মজুদ হতে থাকে। এরই এক পর্যায়ে জেএমবির আস্তানায় জেএমবির তৈরিকৃত গ্রেনেড বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এরপর থেকেই ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এর নেপথ্য কারণ জানতে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করে। তৎপরতার এক পর্যায়ে ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বর্ধমান বিস্ফোরণের পেছনে এবং আস্তানা গড়ে তোলার নেপথ্য কারিগর হিসেবে সোহেল মাহফুজকে শনাক্ত করে। তাকে জীবিত অথবা মৃত ধরিয়ে দিতে ১০ লাখ রুপী পুরস্কার ঘোষণা করে ভারত সরকার। সে ভারতের মোস্টওয়ান্টেড। সোহেল মাহফুজ ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে নসরুল্লাহ নামে পরিচিত। এটি সোহেল মাহফুজের ছদ্ম নাম। বর্ধমান বিস্ফোরণের পর থেকেই সোহেল মাহফুজ সম্পর্কে ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছিল। সোহেল মাহফুজ গ্রেফতারের বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ভারত সরকারকে জানানো হয়েছে। ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি উচ্চ পর্যায়ের দলের সোহেল মাহফুজকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগ চলছে। মনিরুল ইসলাম জানান, জেএমবির শীর্ষ ৬ জঙ্গীর ফাঁসি কার্যকর হলে সংগঠনটির আমীর হন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় শূরা কমিটির সাবেক সদস্য মুফতি মাওলানা সাইদুর রহমান জাফর। ওই সময় জেএমবির শূরা সদস্য পদ লাভ করে সোহেল। শূরা পদ লাভ করার পরপরই ২০০৬ সালে সোহেল মাহফুজ পালিয়ে ভারতে চলে যায়। ২০১০ সালে সাইদুর রহমান ঢাকার ধনিয়া এলাকা থেকে গ্রেফতার হয়। এরপর দীর্ঘ দিন ভারতে পালিয়ে থেকে জেএমবিকে নেতৃত্ব দিচ্ছিল সোহেল মাহফুজ। ২০১৪ সালে সে পালিয়ে বাংলাদেশে আসে। এরপর থেকে পুরোপুরি প্রযুক্তির বাইরে থাকে। একেক দিন একেক জায়গায় সময় কাটাতে থাকে। ফলে তাকে শনাক্ত করা সহজ ছিল না। এদিকে পুরনো জেএমবি ভেঙ্গে নব্য জেএমবি সৃষ্টি হয়। সোহেল মাহফুজ নব্য জেএমবির হয়ে গোপন তৎপরতা চালাতে থাকে। নারায়ণগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত নব্য জেএমবির সমন্বয়ক গুলশান হামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড তামিম আহমেদ চৌধুরীর সঙ্গে বছর দুয়েক আগে তার যোগাযোগ হয়। এরপর থেকে নব্য জেএমবিতে পুরোপুরি নিজেকে যুক্ত করে। ভারত থেকে পালিয়ে দেশে আসার পর থেকেই সে চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকায় অবস্থান করতে থাকে। দীর্ঘ সময় ভারতে জেএমবিসহ ভারতীয় বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠন এবং সীমান্তে যাতায়াতের কারণে তার সঙ্গে অস্ত্রগোলাবারুদ চোরাকারবারিদের যোগাযোগ গড়ে ওঠে। সে মূলত রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, বগুড়া ও গাইবান্ধায় চলাফেরা করত। এরমধ্যে রাজশাহীর গোদাগাড়ী, তানোর ও বাগমারায় বেশি অবস্থান করত। রাজশাহী অঞ্চলে মাহফুজের অনেক অনুসারি রয়েছে। মাহফুজুর রহমান ছিল নব্য জেএমবির শূরা সদস্য। এজন্য নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতারা তার কাছে গিয়ে দেখা করে আসত। হলি আর্টিজানে হামলার আগে ও পরে সোহেল মাহফুজের সঙ্গে হামলাকারী ও তাদের মাস্টারমাইন্ডদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয়েছে। দেশে নব্য জেএমবি পরিচালিত প্রায় সব অপারেশনের সঙ্গে কোন না কোনভাবে সোহেল মাহফুজের সম্পৃক্ততা রয়েছে। সিলেটের অপারেশন থেকে শুরু করে অনেক অপারেশন সম্পর্কে সোহেল মাহফুজ আগ থেকেই জানত। এসব অপারেশনের সে নির্দেশদাতা। হলি আর্টিজান হামলার অন্যতম আসামি সিলেটে নিহত মুসার সঙ্গেও তার কয়েক দফায় যোগাযোগ হয়েছিল। হলি আর্টিজানে হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্রগোলাবারুদ ছোট মিজানকে দিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে আমের ঝুড়িতে করে ঢাকা পাঠানোর সার্বিক তত্ত্বাবধায়ন করে মাহফুজ। মনিরুল ইসলাম বলেন, গুলশান হামলার তদন্ত করতে গিয়ে অস্ত্রগোলাবারুদ সরবরাহের সঙ্গে সোহেল মাহফুজ জড়িত বলে তথ্য মেলে। গুলশান হামলার অন্যতম আসামি জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী আদালতে ১৬৪ ধারায় দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতেও গুলশান হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্রগোলাবারুদ সরবরাহের সঙ্গে সোহেল মাহফুজ জড়িত বলে জানায়। এছাড়া গুলশান হামলায় গ্রেফতারকৃত মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান ও রাকিবুল হাসান রিগানের দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতেও মাহফুজের নাম এসেছে। গুলশান হামলায় পলাতকদের মধ্যে অন্যতম রাশেদুল ইসলাম ওরফে র‌্যাশ ও বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ও ছোট মিজান। এদের গ্রেফতার করতে পারলেই স্বল্প সময়ের মধ্যে গুলশান হামলা হামলার চার্জশীট দাখিল করা হবে। নব্য জেএমবির সদস্যরা ছিনতাই, ব্যাংক ডাকাতি, ভেজাল স্বর্ণের ব্যবসা ও জালমুদ্রার ব্যবসা করে সংগঠনের সিংহভাগ অর্থের যোগান দিয়ে থাকে। গত বছরের ১ জুলাই হলি আর্টিজানে হামলা করে দুই পুলিশ কর্মকর্তা নয় ইতালীয়, ৭ জন জাপানী, একজন ভারতীয় ও তিন জন বাংলাদেশীসহ মোট ২২ জনকে হত্যা করে জঙ্গীরা। পরদিন সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে হামলাকারী পাঁচ জঙ্গী নিবরাস ইসলাম, মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল নিহত হন। পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে নিহত হন তামিম চৌধুরী, জাহিদুল ইসলাম, তানভীর কাদেরী, নুরুল ইসলাম মারজান, আবু রায়হান তারেক, সারোয়ার জাহান, আব্দুল্লাহ মোতালেব ও ফরিদুল ইসলাম আকাশ। এরা সবাই গুলশান হামলায় জড়িত ছিল।
×