ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বৃষ্টি ও ঢলে যমুনার পানি বেড়েছে, নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৯ জুলাই ২০১৭

বৃষ্টি ও ঢলে যমুনার পানি বেড়েছে, নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের কারণে বৃদ্ধি পেয়েছে যমুনা নদীর পানি। এতে টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, কক্সবাজার, কুড়িগ্রাম, জামালপুর ও গাইবান্ধায় দুর্ভোগে পড়েছেন নদী তীরবর্তী এলাকায় থাকা বাসিন্দারা। কারণ বন্যার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। ফলে গৃহহীন ও পনিবন্দী হয়ে পড়ছে শত শত পরিবার। খবর স্টাফ রিপোর্টার, নিজস্ব সংবাদদাতা ও সংবাদদাতাদের। জানা গেছে, এক সপ্তাহে যমুনার পানি বৃদ্ধির কারণে ভূঞাপুরের যমুনা তীরবর্তী গ্রামগুলোতে শুরু হয়েছে ব্যাপক ভাঙ্গন। ইতোমধ্যেই প্রায় ৩ শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। ভাঙ্গন আতঙ্কে রয়েছে নদী তীরবর্তী মানুষেরা। নদী থেকে ৫০ ফুটের মধ্যে রয়েছে ভূঞাপুর-তারাকান্দা বেড়িবাঁধ। আতঙ্ক বিরাজ করছে এলাকায়। সরেজমিনে দেখা যায়, এক সপ্তাহের ভাঙ্গনে উপজেলার অর্জুনা, চুকাইনগর, কুঠিবয়ড়া, জগৎপুড়া, রাজাপুর, ফলদাপাড়া, রামপুর, বিহারী, রুলিপাড়াসহ অর্ধশতাধিক গ্রামে ভয়াবহ ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে আরও অর্র্জুনা, গাবসারা, গোবিন্দাসী, ও নিকরাইল ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম। মাত্র ৫০ ফুট দূরত্ব রয়েছে কুঠিবয়ড়া বাজার ও বঙ্গবন্ধু সেতু-তারাকান্দা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। যে কোন সময় বাঁধটি চলে যেতে পারে যমুনা গর্ভে। আর বাঁধটি ভেঙ্গে গেলে প্লাবিত হবে ভূঞাপুর, গোপালপুর ও ঘাটাইল উপজেলা কয়েক লাখ পরিবার। এছাড়া নদী থেকে ১০০ গজের মধ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছে কুঠিবয়ড়া বাজারের শতাধিক স্থাপনা, গোবিন্দাসী উচ্চ বিদ্যালয়ের বহুতল ৫টি ভবন, কোণাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়, মমতাজ ফকির উচ্চ বিদ্যালয়, দেশের অন্যতম বৃহৎ গোবিন্দাসী গর”র হাটসহ, শতাধিক বৃহৎ বহুতল ভবন। রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ, কয়েকশত পাকা বাড়ি, মসজিদ, মন্দির ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এখনই ভাঙ্গন ঠেকাতে কার্যকর উদ্যোগ না নিলে বর্ষায় ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অভিজ্ঞ মহল। যমুনায় ভাঙ্গনের শিকার অর্জুনা গ্রামের রাবেয়া খাতুন (৫০) বলেন, আমরা গরিব মানুষ ভিক্ষা কইরা খাই। যা কিছু জায়গা জমি আছিল যমুনায় ভাইঙ্গা গেছে। এখন অন্যের বাড়িতে থাকি। আমাগো চেয়ারম্যানরা চোখেই দেখে না। কোন খোঁজ নেয় না। কষ্টাপাড়া গ্রামের মজিদ সরকার জানান, সামান্য কিছু কাজের জন্য আমাদের গ্রামসহ কয়েক গ্রাম বন্যায় পানিতে ডুবে যায়। স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির কারণে আমাদের এ দুর্ভোগ। নদীতে পানি বাড়ছে এবারও বন্যায় ভাসতে হবে। এখন যদি কয়েকটি পয়েন্ট জিও ব্যাগ দিয়ে রাস্তা উঁচু করে দেয়া হয় তাহলে ৮-১০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হবে না । ভূঞাপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারমান আবদুল হালিম এ্যাডভোকেট বলেন, হঠাৎ করেই যমুনায় পানি বেড়ে বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। সম্প্রতি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। তারা আশ্বাস দিয়েছেন ভাঙ্গনরোধে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার। গত বছর ভাঙ্গনে উপজেলায় প্রায় ৮ শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে। অভিযোগ আছে, ভাঙ্গন ঠেকাতে প্রায় ৪ কোটি টাকা জিও ব্যাগ ফেলা জন্য ব্যয় ধরা হলেও তা কোন কাজেই আসেনি। তার অধিকাংশই উঠেছে রাঘববোয়ালদের পকেটে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী ফখরুল ইসলাম অনিয়মের বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, যমুনার তীব্র ভাঙ্গনে জিও ব্যাগ কার্যকর নয়। ভাঙ্গনরোধে শীঘ্র্রই স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হবে। সিরাজগঞ্জ ॥ সিরাজগঞ্জের কাছে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় যমুনার পানি বিপদসীমার ২২ সেঃমিঃ ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যেই কাজিপুর, সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার যমুনা চর এলাকার ২৭টি ইউনিয়নের প্রায় ৪০ গ্রাম বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এদিকে বন্যার পানিতে ডুবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শাহজাদপুরের চর কৈজুরী গ্রামের শান্তনা (৬) মারা গেছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্রে জানা গেছে পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী মজুদ আছে চাহিদা পাওয়া মাত্রই ত্রাণসামগ্রী সরবরাহ করা হবে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বালির বস্তা নিক্ষেপ কাজ শুরু“করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম জানান, কোন পরিস্থিতির মোকাবেলার জন্য তারা প্রস্তুত রয়েছেন। বগুড়া ॥ বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে বগুড়ায় যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় যমুনা তীরবর্তী বগুড়ার ৩টি উপজেলাÑ সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনটের বেশ কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব নিম্নাঞ্চলে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার। বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধসংলগ্ন এলাকার বাড়ি ঘরে পানি ওঠায় লোকজন দুর্ভোগে পড়েছেন। মূলত, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পূর্ব পাশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। ঘরবাড়িতে পানি ওঠায় অনেক বন্যার্ত পরিবার সারিয়াকান্দির বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছে। বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই পানি আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা করছেন পাউবো কর্মকর্তারা। যমুনার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় সারিয়াকান্দির উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের চরাঞ্চলসহ নিম্নœাঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় উপজেলা কামালপুর, কুতুবপুর, চন্দনবাইশা ইউনিয়নের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পূর্ব পাশে অবস্থিত ১০টি গ্রামের আড়াই হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১ হাজার ৬০ হেক্টর জমির আউশ আবাদ, ১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমির পাট, ২৫ হেক্টর সবজি, ২০ হেক্টর জমির বীজতলা বন্যা কবলিত হয়েছে। এছাড়া ৪০টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। চন্দনবাইশা আবু আবদুলাহ দাখিল মাদ্রাসা, শোনপচা উচ্চ বিদ্যালয়, উত্তর টেংরাকুড়া উচ্চ বিদ্যালয়, জামথল উচ্চ বিদ্যালয়, আউচারপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও নিজাম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। শনিবার বগুড়া-১ আসনের সংসদ আবদুল মান্নান সারিয়াকান্দির কুতুবপুর, চন্দনবাইশা ও কামালপুর ইউনিয়নের এক হাজার বন্যার্ত পরিবারের মাঝে ২০ কেজি করে চাল বিতরণ করেন। এছাড়া সারিয়াকান্দির বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁদের আশ্রয় নেয়া লোকজনের খাবার পানির জন্য নলকূপ বসানোসহ সেখানে মেডিক্যাল টিম কাজ শুরু করেছে। এদিকে ধুনট উপজেলার ভা-ারবাড়ি ও গোসাইবাড়ি এবং সোনাতলা উপজেলার পাকুল্লা ও তেকানী চুকাইনগর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় বাঁধসংলগ্ন বেশকিছু গ্রামের বাড়ি ঘরে পানি প্রবেশ করেছে। এদিকে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে বন্যা কবলিত সারিয়াকান্দি ও সোনাতলায় ৭০ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া বন্যাকবলিত অপর উপজেলা ধুনটেও ত্রাণ সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। গাইবান্ধা ॥ উজানের নেমে আসা ঢল এবং গত চারদিনের বর্ষণের কারণে গাইবান্ধায় বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১২ সে.মি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া তিস্তা, করতোয়া এবং ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমা ছুই ছুই করছে। এদিকে বন্যার পানি বৃদ্ধির ফলে ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এলাকায় বসবাসরত মানুষেরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। ফলে অব্যাহতভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চলগুলো পাবিত হয়ে পড়েছে। এছাড়া বাঁধের ১৫টি পয়েন্ট অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। পানির চাপ বাড়লেই বাঁধের ওই অংশগুলো ছিঁড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। জানা গেছে, গত ১০ বছরে এ বাঁধটির ব্যাপক ক্ষতি হলেও এর সংস্কার বা মেরামত কাজ কোনটাই করা হয়নি। ফলে যে কোন সময় বাঁধের দুর্বল অংশগুলোতে পানির চাপ পড়লেই ভেঙ্গে যেতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের গাইবান্ধা অংশে ৭৮ কি.মি. বাঁধ রয়েছে। গোটা বাঁধটির এখন জরাজীর্ণ অবস্থা। ইতোমধ্যে ফুলছড়ি উপজেলার রতনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উড়িয়া ইউনিয়নের মধ্য উড়িয়া এলাকায় বন্যার পানিতে রাস্তা-ঘাট ডুবতে শুরু“করেছে। এদিকে পানি বৃদ্ধির ফলে চরাঞ্চলের নদী তীরবর্তী এলাকা এবং নিচু অংশগুলো তলিয়ে যাওয়ায় উঠতি ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে এসব ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, উজানের ঢল এবং বৃষ্টিপাত থাকলে নদ-নদীর পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে পারে। জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল সদর উপজেলার কামারজানি থেকে সাঘাটা উপজেলা পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বিস্তৃত বাঁধ এবং এ সমস্ত বন্যা কবলিত এলাকা শনিবার পরিদর্শন করেন। কুড়িগ্রাম ॥ কুড়িগ্রামে ধরলা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমর, হলহলিয়া, সোনাভরি ও জিঞ্জিরামসহ ১৬টি নদ-নদীর পানি দিন দিন বেড়েই চলেছে। পানি বৃদ্ধির ফলে নিম্নাঞ্চলে দেখা দিয়েছে বন্যা। বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে জেলার চর ও দ্বীপচরগুলোতে বন্যার পানি হু হু করে প্রবেশ করছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় ২৫০ গ্রামে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ১ লাখ মানুষ। পানিবন্দীদের পাশে এখনও কেউ সহযোগিতার হাত বাড়ায়নি। এছাড়া চর-দ্বীপ চরের প্রায় অর্ধশত প্রাথমিক এবং হাইস্কুলে পানি উঠেছে। গ্রামীণ কাঁচা সড়ক তলিয়ে যাওয়া যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। নিম্নাঞ্চলের মানুষজন ৩ দিন ধরে পানিবন্দী থাকায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানি সঙ্কটে পড়েছে অনেকেই। গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বন্যা কবলিতরা। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে এখনও কোন সরকারী-বেসরকারী ত্রাণ তৎপরতা শুরু হয়নি। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারী পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা দশমিক ৫ সেন্টিমিটার কাছ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও ধরলার পানি ধরলাব্রীজ পয়েন্টে ৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুধকুমার নদীর পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে ও কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি কমেছে। এই পরিস্থিতিতে পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধারের জন্য সরকারী বা বেসরকারীভাবে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। দেয়া হয়নি কোন ত্রাণ। নাগেশ্বরী, উলিপুর, রৌমারী, চিলমারী ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের বন্যায় ৫টি ওয়ার্ডে প্রায় ১ হাজার ৭০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ব্রহ্মপুত্র তীরে যাত্রাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এখন হুমকির মুখে। পোড়ারচর আবাসনের সাহেব আলী চৌকিদার (৪৫) জানান, এই আবাসনে প্রায় ২২০টি পরিবার রয়েছে। সামান্য ঝড়ের কবলে পড়ে ৮০ ভাগ আবাসনের টিনের চাল উড়ে গেছে। এছাড়াও তীব্র স্রোতের কারণে আবাসন এখন ভাঙ্গছে। ফলে আবাসনের ভূমিহীন পরিবারগুলো রয়েছে চরম আতঙ্কের মধ্যে। এছাড়াও এই আবাসনের চারপাশে ছোট-বড় মিলিয়ে ৬টি গ্রাম রয়েছে। এর মধ্যে ম-লপাড়া, প্রামাণিকপাড়া, মুছল্লীপাড়া, জোলারগ্রাম, কালির আলগা ও ইনছানের গ্রামে প্রায় চার শতাধিক খানা রয়েছে। বন্যার সময় এখানে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারে। এখন আবাসন নদীগর্ভে চলে গেলে এলাকার মানুষ এবং আবাসনের লোকজনের কোথাও আশ্রয় নেয়ার জায়গা থাকবে না। বন্যার ফলে সদর উপজেলায় ঘোগাদহ প্রথম আলোর চর প্রাথমিক বিদ্যালয়, পার্বতীপুর সর: প্রা: বিদ্যালয় ও যাত্রাপুর সর: প্রা: বিদ্যালয়, উলিপুরে চর বাগুয়া সর: প্রা: বিদ্যালয় ও দাগারকুটি সর: প্রা: বিদ্যালয়, চিলমারীতে ২নং সর: প্রা: বিদ্যালয় ও মনতোলা সর: প্রা: বিদ্যালয়, রাজিবপুরে নয়ারচর সর: প্রা: বিদ্যালয় ও ভেলামারী সর: প্রা: বিদ্যালয়ে পানি ওঠায় লেখাপড়া বিঘিœত হচ্ছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বপন কুমার চৌধুরী জানান, ওইসব স্কুলে বিকল্প পাঠদানের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। সিভিল সার্জন ডাঃ আমিনুল ইসলাম জানান, বন্যার ফলে শনিবার জরুরী সভার মাধ্যমে ৮৮টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও সকল স্বাস্থ্যকর্মীকে মাঠ পর্যায়ে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমাদের কাছে সকল রোগের পর্যাপ্ত ওষুধ মজুদ আছে। জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোঃ ফেরদৌস খান জানান, এলাকার মানুষ বন্যা পরিস্থিতির সঙ্গে বহুকাল ধরে খাপ খাইয়ে আছে। এখনও আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু নেই। বন্যা মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। কক্সবাজার ॥ টানা পাঁচদিন ধরে বৃষ্টিপাত, পাহাড়ী ঢল ও পূর্ণিমার তিথির জোয়ারের পানিতে বাড়ি-ঘর ডুবে যাওয়ায় শত শত পরিবার টাবু টাঙ্গিয়ে গাদাগাদি বসবাস করছে প্রধান সড়কের পাশে। কক্সবাজারে শনিবারই ঝলমলে রোদের দেখা মিলেছে। জেলার বিস্তীর্ণ জনপদের প্রত্যন্ত এলাকার লোকালয় থেকে বন্যার পানি কমে যাওয়ায় তলিয়ে যাওয়া বাড়ি-ঘর মেরামতের উদ্যোগ নিচ্ছে বসতিরা। বৃহত্তর ঈদগাহ, চকরিয়া পশ্চিমাঞ্চালের বিএমচর, কোনাখালী, পুর্ববড় ভেওলা, ঢেমুশিয়া, পশ্চিম বড়ভেওলা ও বদরখালীর দুর্গত শত শত পরিবার চকরিয়া- টৈইটং-বাঁশখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং চিরিঙ্গা বদরখালী সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে তাঁবুতে রয়ে গেছে। পলিথিনের তাঁবু টাঙ্গিয়ে সড়কে আশ্রয় নেয়া বেশির ভাগ পরিবার দরিদ্র শ্রেণীর। বর্তমানে তাঁবুই তাদের ভরসা। বন্যার পানিতে তলিয়ে ও ভেসে যাওয়ায় ওসব তাঁবুতে বৃদ্ধ, মেয়ে-শিশুরা আপাতত বসবাস করছে। চারদিন ধরে সড়কে পলিথিনের তাঁবুতে আশ্রয় নেয়ায় পরিবারের উপার্জনক্ষম কেউ দিনমজুরি কাজে যেতে পারছে না। দুর্গত ওই পরিবারগুলোতে খাবার ও পানীয় জলের সঙ্কট ছাড়াও বেশির ভাগ পরিবার অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে বলে জানা গেছে। চকরিয়ার ইউএনও মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টিপাত বন্ধ থাকায় শুক্রবার থেকে সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, লক্ষ্যারচর, বরইতলী, হারবাং, ডুলাহাজারা, ফাঁসিয়াখালী, চিরিংগা, খুটাখালী ও পৌরসভার লোকালয় থেকে বানের পানি অনেকাংশে নেমে গেছে। কিন্তু উপকূলীয় সাহারবিল ছাড়া বিএমচর, কোনাখালী, পুর্ববড় ভেওলা, ঢেমুশিয়া, পশ্চিম বড়ভেওলা ও বদরখালী ইউনিয়নের জনসাধারণ এখনও পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। তিনি বলেন, ভারি বৃষ্টিপাত না হলে আজকালের মধ্যে প্রত্যেক এলাকা থেকে বন্যার পানি নেমে যাবে। এদিকে বৃহত্তর ঈদগাঁওসহ বন্যায় প্লাবিত এলাকাগুলো থেকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ভেসে উঠেছে রাস্তা-ঘাটের ক্ষতচিহ্ন। বন্যার প্রবল স্রোতে ল-ভ- হয়ে গেছে অধিকাংশ ঘরবাড়ি, অভ্যন্তরীণ সড়ক ও উপ-সড়কগুলো। চলাচল অযোগ্য হয়েছে পড়েছে বন্যা কবলিত এলাকার মেঠোপথ। ক্ষতিগ্রস্ত জালালাবাদ ইউনিয়নে ১২শ’ পরিবারের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান রাশেদের চাল বিতরণ করেছেন। মাছুয়াপাড়া, গোলপাড়া, মোহনভিলা পালাকাটার ৮ ও ৯নং ওয়ার্ড ছাতিপাড়া, পূর্বলরাবাক, দক্ষিণ লরাবাক ও চরপাড়া এলাকার গরিব ও দুস্থদের মধ্যে এসব ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। অপরদিকে ঈদগাঁওয়ের সঙ্গে ফরাজীপাড়া ও পোকখালীর এবং ঈদগড়ের সড়ক যোগাযোগ অদ্যবধি বিচ্ছিন্ন থাকায় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। জামালপুর ॥ জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। উপজেলা সাতটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে অন্ততপক্ষে ৩৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এসব ইউনিয়নের রোপা আমন ধান, বীজতলা, পাট, উঠতি ফসল ইক্ষু, কাঁচা সবজি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। শনিবার থেকে ২১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করেছে শিক্ষা বিভাগ। যমুনা নদীর পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে শনিবার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ৩৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বাড়িঘরে পানি ওঠায় বন্যাকবলিত পরিবারগুলো মানবেতন জীবনযাপন করছে। পশ্চিম বেলগাছা গ্রামের টিক্কা শেখ জানান, তার বাড়িতে পানি উঠেছে। রাস্তার ধারে আশ্রয় নিয়েছেন। রান্না করার উপায় নাই তাই তারা না খেয়ে আছেন। পাথর্শী ইউনিয়নের দেলিরপাড় গ্রামের আবদুস সামাদ জানান, বন্যায় মাঠে পানি ওঠায় গবাদিপশুর খাবার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। গরুর ঘাসের সমস্যায় পড়েছি। ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ বি এম এহছানুল মামুন শনিবার জানান, পানিবন্দী মানুষের জন্য ছয়টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা রয়েছে। ইতোমধ্যে যমুনার দুর্গম অঞ্চলের বন্যাকবলিত বেলগাছা ইউনিয়নের মন্নিয়া, বরুল, কুলকান্দি, সাপধরী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৫০০ পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়। সিলেট ॥ ধীরগতিতে নামছে বন্যার পানি। সুরমা-কুশিয়ারা এখনও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমতে থাকায় সিলেটে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এখনও অধিকাংশ এলাকায় পানিবন্দী জীবনযাপন করছেন মানুষ। বন্ধ রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান। তাছাড়া বন্যায় বিভিন্ন গ্রামের রাস্তাঘাট বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে দুর্গত এলাকার মানুষদের। ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগ। সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শহীদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, বন্যার পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে পানি পুরোপুরি না নামা পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে না। বন্যায় দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। এলজিআরডির নির্বাহী প্রকৌশলী এএসএম মহসীন জানান, বন্যায় সিলেটের ১১টি উপজেলায় ২২৬ কিলোমিটার রাস্তা তলিয়ে গেছে। এসব রাস্তার বিভিন্ন স্থান মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাস্তা মেরামতের জন্য প্রয়োজন প্রায় ৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ইতোমধ্যে বরাদ্দ এসেছে ২৫ কোটি টাকা। এছাড়া সড়ক ও জনপথের আওতাধীন ৬ কিলোমিটার রাস্তাও পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এদিকে বন্যা আক্রান্ত এলাকায় পানিবাহিত নানা রোগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ডায়রিয়া ও চর্মরোগ ছড়িয়ে পড়েছে। উপদ্রুত এলাকায় চিকিৎসা দিতে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পক্ষ থেকে ৬৮টি ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩২টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে।
×