ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টিভি নাট্য অঙ্গনে নতুন উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ৯ জুলাই ২০১৭

টিভি নাট্য অঙ্গনে নতুন উদ্যোগ

সাজু আহমেদ ॥ দেশীয় সংস্কৃতি অঙ্গনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম টেলিভিশন নাট্য অঙ্গন। বলা হয়ে থাকে দীর্ঘদিন ধরেই নানা অস্থিরতা বিরাজ করছে। এই অঙ্গনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে বিদ্যমান অস্থিরতা দূর করে একটি সুন্দর শিল্প মাধ্যম গড়ে তোলা এবং বাংলা নাটকের গুণগত ঐতিহ্য সমুন্নত রাখাতে কতিপয় বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত করেছেন সংশ্লিষ্ট অঙ্গনের তিন সংগঠনের নেতারা। সংশ্লিষ্ট তিন সংগঠনগুলো হলো টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ডিরেক্টরস গিল্ড এবং অভিনয় শিল্পী সংঘ। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন সিনিয়র শিল্পী, পরিচালক, প্রযোজকসহ অন্যরা সচেতন হলেই এ বিষয়ে শৃঙ্খলা আসবে, শিল্পীদের মর্যাদা ও পরিশ্রমের মূল্যায়ন হবে নচেৎ নয়। এক মাত্র তারাই পারে সব ঠিক করতে। রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে ৭ জুলাই শুক্রবার বিকেল ৩টায় তিন সংগঠনের নেতা ও শিল্পী-কলাকুশলীরা ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা চুক্তিনামা স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট নাট্যজন মামুনুর রশীদ। চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ইরেশ যাকের, ডিরেক্টরস গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক এস এ হক অলীক এবং অভিনয় শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন গাজী রাকায়েত, শহীদুল আলম সাচ্চু, এসএ হক অলিক, তৌকির আহমেদ। অনুষ্ঠানে তিন সংগঠনের নেতা-সদস্যদের সম্মতিতে তৈরি মোট সমঝোতা চুক্তির ৪৪টি ধারা পাঠ করেন শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম। পাঠ শেষে চুক্তির অসামঞ্জস্যতা নিয়ে সমালোচনা করেন উপস্থিত প্রযোজক, পরিচালক ও শিল্পীরা। এই চুক্তিপত্রের বেশ কয়েকটি ধারায় ভারসাম্যহীনতা খুঁজে পান তারা। অসামঞ্জস্যতা সংশোধন না করে চুক্তিতে আপত্তি জানান অনুষ্ঠানে আসা তিন সংগঠনের সদস্যরা। পরবর্তীতে চুক্তিতে সংশোধন আনা যাবে এই ঘোষণা দিয়ে চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করেন তিন সংগঠনের নেতারা। তবে অনেক নবীন শিল্পীরা অভিযোগ করেন-এই চুক্তিতে কোথাও সেসব শিল্পীর কথা ভাবা হয়নি যারা ইন্ডাস্ট্র্রিতে জুনিয়র বা পাসিং শর্টের শিল্পী হিসেবে পরিচিত হন। তাদের জন্য কোন শূটিং সেটে বিশ্রামের স্থানটুকু পর্যন্ত থাকে না। তারা বলেন নাটক বা টেলিফিল্ম নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সত্ত্বে¡ও চুক্তিতে নাট্যকারদের সংগঠনকে সংযুক্ত করা হয়নি। নাট্যকারদের সম্মানী কিভাবে কত নির্ধারণ করা হবে এবং একটি নির্মাণে তাদের দায়িত্ব বা জবাবদিহিতার বিষয়েও আলোচনা করা হয়নি। পাশাপাশি শিল্পীদের সম্মানী নির্ধারণের কোন সঠিক মানদ- বা উপায় উল্লেখ করা হয়নি। পরিচালকদের সম্মানীর বিষয়টিও পরিস্কার নয় বলে তারা অভিযোগ করেন। এদিকে অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০১০ সালের ২০ জুন প্রথম এই তিনটি সংগঠনের মধ্যে চুক্তি হয়। এই চুক্তিতে সবকটি পক্ষের জন্য নির্দিষ্ট আচরণ বিধি চূড়ান্ত করা হয়। তখন আশা করা হয়েছিল, এই চুক্তির ফলে তিনটি পক্ষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার মাঝে শৃঙ্খলা আসবে, পেশাদারিত্ব তৈরি হবে, কোন পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কিন্তু নানা কারণে এই চুক্তি কোন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। এবার সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সেই চুক্তি নতুন করে তৈরি করা হয়েছে। আগের চুক্তি থেকে অনেক কিছু বাদ দিতে হয়েছে, অনেক কিছু সংযোজন করতে হয়েছে বলে জানানো হয়। অনুষ্ঠানে প্রবীণ অভিনেতা ও নির্মাতা আবুল হায়াত বলেন, চুক্তির স্বার্থেই তা সংশ্লিষ্ট সবাইকে মেনে চলতে হবে, মেনে চলতে বাধ্য করতে হবে। আমি মনে করি চুক্তির শর্তগুলো সবাই মেনে চললে নাট্যাঙ্গনের অনেক উন্নতি হবে। সবাই মেনে চলার চেষ্টা করবেন বলে আশা করি। আমিরুল হক চৌধুরী বলেন, এই শর্তগুলোকে আমি সমর্থন জানাই। এগুলোর সঠিক মনিটরিং করার জন্য দাবি জানাচ্ছি। চঞ্চল চৌধুরী বলেন, নির্মাতাদের বলতে চাই চিত্রনাট্যের দিকে বেশি নজর দেবেন। আমি এই সমঝোতা চুক্তি মেনে চলার চেষ্টা করি। আগামীতে আপনারাও মেনে চলবেন। অনুষ্ঠানে ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি গাজী রাকায়েত বলেন, সংগঠনগুলোর নিস্ক্রিয়তার কারণে এতদিন স্মারকটি চূড়ান্ত হয়নি। সংগঠনগুলো এখন নিয়মিত কাজ করছে। আমরা এক হয়ে আমাদের শিল্প মাধ্যমকে এগিয়ে নিতে চাই। অনুষ্ঠানের সভাপতি মামুনুর রশীদ বলেন, তিনটি সংগঠনের মধ্যে চুক্তি হলেও পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট অন্য সংগঠনের সঙ্গেও আলোচনা করা হবে। টিভি চ্যানেলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা হবে। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন শর্মিলী আহমেদ, সাইদুল আনাম টুটুল, গাজী রাকায়েত, তৌকীর আহমেদ, শহিদুল আলম সাচ্চু, ইরেশ যাকের, আহসান হাবিব নাসিম, এস এ হক অলীক, চঞ্চল চৌধুরী ও করভী মিজান। নবীন পরিচালক সুমন রেজা বলেন আমাদের চুক্তিপত্রে উল্লেখিত সব বিষয়ই বাস্তবমুখী। এখন আরেকটি কাজ করতে হবে আমাদের সংঘটনগুলোর, চ্যানেলের সঙ্গে বসে, চ্যানেল যেন আমাদের কাছে স্টার ফুটেজ না চেয়ে নাটক চায়, তবেই আমরা ভাল নাটক নির্মাণ করতে সক্ষম হব। পাশাপাশি বিজ্ঞাপনী ঝামেলাটাকেও যতটুকু সম্ভব কমিয়ে ফেলতে হবে। নইলে যত ভাল কাজই হোক দর্শক তা দেখবে না। আর দর্শক না দেখলে কোন চুক্তিই কাজে আসবে না। ভাল কাজ হবে। কোন শৃঙ্খলাও আসবে না। প্রসঙ্গত : স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিজস্ব প্রযোজকরাই টেলিভিশন কাহিনিচিত্র নির্মাণ ও প্রযোজনা করতেন এবং বেসরকারিভাবে নির্মিত কোনো কাহিনিচিত্র বাংলাদেশটেলিভিশনে প্রচার হতো না। প্যাকেজের আওতায় ১৯৯২-৯৪ সাল থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের বাইরে নির্মাতারা কাহিনিচিত্র নির্মাণ শুরু করে ও প্রতি সপ্তাহে প্যাকেজ নাটক হিসেবে প্রচার হতে থাকে। সব মিলিয়ে দাঁড়িয়ে যায় টেলিভিশন শিল্প মাধ্যম। ১৯৯৯ সালে পেশাদারিত্বের সংকট নিরসনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে প্যাকেজ ফোরাম। এরপর একে একে প্রতিষ্ঠিত হয় অভিনয় শিল্পী সংঘ, টেলিভিশন নাট্যকার সংঘ, ডিরেক্টরস গিল্ড, টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসার এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ও ক্যামেরাম্যান এ্যাসোসিয়েশন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১০ সালের ২০ জুন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে একটি চুক্তি সই হয়।
×