ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মোস্তাফা জব্বার

একুশ শতক ॥ আমজনতার ডিজিটাল কড়া গণ্ডা

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ৯ জুলাই ২০১৭

একুশ শতক ॥ আমজনতার ডিজিটাল কড়া গণ্ডা

আজকালের বাঙালীরা কড়া আর গণ্ডা বা কড়ি চিনবেন এমনটি মনে করার কোন কারণ নেই। তবে এই বঙ্গদেশে এক সময়ে কড়া গ-ার হিসাবে লেনদেন হতো। জমিজমা টাকা পয়সা সবই এই ছকেই মাপা হতো। কড়ি দিয়ে কেনাকাটা হতো। বাঁশের কাঠি আর কড়ি গণনার হাতিয়ার ছিল। এই দেশেই পণ্যের বিনিময়ে পণ্যকে মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করে লেনদেন বা বেচাকেনা হতো। আমি আমার নিজের শৈশবে দেখতাম মা ধান দিয়ে হাঁড়ি পাতিল কিনছেন। চাল দিয়ে কাপড় কেনার স্মৃতিতো এখনও উজ্জ্বল। হাওড়ের কামলারা এখনও ধানে বেতন নেয়। সেই বাংলাদেশ এখন লেনদেনের বিষয়ে সবচেয়ে দ্রুত গতিতে সামনে যাচ্ছে। কড়া গ-া হয়ে গেছে কাগজবিহীন ডিজিটাল। এক সময়ে আমাদের দেশে সাহেবরা ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করতেন-বাকিরা হাতের কড় গুণে কাগজ বা ধাতুর মুদ্রায় আধুনিক হয়েছিলেন। দেশের কোন কোন স্থানে পাকিস্তানীদের ফেলে যাওয়া বা জাতীয়করণকৃত কয়েকটা ব্যাংকের সেবা পেতাম আমরা। এখন কয়েকটি সরকারী ব্যাংকের পাশাপাশি দেশী-বিদেশী বেসরকারী ব্যাংকের শাখা প্রত্যন্ত অঞ্চলেও পৌঁছেছে। কিন্তু তাতেও দেশের অতি সামান্য সংখ্যক লোকই ব্যাংকিং সেবা পায়। তবে এখন ব্যাংকিং সেবার সবচেয়ে বড় বিপ্লবটার নাম মোবাইল ব্যাংকিং। প্রত্যন্ত অঞ্চলের যে কোন মানুষ এক কথায় বলে, টাকাটা বিকাশ করে দাও। অথবা বলে টাকা রকেটে পাঠাও কিংবা শিওর ক্যাশে ফিসটা জমা দিয়ে দাও। বিশ্বের খুব কম দেশই এই বিপ্লবটা সম্পন্ন করতে পেরেছে। খুব কম দেশের মানুষই এভাবে ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রয়োগ ও গ্রহণ করতে পেরেছে। খুব সাম্প্রতিককালে শিওর ক্যাশ এই খাতেই একটি অসাধারণ বিপ্লব করেছে। আসুন একটু লক্ষ্য করে দেখি সেই বিপ্লবটা কি? এটি আসলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তি বিতরণ। আমি এই বিপ্লবের যেটুকু তথ্য পেয়েছি তার কিছুটা এখানে তুলে ধরছি। শুরুতেই যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলব তা এই বিপ্লবের নায়ককে নিয়ে। অনেকেই হয়ত জানেন যে, আমি ৮৭ সালে আমার তথ্যপ্রযুক্তি জগতের সূচনা করি। কম্পিউটারে কম্পোজ করা বাংলা পত্রিকা আনন্দপত্র প্রকাশের মধ্য দিয়ে আমি এই যাত্রার সূচনা করি। সেই সময়েই বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির জন্ম হয়। সেই সূত্রে সমিতির চারবারের সভাপতি ও ১৪ বছরের নেতৃত্বের ইতিহাসটিরও জন্ম হয়। একই সূত্র আমাকে খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে ফয়জুল্লাহ খান নামক একজন সজ্জন মানুষের সঙ্গে পরিচয় করায়। মুক্তিযোদ্ধা ফয়জুল্লাহ সপরিবারে তার ভাইদের নিয়েই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসা করেন। নিজের প্রতিষ্ঠানে ভাই থাকা ছাড়াও ভাই ও ভাই-এর স্ত্রী এর আলাদা আইটি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। বিসিএসের সাবেক এই সভাপতির ভাই শাহাদাৎ খান এই শতকের প্রথম দিকে বিদেশ থেকে ঢাকা ফিরে আসেন। ফয়জুল্লাহ শাহাদাতকে পরিচয় করিয়ে দিলে তার সঙ্গে আমার বড় ভাই-ছোট ভাই এর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। শাহাদাৎকে আমি বেশি মনে রাখছি এজন্য যে ২০০৮ সালে আমরা যখন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ শব্দটি যুক্ত করি তখন স্থপতি ইয়াফেস ওসমান ২৩ ডিসেম্বর ২০০৮ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিষয়ক প্রথম সেমিনার আয়োজন করলে তাতে আমার মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন শাহাদাৎ। দেশটির ডিজিটাল রূপান্তর যে কতটা প্রয়োজন এবং সেটি যে অনিবার্য সেটি শাহাদাৎ সেদিন তুলে ধরেন। একটি অসাধারণ যৌথ পরিবারের অংশীদার এই পরিবারটি মাওয়া সড়কের সাধারণ মানুষের সঙ্গে পৈত্রিক ভিটার মাধ্যমে সম্পৃক্ত। শাহাদাৎ খুব সঙ্গত কারণেই সাধারণ মানুষ যেন ডিজিটাল বিপ্লবের অংশীদার হতে পারে সে জন্য কাজ করতে থাকেন। কিছুদিন পরে শাহাদাৎ জানালেন তার কাজের ক্ষেত্র মোবাইল ব্যাংকিং। শিওর ক্যাশ নামক একটি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছেন তিনি। তারই হাত ধরে আমরা প্রথম নেটিজেন আইটি লিমিটেডের স্কুল ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার প্রচলনে সক্ষম হই। এই ব্যবস্থায় ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলের বেতন বা ফিস জমা দিতে পারে। এর পরই এই বছরের মার্চ মাসে শাহাদাৎ দেশের কোটি মায়ের জীবনকে সহজ করার এক অসাধারণ বিপ্লবের নায়কে পরিণত হন। আজ আমরা সেই বিপ্লবটাকেই ছোট আকারে দেখব। প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তি প্রকল্প প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানো, উপস্থিতি ধরে রাখা এবং শিক্ষার মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। সারাদেশে প্রায় ৬০ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থী এই প্রকল্পের আওতাভুক্ত। এই উপবৃত্তি সাধারণত তিন মাস পর পর ছাত্র-ছাত্রীর মায়েদের কাছে পৌঁঁছে দেয়া হয়। অতীতে মায়েরা উপবৃত্তি বিতরণ কেন্দ্রে লাইনে দাঁড়িয়ে উপবৃত্তির টাকা গ্রহণ করতেন। এজন্য অনেক পথ হেঁটে বিতরণ কেন্দ্রে যেতে হতো এবং এতে কয়েক ঘণ্টা সময় লেগে যেত। ব্যাংক অফিসারদের ঝুঁকি নিয়ে নগদ টাকা বহন করে প্রত্যন্ত গ্রামে যেতে হতো এবং অনেক সময় এই টাকা বিতরণের ক্ষেত্রে নানা রকমের ত্রুটি-বিচ্যুতি এবং অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যেত। এ উপবৃত্তি কার্যক্রম আরও দ্রুত, নির্ভুল এবং স্বচ্ছ করার জন্য সরকার রূপালী ব্যাংক শিওরক্যাশ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে উপবৃত্তি বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়। এই প্রেক্ষিতে চলতি অর্থবছরের ১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপালী ব্যাংক শিওরক্যাশের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সাহায্যে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সারাদেশে প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা বিতরণ কর্মসূচী উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী ট্যাবের সুইচ চেপে এই কার্যক্রম উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে সারাদেশের ১ম থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত ১ কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থীর মায়ের মোবাইল ফোনে উপবৃত্তির টাকা পৌঁছে যায়। সেই সময়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন-‘এই প্রকল্প শুধু এই দেশেরই নয়, বিশ্বের সর্ববৃহৎ ডিজিটাল পেমেন্ট প্রোগ্রাম। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ ব্যাংকিং সুবিধা পাচ্ছেন, যা আর্থিক অন্তর্ভুক্তির একটি বড় নিদর্শন এবং এই সরকারের একটি বড় সাফল্য।’ উপবৃত্তির টাকা বিতরণের জন্য গত বছরের জুনে রূপালী ব্যাংক ও শিওরক্যাশের সঙ্গে চুক্তি করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সারাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মায়েদের মোবাইল ব্যাংকিং এ্যাকাউন্ট খোলার ফরম পাঠানো হয়। এতে মা/অভিভাবকের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সেই ফরমগুলো হাইস্পিড স্ক্যানারে স্ক্যান করে ইন্টেলিজেন্ট ক্যারেক্টার সফটওয়্যারের সাহায্যে ডেটাবেজ তৈরি করা হয়। এই ডেটাবেইস ব্যবহার করে শিওরক্যাশের তৈরি করা সফটওয়্যারের সাহায্যে এই টাকা পাঠানো হচ্ছে। ডেটাবেজের সাহায্যে প্রতিটি শিক্ষার্থীর হিসাব খোলা হয়েছে মায়েদের মুঠোফোন নম্বর দিয়ে এবং মায়েদের মুঠোফোন নম্বরেই উপবৃত্তির টাকা যাচ্ছে। এই উপবৃত্তির অর্থ মায়েরা স্থানীয় শিওরক্যাশ এজেন্ট থেকে সুবিধামতো সময় তুলে নিতে পারেন। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য নির্ধারিত পুরো টাকাই পাচ্ছেন মায়েরা। টাকা তোলার সময়ও কোন ধরনের চার্জ বা ফি নেয়া হয় না। এই কার্যক্রমে সহায়তা করতে যে মায়েদের সিম নেই, তাঁদের বিনামূল্যে সিমকার্ড বিতরণ করেছে টেলিটক। এসব সিমে প্রতি মাসে ২০ টাকা করে টকটাইমও পান মায়েরা। এর ফলে উপবৃত্তি যে মায়েরা পান তাদের জীবনটাই বদলে গেছে। যেমন; ১) ঘরে বসেই উপবৃত্তির টাকা পাওয়া যায় ২) সংসারের কাজ ফেলে দূরবর্তী বিতরণ কেন্দ্রে যাবার ঝামেলা থাকে না এবং সময় নষ্ট হয় না ৩) প্রত্যেকে একটি মোবাইল ব্যাংকিং এ্যাকাউন্ট পায় যার মাধ্যমে সব ধরনের লেনদেন করা যায় যেমন টাকা জমানো, বিদেশী রেমিটেন্স গ্রহণ, বিল দেয়া বা মোবাইল ফোন রিচার্জ করা ইত্যাদি। এই মায়েরা কার্যত মোবাইল ফোনের জগতে প্রবেশ করে মধ্যস্বত্বভোগীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই টাকাটা পেতে পারেন। ব্যবস্থাটি সরকারের জন্য এনেছে একটি অসাধারণ সুবিধা। বৃত্তির টাকা মায়েদের হাতে হাতে পৌঁছানোর জন্য বস্তুত বাড়তি কোন চেষ্টাই করতে হয় না। এই পদ্ধতিতে বিতরণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয় এবং ত্রুটি-বিচু্যুতি বা অনিয়ম দূর হয়। এর ফলে সরকারের কাছে ছাত্র-ছাত্রী, স্কুল ও অভিভাবকদের একটি বিশাল ডাটাবেজ সৃষ্টি হয়েছে। সরকার যে কোন সময়ে যে কোন প্রয়োজনে এই ডাটাবেজটি আপডেট করে এবং তাকে অন্য সেবা বা প্রয়োজনেও কাজে লাগাতে পারে। পাঠ্যবই বিতরণ, বিদ্যালয়ের শিক্ষার ফলাফল পর্যালোচনা এবং অন্যান্য উন্নয়ন পরিকল্পনায় এই ডাটাবেজ ভবিষ্যতে ব্যবহার করা যাবে। কাগজের তালিকা দেখে প্রাপ্তি স্বীকারের পদ্ধতিতে এই বিপুল জনগোষ্ঠীকে উপবৃত্তির টাকা বিতরণ করতে যে বিড়ম্বনা ছিল তার ডিজিটাল সমাধানটি নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী আয়োজন। প্রকল্পটি কেমন সেটিও এক নজরে আমরা দেখে নিতে পারি। এই প্রকল্পের আওতায় আছে ১ কোটি ৩০ লাখ ছাত্র-ছাত্রী আছে। এই প্রকল্পে ১ কোটি সুবিধাভোগী মা আছেন। আছে ৬০,০০০ প্রাথমিক বিদ্যালয়। গ্রাম রয়েছে ৮০,০০০। বছরে এই প্রকল্পে বিতরণ হয় ১৪০০ কোটি টাকা। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে উপবৃত্তি প্রদানে সরকারের শতকরা ১৫ ভাগ অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। উপবৃত্তির অর্থ পুরোটাই একবারে না তুলে অনেক মা কিছু টাকা জমা রাখছেন। সারাদেশে প্রায় ১ লাখ ২৭ হাজার এজেন্টের কাছ থেকে টাকা তোলা যাচ্ছে। মা তার সময় মতো যখন তখন টাকা তুলতে পারছেন। আগে প্রায় ১৫,০০০ কেন্দ্রের মাধ্যমে নির্দিষ্ট দিনে টাকা পাওয়া যেত। বস্তুত মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা সাধারণ মানুষের জন্য জীবনকে কতটা সহজ করেছে উপবৃত্তি বিতরণের জাতীয় ব্যবস্থা তার একটি দৃষ্টান্ত মাত্র। আমি অবাক হই না যখন আমার বাসার গৃহকর্মী মনোয়ারা তার গ্রামে থাকা মায়ের কাছে বেতনটা পৌঁছে দিতে তার মোবাইল হিসাবটাকে ব্যবহার করে। কিংবা কেউ একজন বিজয় কেনার জন্য টাকাটা আমাকে মোবাইলেই পাঠিয়ে দেয়। যারা ডিজিটাল বাংলাদেশের দৃশ্যমানতা চোখ থাকতেও দেখেন না তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেব যে দিনে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা এই ব্যবস্থায় লেনদেন হয়। মাসের বা বছরের হিসাবটা নিজে করে নিন। কেবল তো সেটাই নয়, এর সিংহভাগ ব্যবহার করে সেইসব মানুষ যারা ডিজিটাল শব্দের মানেও বোঝেন না। যারা ব্যাংক নামক কিছু দেখেনও না। দেশে ১৩ কোটি মোবাইল সংযোগ যে একটি কার্যকর জীবনধারা তৈরি করে দিয়েছে সেটি সম্ভবত নতুন করে ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন হবে না। আমি এই ক্ষেত্রে শাহাদাতের নামটি আরও একবার উচ্চারণ করব এজন্য যে, আমাদের দেশের কৃতী সন্তানরা দেশটিকে ডিজিটাল করার জন্য বিদেশের লোভনীয় সুখের জীবন ছেড়ে দেশে এসে বিপ্লবের নায়ক হচ্ছেন সেটি সকলের জন্যই গর্ব করার মতো বিষয়। ধন্যবাদ শাহাদাৎ- ছোট ভাইটি। আম জনতার কড়া ক-াকে ডিজিটাল করার জন্য আবারও তোমাকে অভিনন্দন। ঢাকা, ৭ জুলাই, ১৭ লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যার এর জনক [email protected],
×