ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিবাহ ভাগ্য

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ৯ জুলাই ২০১৭

বিবাহ ভাগ্য

বিবাহ ভাগ্য বুঝি তার জন্য সুপ্রসন্ন হয়েছে। দিয়েছে কপাল খুলে। কাড়ি কাড়ি অর্থ এখন তার ঝুলিকে উপচে দিতে যাচ্ছে। এমনিতেই কর ফাঁকি দেয়ার অভিযোগে একুশ মাসের সাজার দ- ছিল। এই রায়ের দিন কয়েক পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন। শেষতক তাকে জেলে যেতে হচ্ছে না। জরিমানার অর্থ পরিশোধের মাধ্যমে সেই সাজা এড়ানো যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বিশ্ব ফুটবল ইতিহাসের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া খেলোয়াড় বনে গেছেন তিনি। বিপ্লবী চেগুয়েভারার জন্মস্থানেই জন্ম নেয়া বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার ‘গোল্ডেন বয়’ পাওয়া ফুটবলার লিওনেল মেসি। বিবাহ শেষে মধুচন্দ্রিমা শেষ হতে না হতেই অর্থভাগ্য আলোকিত হয়ে উঠল। যে বার্সিলোনা ফুটবল দলে তার খেলোয়াড়ি জীবন শুরু, সেখানেই তিনি শনৈঃ শনৈঃ ক্রীড়ানৈপুণ্যের মাধ্যমে নিজস্ব অবস্থান পাকাপোক্ত করেছেন এমনভাবে যে, দল তার ওপর সর্বাধিক নির্ভরশীল। বিশ্বখ্যাত এই ফুটবল তারকা ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে এক ম্যাচে পাঁচ গোলের কীর্তি গড়েছিলেন। এ পর্যন্ত রেকর্ড পাঁচবার বর্ষসেরা পুরস্কার জয়। এখন পর্যন্ত পাঁচ শ’ তিরাশি ম্যাচে করেছেন রেকর্ড পাঁচ শ’ সাত গোল। জিতেছেন ত্রিশটি শিরোপা। বল যেন তার পায়ে পায়ে ঘোরে। আর পায়ের জাদুতে তিনি অনায়াসে বল গোলপোস্টে প্রবেশ করিয়ে দিতে পারেন। বহুত ক্যারিশমা তিনি প্রদর্শন করেছেন প্রতিটি খেলায়। ফুটবলারদের মধ্যে সবচেয়ে বড় আয়োজনের মাধ্যমে শৈশবের খেলার সঙ্গী এ্যান্ডোলা রোকুজ্জকে আনুষ্ঠানিকভাবে জীবনসঙ্গী বানালেন বার্সেলোনা ক্লাবের আর্জেন্টাইন তারকা আধুনিক যুগের সেরা ফুটবলার মেসি। বর্তমান বিশ্বের নামী-দামী এই ফুটবলার দুই দশকের সম্পর্ক রোকুজ্জর সঙ্গে গত দশ বছর ধরে একই ছাদের নিচে বসবাস করছেন। তাদের ঘর আলো করে ফুটফুটে দুটি সন্তান চার বছর বয়সী থিয়াগো এবং এক বছর বয়সের মার্তেও আসে। এতদিন পর এসে তারা উপলব্ধি করলেন ধর্মীয় এবং আইনগতভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে। দু’সন্তানের জনক-জননীর এই বিবাহ আসর বিশ্বজুড়ে বেশ আলোচিত; একই সঙ্গে আলোকিতও বটে। ফুটবলমোদীরা বেশ মজাই পেয়েছেন, উৎফুল্ল হয়েছেন মেসির গোল দেখে যেমনটা হয়ে থাকেন। বলা হচ্ছে, শতাব্দীর সেরা বিয়ে। অবশ্য মেসির পিতা বলেছেন, এটাই মেসির জীবনের সবচেয়ে বড় ম্যাচ। কিন্তু কেন সেরা বিয়ে সে ব্যাখ্যা মেলে না সেভাবে। বাঙালীর দৃষ্টিতে সেরার সংজ্ঞা ভিন্ন। হাজার হাজার অতিথির আগমন। আতশবাজি পোড়ানো, ভূরিভোজনের আয়োজন, উপহার সামগ্রীর বিশাল স্তূপ, সঙ্গীতের মূর্ছনা থাকলে তবেই সেরার তকমা দেয়া যায়। আড়াই বিলিয়ন অর্থ ব্যয়ের এই বিয়েতে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন মাত্র দুই শ’ ষাটজন। অধিকাংশই সতীর্থ ফুটবলার। অবশ্য বর-কনের পিতা-মাতারাও ছিলেন। অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনসহ আমন্ত্রিত হননি মেসির একদা কোচ গুরু ম্যারাডোনাসহ অন্য কোচরা। বিষয়টি চাপা দিতে ম্যারাডোনা অবশ্য বলেছেন, ডাক বিভাগের ভুলে বিয়ের কার্ড তার হাতে পৌঁছেনি। এই টুইটার, ইমেইল, এসএমএস যুগে ডাক বিভাগের ব্যবহার তেমন নেই যদিও। বিয়ের আসরে মন্ত্রী, আমলা, গণ্যমান্য ব্যক্তিদের চেহারা দেখা যায়নি। কারও শুভেচ্ছাবাণী আসেনি। সংবাদপত্রে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়নি। তবে ঢের প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে বিয়েকে কেন্দ্র করে। সেদিক থেকে সেরা অবশ্যই। বিয়ের মন্ত্র না পড়ে একই ছাদের নিচে একত্রে বসবাসের নজির পুরনো। কিন্তু বৈধতা দানের বিষয়টি থেকে যায় সম্পদের উত্তরসূরি হবার ক্ষেত্রে। তাই আনুষ্ঠানিকতার গুরুত্ব বাড়ে। মেসির বিয়েটাকে সেরা বলা যায় তাদের দুই ভাগ্যবান পুত্রের কারণে। বাবা-মার বিয়েতে প্রধান আকর্ষণ তো ওরাই। বিশ্বখ্যাত বাবা-মার বিয়ে দেখার সৌভাগ্য ক’জনেরইবা হয়। শুধু তাই নয় ভাগ্যবান পুত্রদ্বয় বিবাহ শেষে বাবা-মায়ের সঙ্গে ক্যারিবীয় দ্বীপপুুঞ্জে হানিমুনেও গেছে। বিষয়টি মজার না! ব্যক্তিগত বিমানে চড়ে তাদের এই যাত্রা সেরা ঘটনা বৈকি। বিবাহিত জীবনযাপনে অভ্যস্ত মেসি-রোকুজ্জর আনুষ্ঠানিক বিয়ে হয়নি এতদিন। সেই আনুষ্ঠানিকতা রাজকীয়ভাবে সারলেন ফুটবলের রাজপুত্র। পায়ে পায়ে বল নিয়ে ড্রিবলিং-ট্রিপলিং শেষে গোলপোস্টে সটান পাঠিয়ে দেয়ার মতো শক্তিমত্তা অর্জনকারী মেসির বিয়েকে এবং বিবাহিত জীবনকে স্বাগত জানাই। মেসি, তার স্ত্রী ও পুত্রদ্বয় অবশেষে সুখে-শান্তিতে বসবাস করুনÑ এটাই কামনা।
×