ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাশেদ রউফ

ঈদের ছুটিতে

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ৮ জুলাই ২০১৭

ঈদের ছুটিতে

মন ভাল নেই সাদিয়ার। কেন ভাল নেই? এখন তো স্কুলে যেতে হয় না। ছুটি চলছে। তবু কেন ভাল নেই তার মন? কারণ স্কুল খুললেই পরীক্ষা। পরীক্ষার ভয় কার নেই? সাদিয়া পড়ছে রাজধানীর নামকরা একটা স্কুলে। ক্লাস ফাইভে। স্কুলের নিয়ম খুব কড়া। পড়াশোনায় কোন ফাঁকি নেই। শিক্ষকরাও ভীষণ কড়া। সব কিছু ভাল। তবু যেন আনন্দ নেই স্কুলে। রোজা ও ঈদের ছুটিটাও কম দেওয়া হয়েছে। ছুটি আর ক‘টা দিন বাড়িয়ে দিলে কী অসুবিধা হতো? ঈদের দুদিন পরেই খুলে যাবে স্কুল। ঈদের ছুটি মানে তো আনন্দ করা! বন্ধুদের সঙ্গে বেড়ানো। মা-বাবার সঙ্গে দূরে কোথাও যাওয়া। কিন্তু ছুটি শেষ হলে কি বেড়ানো যায়? সাদিয়া বহু আগে থেকেই ভেবে রেখেছিল ঈদের ছুটিতে বাবার সঙ্গে নানা বাড়িতে যাবে। নানা বাড়ি নওগাঁ। খুব সুন্দর শহর। তেমন ঝামেলা নেই। হইচই নেই। যানজট নেই। শান্ত একটা জায়গা। ওখানে গেলে আসতে ইচ্ছে করে না তার। এখন চলছে আমের মৌসুম। বাবার খুব প্রিয় ফল। আম পেলে বাবা আর অন্য কিছু খেতে চান না। ভাতও না। শুধু আম। আমের মৌসুমে নওগাঁ বেড়াতে গেলে বাবা যেমন খুশি হন, তেমনি নানুরাও খুশি। বাবার আম খাওয়ার আনন্দ দেখে ওদের আনন্দেরও সীমা থাকে না। সাদিয়া আবার তেমন খেতে চায় না। শুধু আম নয়, কোন ফলই তার প্রিয় নয়। ফল ছাড়াও অন্য কোন কিছু খাওয়ার প্রতিও তার কোন আগ্রহ নেই। এজন্য বাবা মার আফসোসের সীমা নেই। দেশের এক খ্যাতিমান মনোবিজ্ঞানী বাবাকে বলেছিলেন, খাবারেরও একটা ভারসাম্য রক্ষা করতে হয়। তুমি বেশি খাচ্ছ বলে তোমার মেয়ে কম খাচ্ছে। তুমি কম খাওয়া শুরু কর, দেখবে তোমার মেয়ে খাচ্ছে। মনোবিজ্ঞানীর কথায় বাবা কম খাওয়া শুরু করেছিলেন। প্রায় মাসখানেক দেখে আবার পুরনো রীতি ধরলেন। দেখলেন Ñতিনি কম খেলেও মেয়েটা ঠিক আগের মতই। কোন খাবারের প্রতি তার কোন আগ্রহ নেই। বহু কষ্ট করে মা তাকে খাওয়ান। অন্তত যতটুকু পারেন। আমের মৌসুমে বাবা নওগাঁ যেতে পারতেন সাদিয়াকে নিয়ে। কিন্তু বাদ সাধল ওই স্কুল। ছুটি তো নেই। ঢাকা থেকে নওগাঁয় কি দিনে দিনে গিয়ে দিনে দিনে আসা যায়? বেড়াতে গেলে অন্তত দু’তিন দিন না থাকলে চলে? বাবা সাদিয়ার মনের খবর রাখেন। সাদিয়ার মন কী করলে ভাল থাকে, বাবা তা জানেন। বাবা বললেন, Ñচিন্তার কিছু নেই। ঈদের দিন তোমাকে নিয়ে সারা শহর ঘুরব। বাবার কথায় সাদিয়ার মন ভাল হয়ে যায়। মেঘ সরে যেতে থাকে মনের আকাশ থেকে। ফর্সা হয়ে যায় মুখ। সাদিয়া অপেক্ষা করছে সেই ঈদের জন্য। বাবা বলে দিয়েছেন পরীক্ষার জন্য টেনশন না করতে। মাকেও বেশি চাপ না দিতে আকারে ইঙ্গিতে বলে দেওয়া হয়েছে। সাদিয়ার বাবা নাকি সবার সেরা বাবা। বাবা বুঝে যান সাদিয়ার সব কিছু। বাবার সামনে বার বার কবিতাটি তাই পড়তে চায় সে : ‘আমার বাবা অনেক বড় মানুষ আকাশ জোড়া হয়ত তবু নয়কো দূরের ফানুস বাবা আমার সত্যি কাছের মানুষ’। বাবা সাদিয়াকে সব সময় আনন্দে রাখতে চান। হাসিখুশি। বাবা নিজেও হাসিখুশি থাকেন। মা কখনও মন খারাপ করলে বাবা তাঁকে হাসানোর খুব চেষ্টা করেন। সাদিয়াও যোগ দেয় বাবার সঙ্গে। বাসায় এসে প্রতিদিন রাতে বাবা কোন কোন হাসির গল্প শোনাবেন। বাবা মানে আনন্দের ফেরিওয়ালা। দেখতে দেখতে চলে এলো ঈদ। আগের দিন সন্ধ্যায় চাঁদ দেখার চেষ্টা করেছিল সাদিয়া। কিন্তু মেঘের কারণে সে চাঁদ দেখতে পায়নি। টেলিভিশনে পায় চাঁদ দেখার সংবাদ। ভাল লাগছে তার। বাবার সঙ্গে আজ ঢাকা শহরে ঘুরবে। মন আজ খুশিতে আটখানা। বাবা সকালেই বলে রেখেছেন ঈদের নামাজ পড়ে এসে বেড়াতে বের হবেন। বাবা কথা ঠিক রাখলেন। মেয়েকে নিয়ে বের হলেন। রাস্তায় নেমেই সাদিয়ার সঙ্গে বাবাও আত্মহারা। প্রতিদিনের দেখা ঢাকা শহর আজ অন্য রকম। বাবার মুখে চলে আসে কবিতার লাইন : সারি সারি গাড়ি, এলোমেলো গাড়ি হাওয়া হয়ে গেছে সব হাওয়া হয়ে গেছে এই নগরের কলরোল কলরব। এত বড় ঢাকা নিমিষেই ফাঁকা! কীভাবে এমন হলো বিশাল ওলোট পালোট দেখে চোখ করে টলোমলো। আনন্দে নেচে ওঠে মন। বাবা বলেনÑ আজ সারাদিন বেড়াব। বাবার কথায় সাদিয়াও খুশি। বাবা রিকশায় ওঠেন সাদিয়াকে নিয়ে। ফাঁকা রাস্তায় রিকশা করে বেড়ানোর মজাটাই আলাদা। আজ সব রাস্তায় রিকশা চলতে পারছে। বাধা নেই। ভিআইপি সড়কগুলো রিকশাকে অভিবাদন জানাচ্ছে। শাহবাগ জাদুঘর টিএসসি দোয়েল চত্বর কার্জন হল হাইকোর্ট মাজার প্রেসক্লাব সচিবালয় তোপখানা মতিঝিল শাপলা চত্বর। সব এলাকা ঘুরে এবার উঠলেন বাসে। নামলেন মিরপুর চিড়িয়াখানা। চিড়িয়াখানায় আজ খুব ভিড়। পুরো শহর ফাঁকা হলেও এখানে প্রচুর মানুষ। সাদিয়ার মতো অনেকে এসেছে তাদের মা বাবাকে নিয়ে। হেঁটে হেঁটে ঘুরে ঘুরে দেখতে অনেক সময় লাগে। বাবা মাঝে মাঝে সাদিয়ার কাছে জানতে চানÑ কিছু খাবে কিনা! ক্লান্ত লাগছে কিনা! কিসের ক্লান্তি? মন আজ আনন্দে ডানা মেলে উড়ছে। মাথায় নেই স্কুল। নেই পড়ালেখার চিন্তা। নেই পরীক্ষার ভয়। চিড়িয়াখানার ময়ূরের মতো পেখম মেলে নাচতে ইচ্ছে করছে তার। যেদিকে চোখ যায়, চিড়িয়াখানার জীবজন্তুরা তাদের হাতছানি দিচ্ছে। বাবা সাদিয়ার আনন্দটা অনুভব করতে পারছেন। মনে মনে ভাবেনÑ আজকের এই দিনটির মতো যদি প্রতিটি দিন হতো, তাহলে মেয়েটার মন খারাপ থাকত না। স্কুলটা যদি হতো আনন্দের, তাহলে কী মজাটাই না হতো! অলঙ্করণ : আইয়ুব আল আমিন
×