ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

টাকার অভাবে জাবি শিক্ষার্থীর লেখাপড়া বন্ধের পথে

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৮ জুলাই ২০১৭

টাকার অভাবে জাবি শিক্ষার্থীর লেখাপড়া বন্ধের পথে

রাজুমোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম ॥ মোঃ এনামুল হক। জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের (জাবি) দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র। রোল-১০৩২। শহীদ সালাম বরকত হলের গণরুমে থাকে। সাড়ে পাঁচ মাস তার ক্যাম্পাস জীবন। হতদরিদ্র মেধাবী এনামুল অদম্য ইচ্ছাই এতদূর এসেছে। আর কোনভাবেই নিজে পড়ালেখার খরচ চালাতে পারছে না। তার বৃদ্ধ দিনমজুর বাবা বলে দিয়েছেন তার সামর্থ্য নেই প্রতিমাসে টাকা দিয়ে তাকে লেখাপড়া শেখানোর। জীবনে প্রথম কুড়িগ্রামের বাইরে গিয়েছে এনামুল। সে জানায় কেউ যদি অন্তত তাকে দু-একটি প্রাইভেট পড়ানোর ব্যবস্থা করে দিতে পারেন তাহলেই সে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে। জীবনের সঙ্গে হররোজ যুদ্ধ করে চলছে মেধাবী এনামুল। জানে না আগামীতে কি হবে। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বক্ষতর গ্রামে তার বাড়ি। বাবা-মায়ের চার সন্তানের মাঝে এনামুল সবার ছোট। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি প্রচ- ঝোক তার। বাবার সঙ্গে দিনমজুরি করেও কোনদিন পড়াশোনা বাদ দেয়নি। শত কষ্টেও পড়াশোনা করেছে সে। তার জীবনে রয়েছে এক করুণ কাহিনী। এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে পর্দাথবিজ্ঞান পরীক্ষার দিন তার মা মারা যায়। মাকে মাটি দিয়ে সে পরীক্ষা দিতে যায়। তারপরও এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। তার জীবনের স্বপ্ন বিসিএস ক্যাডার সার্ভিস করার। কিন্তু আর্থিক দৈন্যর কারণে হয়তো জীবনের এ পর্যন্ত এসে বিশ^বিদ্যালয়েও পড়া সম্ভব হচ্ছে না। এনামুল জানায়, বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সময় ঢাকার জনৈক্য ব্যক্তি তাকে ১৫ হাজার টাকা এবং জেলা পরিষদ থেকে ১৫ হাজার টাকা অনুদান দিয়েছিল। তা দিয়ে ভর্তি এবং কয়েক মাস ক্যাম্পাসে চলছি। এবার ঈদে বাড়িতে এসে বিশ^বিদ্যালয় যাওয়ার বাসের টিকিটের পর্যন্ত টাকা নেই তার। জানে না ক্যাম্পাসে কি খাবে কিভাবে চলবে। তার বাবা মোঃ ঝলদ্দি জানান, বয়সের ভারে চোখেও কম দেখি আর কাজও করতে পারি না। আমার কোন জমিজমাও নেই। এ অবস্থায় তিন ছেলে তাকে ছেড়ে চলে গেছে। সে মানুষের সাহায্যের ওপর চলে। এনামুল তার ছোট ছেলে। ছোটবেলা থেকে পড়াশোনার প্রতি খুব আগ্রহ তার। বাবা হিসেবে একবেলা ঠিকমতো পেটপুরে খাবারও দিতে পারিনি ছেলেটিকে। ও নিজের চেষ্টায় এতদূর গেছে। আমি নিরুপায়।
×