ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুরগি, চিনি, ছোলা রসুন নিম্নমুখী

আমদানির চাল আসতে শুরু করেছে, দামও কমছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৮ জুলাই ২০১৭

আমদানির চাল আসতে শুরু করেছে, দামও কমছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আমদানিকৃত চাল আসতে শুরু করায় চলতি সপ্তাহ নাগাদ খুচরা বাজারে দাম কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা দেখা দিলেও চালের দাম নতুন করে বাড়ার কোন খবর পাওয়া যায়নি। বরং ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজধানীর পাইকারি বাজারে আমদানিকৃত চাল আসা শুরু হয়েছে। এসব চাল খুচরা পর্যায়ে বিক্রি শুরু হলে দাম পড়ে যাবে। চালের পাশাপাশি ব্রয়লার মুরগি, চিনি, ছোলা এবং রসুনের দাম কমতে শুরু করেছে। তবে মাছ ও শাক-সবজির দাম আরও বেড়েছে। এছাড়া ভোজ্যতেল, ডাল, পেঁয়াজ ও আটা বিক্রি হচ্ছে আগের দামে। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে নিত্যপণ্যের দরদামের এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে, কয়েকদিনের টানা ভারিবর্ষণ এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা দেখা দেয়ায় সবজিক্ষেত নষ্ট হয়েছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। এতে করে রাজধানীতে সব ধরনের সবজির দাম বেড়ে গেছে। সবজির পাশাপাশি মাছের দামও বেড়ে গেছে। প্রতিবর্ষায় মাছের দাম কমলেও এবার দাম বাড়ছে। প্রতিকেজি ছোট চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায়। এছাড়া মাঝারি সাইজের প্রতিকেজি চিংড়ি ৮০০-১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। বেড়েছে ইলিশ মাছের দাম। মাঝারি সাইজের প্রতিজোড়া ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২২০০ টাকায়। যদিও জাটকা সাইজের প্রতিজোড়া ইলিশ ১ হাজার থেকে ১২শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দেশীয় জাতীয় সরপুঁটি, পাবদা, টেংরা, মৃগেল, রুই, কাতলা এবং তেলাপিয়া মাছের দামও চড়া। যদিও ঈদের পর চলতি সপ্তায় কিছুটা কমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৫০ টাকায়। ঈদের আগে এসব মুরগি ১৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। দাম কমে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬৪-৬৮ টাকায়। এছাড়া দেশী রসুন ৮০-১১০ এবং আমদানিকৃত ১২০-১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিলিটার ভোজ্যতেল খোলা ৮৪-৮৬ এবং পাঁচ লিটারের বোতল ৪৯০-৫২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। জাত ও মানভেদে প্রতিকেজি মসুর ডাল ৭০-১৪০, আটা ২৪-৩২ এবং পেঁয়াজ ২২-৩২ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। কাপ্তান বাজারের জামশেদ স্টোরের ম্যানেজার আবদুল গনি মিয়া জনকণ্ঠকে জানান, ঈদের আগে মুদি পণ্যের বিশেষ করে চিনি, ডাল, ছোলা, রসুনসহ কিছু পণ্যের দাম বাড়লেও এখন কমতির দিকে রয়েছে। রোজা শেষ হওয়ায় ছোলার চাহিদা অনেক কমে গেছে। এছাড়া ভোজ্যতেল, চিনি এবং ডালের বাড়তি যে চাহিদা তৈরি হয়েছিল সেটিও এখন নেই। ফলে জিনিসপত্রের দাম কমে যাচ্ছে। আমদানিকৃত চাল আসা শুরু দাম কমাতে বেসরকারী পর্যায়ে আমদানিকৃত চাল দেশে আসা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে পাইকারি বাজারে দাম কিছুটা কমলেও খুচরা বাজারে চলতি সপ্তাহনাগাদ দাম কমবে চালের। চলতি জুলাই মাসের প্রথম চার দিনেই ৬০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে, যা গেল অর্থবছরের পুরো সময়ের আমদানির প্রায় অর্ধেক। ঢাকার পাইকারি বাজারে দেশী চালের দাম কেজিতে এক থেকে দেড় টাকা পর্যন্ত কমেছে। আমদানি করা চালে কমেছে দুই থেকে আড়াই টাকা। তবে খুচরা বাজারে চলতি সপ্তাহে চালের দাম কমবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। যদিও টিসিবির সর্বশেষ বাজার দরে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকায় সরু চালে কেজিপ্রতি এক থেকে দুই এবং মোটা চালের দুই থেকে তিন টাকা কমার কথা বলা হয়েছে। রাজধানীর চালের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার বাদামতলী-বাবুবাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন জানিয়েছেন, সরকার শুল্ক কমানোয় আমদানি বাড়ায় চালের দাম কমতে শুরু করেছে। সারাদেশে চাল সরবরাহের জন্য পরিচিত দিনাজপুরেও চালের দাম কমেছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, নতুন অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের চার দিনেই প্রায় ৬০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সব মিলিয়ে এক লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছিল। তবে এখন পর্যন্ত যে চাল আমদানি হয়েছে তার পুরোটাই বেসরকারী পর্যায়ে। সরকারী পর্যায়ে আমদানির কোন চাল এখনও দেশে পৌঁছেনি। চালের মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরতে আমদানি বাড়াতে ঈদের আগে বিদ্যমান শুল্কহার ২৮ শতাংশ থেকে এক লাফে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয় সরকার। ঈদের ছুটির পর মূলত ১ জুলাই থেকে ১০ শতাংশ শুল্কে চাল আমদানি করছেন ব্যবসায়ীরা। বাবুবাজারের ভূঁইয়া রাইসের মালিক মনির হোসেন জানান, প্রতিদিন ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণে চাল দেশে আসছে। শুল্ক কমানোয় আমদানিকারকরা চাল আমদানি বাড়িয়ে দিয়েছে। যার ফলে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) মোটা চালের দাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কমেছে। আর সরু চালের দাম কমেছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। বাদামতলী-বাবুবাজার চালের আড়ত সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, প্রতিকেজি মোটা চাল (গুটি, স্বর্ণা, বিআর-২৮, পারিজা) ৪২ থেকে ৪৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগে এই চাল ৪৩ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৪৬ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল। আর সরু চাল (মিনিকেট, নাজিরশাইল) বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৫৩ টাকায়।
×