ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আদালতের মর্যাদা রক্ষা ও বিচার বিভাগকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে কাজ করছি ॥ সিনহা

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৮ জুলাই ২০১৭

আদালতের মর্যাদা  রক্ষা ও বিচার বিভাগকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে কাজ করছি ॥ সিনহা

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা, ৭ জুলাই ॥ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, একটি দেশের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলার উন্নতির দরকার। জনগণের নিরাপত্তা দরকার। এজন্য প্রয়োজন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত না হলে উন্নয়ন সম্ভব নয়। সারা পৃথিবীতে প্রশাসনে যারা কাজ করছেন, তারা প্রত্যেকেই আইনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। দেশ যত উন্নয়নের দিকে যাবে ততই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। আমি আদালতের মর্যাদা রক্ষা ও বিচার বিভাগকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য কাজ করছি। এ দেশের মানুষের সুখ-দুঃখের আশ্রয়স্থল বিচারালয় থেকে যাতে কেউ বঞ্চিত না হয়Ñ এটা আমার ঐকান্তিক কামনা। শুক্রবার বিকেলে কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির আয়োজনে কুমিল্লা আদালত অঙ্গন উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখায় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইসমাইলের সভাপতিত্বে ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেনÑ কুমিল্লার সদ্য বিদায়ী জেলা ও দায়রা জজ দেওয়ান মোঃ শফিউল্লাহ, ভারপ্রাপ্ত জেলা জজ বেগম জেবুন্নেছা, স্পেশাল জজ মোহাম্মদ ইসমাইল, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক আজিজ আহমেদ ভূঁইয়া, জননিরাপত্তা বিঘœকারী আদালতের বিচারক এবিএম জহিরুল কবির, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আজিজুর রহমান, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ হেমায়েত উদ্দিন, পিপি এ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান লিটন, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য এ্যাড. কাইমুল হক রিংকু, এ্যাড. জাফরুল আহসান, এ্যাড. সৈয়দ আবদুল্লাহ পিন্টু, এ্যাড. জহিরুল ইসলাম সেলিম, এ্যাড. তাইফুর আলম, এ্যাড. কাজী নাজমুস্ সাদাত, এ্যাড. আবদুল মমিন, এ্যাড. ফজলুর রহমান, এ্যাড. সৈয়দ নুরুর রহমান প্রমুখ। প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট জুডিসিয়ারি, রুল অব ল নিয়ে অনেকদিন কথা বলছি। এতে প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা অখুশি হয়েছেন। কিন্তু মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি উপলব্ধি করছেন। আইনের কিছু কিছু বিষয় নিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছি। আইনের দুর্বলতা কাটিয়ে তুলতে চেষ্টা করছি। সারাদেশে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে বিচারক সঙ্কট রয়েছে। মামলার জট কমাতে জেলাপর্যায়ে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে দুজন করে বিচারক নিয়োগ দেয়া হবে। এছাড়া এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এবং জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যক্রম নিয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে। সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত এ সমস্যা নিরসন করা হবে।’ প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, আমাদের দেশে উন্নয়নের চাবিকাঠি হচ্ছে ডিজিটালাইজেশন। ইউনিয়ন পর্যায়েও ডিজিটালের ছোঁয়া লেগেছে। আমাদের দেশ উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ৫শ’ টাকার নিচে এখন আর কোন শ্রমিক পাওয়া যায় না। ২-৩ বছর পর এ দেশের শ্রমিকরা আর বিদেশে কাজ করার জন্য যাবে না। অর্থনীতির দৌড়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিচার বিভাগকে ডিজিটালাইজেশন করতে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি এ বাজেটে এটি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছেন। সরকারকেও আমরা মেগা বাজেট দিয়েছি। ইতোমধ্যে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক থেকেও প্রস্তাব এসেছে। তিনি বলেন, বিচার বিভাগ ডিজিটালাইজেশন হলে মামলার তথ্য মনিটরের মাধ্যমে সবাই জানতে পারবে। একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে সেখানে মামলার তারিখ, মামলার রায়, জামিনের বিষয়সহ সব তথ্য প্রদর্শন করা হবে। বিচারকের রায়ের সার্টিফাইড কপিও আইনজীবীরা দ্রুত সরবরাহ করতে পারবেন। এ দেশের গ্রামাঞ্চলের ৮০ ভাগ মামলা হয় জেলাপর্যায়ের আদালতে। বিচারালয়ে যারা আসবে তারা এটাকে পবিত্র জায়গা হিসেবে মনে করবে। সব ধর্ম-বর্ণের লোকজনই আসে বিচারালয়ে। এ বিচারালয় হবে ‘টেম্পল অব জাস্টিস’। কুমিল্লার আদালত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ আদালতের উন্নয়নের জন্য একটি ভাল প্রজেক্ট দরকার। একটি মাস্টারপ্ল্যান করে প্রজেক্ট দিন। এর বাস্তবায়নে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। গত কয়েকদিন আগে এখানে জেলা ও দায়রা জজ পদটি শূন্য হয়েছে। এ সপ্তাহের মধ্যেই এ পদে নিয়োগ দেয়া হবে। এর আগে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বেলা ১১টার দিকে নগরীর কাপড়িয়াপট্টি এলাকায় শ্রীশ্রী চান্দমণি রক্ষা কালীমন্দির উদ্বোধন করেন।
×