ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কূটনীতিকদের ওপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাময়িক নিষেধাজ্ঞা

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে বাংলাদেশ মিশনে গৃহকর্মী নেয়া যাবে না

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৮ জুলাই ২০১৭

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে বাংলাদেশ মিশনে গৃহকর্মী নেয়া যাবে না

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশী কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে একের পর এক গৃহকর্মী নির্যাতনের মামলার প্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে বাংলাদেশী মিশনগুলোতে কূটনীতিকদের গৃহকর্মী নেয়ার ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। নতুন করে যেসব কূটনীতিক ওই দুই মহাদেশের কোন দেশে নিযুক্ত হচ্ছেন তাদের আর গৃহকর্মী নেয়ার অনুমতি দিচ্ছে না পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সূত্র জানায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত তিন বাংলাদেশী কূটনীতিকের ক্ষেত্রে একই ধরনের ঘটনায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এ কারণে এখন নতুন করে যেসব কূটনীতিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে বাংলাদেশের দূতাবাস বা মিশনে যাচ্ছেন তাদের আর গৃহকর্মী নেয়ার অনুমতি দিচ্ছে না মন্ত্রণালয়। এছাড়া সেখানে যারা গৃহকর্মী নিয়ে গেছেন তাদের পর্যায়ক্রমে তাদের গৃহকর্মীদের দেশে পাঠিয়ে দিতেও বলা হয়েছে। বাংলাদেশী মিশন প্রধান যেসব দেশে নিয্ক্তু হবেন, সেদেশের মানদ- অনুযায়ী তার বাসায় একজন পাচক রাখার একটি প্রস্তাব পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে এটি এখনও অনুমোদন পায়নি। আর গৃহকর্মীদের ইউরোপ বা আমেরিকার মানদ-ে বেতন না দিলে এ ধরনের মামলা আরও হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সে কারণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। গত তিন বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তিন বাংলাদেশী কূটনীতিকের বিরুদ্ধে গৃহকর্মী নির্যাতনের অভিযোগ করা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে নেয়া গৃহকর্মীরাই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। গৃহকর্মীকে নির্যাতন, শ্রমিক পাচার এবং মজুরি চাওয়ায় হত্যার হুমকির অভিযোগে গত ১৯ জুন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের ডেপুটি কনসাল জেনারেল শাহেদুল ইসলামকে গ্রেফতার করে যুক্তরাষ্ট্র পুলিশ। এর ৩৬ ঘণ্টা পর ৫০ হাজার ডলার বন্ডে জামিনে মুক্ত হন তিনি। এ ঘটনা ঘটতে না ঘটতেই তার দু’দিন পরেই একই ধরনের অভিযোগে গৃহকর্মীকে ঠকানো ও ভিসা জালিয়াতির অভিযোগে হামিদুর রশীদ নামে জাতিসংঘের এক বাংলাদেশী কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়। জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপির ডেভেলপমেন্ট স্ট্র্যাটেজি এ্যান্ড পলিসি এ্যানালাইসিস ইউনিটের প্রধান হামিদুর আড়াই লাখ ডলার বন্ডের বিপরীতে অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষরের পাশাপাশি পাসপোর্ট জমা দিয়ে গ্রেফতারের সাত ঘণ্টা পর জামিনে মুক্ত হন। নিউইয়র্কে বাংলাদেশের ডেপুটি কনসাল জেনারেল শাহেদুল ইসলামের বাসায় মোহাম্মদ আমিন নামে এক গৃহকর্মী কাজ করতেন। মোহাম্মদ আমিনকে বাংলাদেশ থেকে শাহেদুল ইসলাম নিজেই নিয়ে যান সেখানে। তবে চার বছর সেখানে কাজ করার পর বিনা মজুরিতে জোরপূর্বক কাজ করানোর ঘটনায় শ্রম পাচার ও নির্যাতনের অভিযোগ এনে গত বছর মে মাসে পুলিশের কাছে গিয়ে ঘটনার বিবরণ দিয়ে মামলা করেন আমিন। এক বছর আগের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হয়ে যান শাহেদুল। পরে জামিনে মুক্তি পান তিনি। ২০১৪ সালে ঠিক একইভাবে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মনিরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী ফাহিমা তাহসিনার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। সেই মামলা এখনও চলছে। তাদের গৃহকর্মী মাসুদ পারভেজ রানা অভিযোগ করেছিলেন, মাসে তিন হাজার ডলার বা বাংলাদেশী মুদ্রায় দুই লাখ ৩৩ হাজার টাকা বেতন ও ভাল কাজের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যান বাংলাদেশী ওই দম্পতি। কিন্তু বাস্তবে ওই পরিমাণ বেতন দেয়া হয়নি। বরং তাকে প্রতিনিয়ত নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। বিনা বেতনে তাকে আমানুষিক পরিশ্রম করানো হতো। এসব অভিযোগ করে ম্যানহাটন ফেডারেল আদালতে সে সময় গৃহকর্মী মাসুদ পারভেজ রানা ওই মামলাটি দায়ের করেন। সেসব অভিযোগ ছিল ভিত্তিহীন। ওই মামলা দায়েরের পর গৃহকর্মী মাুসদ পারভেজ রানা এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গ্রীন কার্ড পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পেয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেসব কূটনীতিক তাদের গৃহকর্মী হিসেবে যাদের নিয়ে যাচ্ছেন, তারাই পরে কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে উল্টো অভিযোগ করছেন। আর তাদের অভিযোগের কোন সত্যতা নেই। মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ নেয়ার জন্য তারা আদালতে গিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করছেন। আর এর ফলে ফেঁসে যাচ্ছেন কূটনীতিকরা। গৃহকর্মীকে নির্যাতন, শ্রমিক পাচার এবং মজুরি চাওয়ায় হত্যার হুমকির অভিযোগে গ্রেফতার হওয়ার ৩৬ ঘণ্টা পর জামিনে মুক্তি পান ডেপুটি কনসাল জেনারেল শাহেদুল ইসলাম। নিউইয়র্ক পুলিশ শাহেদুলকে নিজ বাসা থেকে গ্রেফতারের কয়েক ঘণ্টা পর কুইন্স সুপ্রিম কোর্টে হাজির করলে বিচারক ড্যানিয়েল লুইস ৫০ হাজার ডলারের বন্ড বা নগদ ২৫ হাজার ডলারে তার জামিন ঠিক করে দিয়েছিলেন। এরপর তিনি জামিনে মুক্ত হন। বিচারকের ঠিক করে দেয়া ৫০ হাজার ডলার বন্ডে তাকে মুক্ত করা হয়। নিউইয়র্কে বাংলাদেশী কূটনীতিককে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল বাংলাদেশ। কূটনীতিককে গ্রেফতারের ঘটনাটি কনস্যুলার সম্পর্ক বিষয়ক ১৯৬৩ সালের ভিয়েনা কনভেনশনের পরিষ্কার লঙ্ঘন বলেও অভিহিত করে বাংলাদেশ।
×