ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরে সুদখোরদের কাছে জিম্মি ঋষি সম্প্রদায়

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ৮ জুলাই ২০১৭

যশোরে সুদখোরদের কাছে জিম্মি ঋষি সম্প্রদায়

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ মণিরামপুর উপজেলার দোনার ভোজগাতি গ্রামের অনিল দাসের ছেলে উজ্জ্বল দাস। পূর্ব পুরুষের পেশা বাঁশের ঝুড়ি তৈরি করে সংসার চালান। সংসারে অভাব তাড়া করছে কোনভাবেই অভাব যাচ্ছে না। মাস কয়েক আগে মূলধন জোগাতে একই এলাকার আসাদ গাজীর কাছ থেকে নেন ২০ হাজার টাকা। এজন্য তাকে প্রতিমাসে ৩৩ শতাংশ হারে ছয় হাজার ৬০০ টাকা সুদ গুনতে হয় । ব্যবসায় মন্দাভাব থাকায় মাস দুয়েক সুদের টাকা পরিশোধ করতে পারেননি উজ্জ্বল। তাই সুদাসলে এখন দেনা দাঁড়িয়েছে ৩৭ হাজার টাকায়। এ টাকা পরিশোধে জমি বিক্রির জন্য উজ্জ্বল দাস কয়েক দিন সময় চেয়েছিলেন। কিন্তু তাকে সেই সময় না দিয়ে গত ১৯ জুন রাতে আসাদ গাজী ও তার দুই সহযোগী প্রচ- মারধর করেন। এখনও তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি। শুধু উজ্জ্বল দাস নয়, ঋণের চক্রবৃদ্ধি হারে চড়া সুদে বন্দী হয়ে পড়েছে দোনার ভোজগাতি গ্রামের দাসপাড়ার শতাধিক পরিবার। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা বদর উদ্দিন গাজী, তার ছেলে আসাদ গাজী ও ভাই জসিম উদ্দিন গাজীর কাছ থেকে নেয়া ঋণের শতকরা ৩৩ টাকা হারে সুদ দিতে না পারায় এসব নিম্ন আয়ের মানুষদের ওপর নির্যাতন চলছে। এ ব্যাপারে গত ২২ জুন মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ দেয়। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় তারাপদ দাসের ছেলে অশোক দাসের একটি কড়ই গাছ বিক্রি করে দিয়েছেন বদর উদ্দিন। এর আগে অনন্ত দাসের ছাগল ধরে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি তাকে প্রচ- মারধর করা হয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে যান হরিচাদ দাসের বাড়ি থেকে। প্রতিনিয়ত এমন নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে এ পল্লীর শতাধিক পরিবারের সদস্য নিরাপত্তা চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করে। আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২ জুলাই শুনানির জন্য দুই পক্ষকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ডাকা হয়। কিন্তু অভিযুক্ত পক্ষ শুনানিতে হাজির হয়নি। ভুক্তভোগীদের দাবি, ‘নিরাপত্তা চেয়ে প্রশাসনের কাছে আবেদন করার পর হুমকি দেয়া হচ্ছে। এখানকার শত শত মানুষ রাতে ঘুমাতে পারছে না। যে কোন সময় পল্লীতে হামলার আশঙ্কা করছে তারা।’ এ ব্যাপারে অভিযুক্ত বদর উদ্দিন গাজীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অতুল ম-ল বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর দুই পক্ষকে শুনানির জন্য চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে ভুক্তভোগীরা হাজির হলেও অভিযুক্তরা হাজির হয়নি। তারা ১০ দিনের সময় চেয়েছে। এর মধ্যে জবাব না দিলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×