ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বছরে গড়ে প্রাণ হারাচ্ছেন ৫০/৬০ ব্যক্তি

গ্যাস সিলিন্ডার, কম্প্রেসার সেপটিক ট্যাঙ্ক বিস্ফোরণের ঘটনা বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ৮ জুলাই ২০১৭

গ্যাস সিলিন্ডার, কম্প্রেসার সেপটিক ট্যাঙ্ক বিস্ফোরণের ঘটনা বাড়ছে

গাফফার খান চৌধুরী ॥ প্রতিবছর গড়ে গ্যাস সিলিন্ডার, কম্প্রেসার, বয়লার ও সেপটিক ট্যাঙ্ক বিস্ফোরণে ৫০ থেকে ৬০ জন প্রাণ হারায়। দগ্ধ হয় গড়ে চার থেকে ৫শ’। দগ্ধদের অধিকাংশই শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ দিন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে তিলে তিলে মারা যান। পরিবারগুলো পড়ে চরম আর্থিক সঙ্কটে। আর যারা বেঁচে থাকেন, তাদের অধিকাংশই চিরতরে পঙ্গু হয়ে যান। তবে বেঁচে থাকার হার শতকরা ১০ থেকে ১২। তারা আমৃত্যু পরিবারের বোঝা হয়ে থাকেন। হতাহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। গত দুই বছরে এ ধরনের বিস্ফোরণের সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ বিস্ফোরণ অধিদফতরের দীর্ঘ তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এমন তথ্য। এ অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে বিস্ফোরক অধিদফতর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বার বার চিঠি দিয়েছে। তাতেও তেমন সুফল আসছে বলে বিস্ফোরক অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে। বিস্ফোরক অধিদফতরের পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিদিনই কোন না কোনভাবে কারও না কারও বা একাধিক ব্যক্তির দগ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটছে। এরমধ্যে চলতি মাসেই দগ্ধ হয়ে এবং বিস্ফোরণে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ৩ জুলাই গাজীপুরে একটি তৈরি পোশাক কারখানার মেয়াদোত্তীর্ণ বয়লার বিস্ফোরণে নিহত ১৩ ও আহত হন অন্তত অর্ধশত। এছাড়া গত ৪ জুলাই রাজধানীর চকবাজারে কম্প্রেসার বিস্ফোরণে দগ্ধ পাঁচ জনের মধ্যে একজন শুক্রবার মারা গেছে। আর এসব দগ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটছে রান্নাঘরের চূলা থেকে গ্যাস লিক করে বেরিয়ে পরবর্তীতে বিস্ফোরণ হয়ে। আবার কখনও গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার, বাসা বাড়িতে থাকা গ্যাস লাইনে বিস্ফোরণ, আবার বাসা বাড়িতে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, পেট্রোলপাম্পে কম্প্রেসার বিস্ফোরণ ও গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, এসির কম্প্রেসার বিস্ফোরণ, সেপটিক ট্যাঙ্কে জমে থাকা গ্যাসে বিস্ফোরণ, বাচ্চাদের খেলনা বেলুন ফুলানোর জন্য ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনাগুলো ঘটছে। এসব বিস্ফোরণের ঘটনাগুলোর তদন্ত করে থাকে বিস্ফোরক অধিদফতর। তদন্তে দেখা গেছে, বছরে গড়ে ৫ থেকে ছয়টি বড় ধরনের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এছাড়াও ছোটখাটো বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে বছরে গড়ে মারা যান অন্তত ৫০ থেকে ৬০। আর দগ্ধ হন চার থেকে পাঁচশ’। দগ্ধদের অধিকাংশই পরবর্তীতে দীর্ঘ রোগভোগের পর মারা যান। আর যারা বেঁচে থাকেন, তারা চিরতরে পঙ্গু হয়ে যান। কোন বিস্ফোরণের ঘটনার পর দেখা গেছে, পরিবারটিই পথে বসেছে। পরিবারের সবাই মারা গেছে। গত বছর রাজধানীর কলাবাগানে গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে একই পরিবারের পাঁচ জনের সবাই মারা যান। এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে। এমনকি একই পরিবারের সাত সদস্য পর্যন্ত মারা যাওয়ার রেকর্ড রয়েছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বিস্ফোরক অধিদফতরের প্রধান পরিদর্শক সামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, গত দুই বছরে বিস্ফোরণের মাত্রা আশঙ্কাজনকহারে বেড়েছে। এসব দুর্ঘটনার প্রধান কারণ সচেতনতার অভাব। এসি ও ফ্রিজের কম্প্রেসারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও অনেকে তা নিতান্তই ঝামেলা বা অলসতার কারণে বদলান না। একই অবস্থা বাসা বাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের ক্ষেত্রেও। বাড়ির মালিক গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করলেও সিলিন্ডারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও সেই সিলিন্ডার ব্যবহার করছেন। আবার কোন কোন অসাধু ব্যবসায়ী মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডারে গ্যাস ভরে বিক্রি করছেন। ফলে দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। বাসা বাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের পর মূল চাবিটি বন্ধ করে রাখার নির্দেশনা দেয়া থাকলেও অনেকেই তা মানে না। এতে করে গ্যাস লিক করে রান্না ঘরে জমে থাকে। রান্না করতে গিয়ে চুলা জ্বালানো মাত্রই বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা ঘটে। অথচ ঘরের দরজা জানালা খুলে দিয়ে ফ্যান চালিয়ে দশ থেকে বারো মিনিট পর চূলা জ্বালালে বিস্ফোরণের কোন আশঙ্কা থাকে না। কারণ ততক্ষণে ঘর থেকে জমে থাকা গ্যাস বেরিয়ে যায়। আর সেপটিক ট্যাঙ্কের ঢাকনা খোলার পর সেখানে ১৫ থেকে ২০ মিনিটি টেবিল ফ্যান চালিয়ে রাখলে ভেতরে জমে থাকা গ্যাস বেরিয়ে যায়। অথবা আধঘণ্টার মতো ঢাকনা এমনি খুলে রাখলেও গ্যাস বেরিয়ে যায়।
×