ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

শহর রক্ষায় সিরাজগঞ্জে যমুনাপারে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ৮ জুলাই ২০১৭

শহর রক্ষায় সিরাজগঞ্জে যমুনাপারে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার, সিরাজগঞ্জ ॥ বন্যা ও ভাঙ্গনের কবল থেকে আবাদী ফসল ও ঘরবাড়ি রক্ষায় সিরাজগঞ্জে যমুনাপারে প্রায় দুই কি:মি: বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অভ্যন্তরে আরও একটি রিং বাঁধ নির্মাণ করে চলতি বর্ষায় মানুষের সহায় সম্পদ রক্ষা করা হয়েছে। কোন রকম প্রশাসনিক অনুমোদন এবং ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ না করেই এই বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করেছে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বিভাগ। সিরাজগঞ্জের উজানে সদর উপজেলার বাহুকা ও কাজীপুর উপজেলার শুভগাছা এবং বীরশুভগাছায় পানি উন্নয়ন বিভাগ জরুরীভিত্তিতে এই বাঁধ নির্মাণ করেছে। এই বাঁধ নির্মাণের পর এলাকার মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। প্রায় দুইমাস আগে থেকেই সিরাজগঞ্জের উজানে এবং ভাটিতে যমুনায় ভয়াবহ ভাঙ্গন শুরু হয়। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় বাহুকা, শুভগাছার প্রায় আড়াই শ’ ফুট বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। এছাড়াও প্রায় দুই কি:মি: এলাকা জুড়ে বাঁধের বিভিন্ন অংশে ভাঙ্গন দেখা দেয়। পুরো বর্ষা মৌসুমে বন্যার পানিতে মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতির কথা চিন্তা করে এলাকার মানুষ আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। সিরাজগঞ্জে যমুনাপারের অসময়ের ভাঙ্গনে জমি-জিরাত ও জানমালের ক্ষয়ক্ষতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ভাঙ্গনরোধে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ ও বাহুকা, শুভগাছায় বিকল্প রিং বাঁধ নির্মাণের নির্দেশ দেন। এরই প্রেক্ষিতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অভ্যন্তরে আরও একটি রিং বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। কিন্তু বাঁধ নির্মাণে চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী সরকারের প্রশাসনিক অনুমোদন, জমি অধিগ্রহণর এবং ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ করে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাজ শুরু করার কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হয়েছে। এটি স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নির্বাচনী এলাকা। এ অঞ্চলের মানুষ নেতার প্রতি আস্থা রেখে এবং নিজেদের জানমাল রক্ষার বৃহত্তর স্বার্থে দ্রুত বাঁধের কাজ শেষ করার জন্য জমি দিয়েছে। মাত্র দুইমাসের মধ্যেই প্রকল্প এলাকায় যমুনা নদীর তলদেশ থেকে ড্রেজিং করে অপসারিত মাটি বাঁধে কাজে লাগিয়ে নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়েছে। এতে এলাকার মানুষের মধ্যে স্বস্তিও ফিরেছে। বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই সিরাজগঞ্জের উজানে এবং ভাটিতে যমুনায় ভয়াবহ ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। উজানে ভাঙ্গছে সিরাজগঞ্জ সদরের বাহুকা, কাজীপুরের শুভগাছা এবং ভাটিতে চৌহালী উপজেলা সদরে। ভাঙ্গনে বাহুকা ও শুভগাছায় আবাদী জমিসহ মূল বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় দুই শ’ ফুট এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। শতাধিক বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। গত ৩ মে দুপুরে বাহুকায় আকস্মিকভাবে বন্যা নিয়ন্ত্রণ মূল বাঁধের প্রায় দুই শ’ ফুট এলাকা ভেঙ্গে এপার ওপার হয়ে যায়। বাহুকা ও কাজীপুরের শুভগাছায় যমুনা নদী ভাঙ্গনে জমি-জিরাতসহ মানুষের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হতে থাকে। ভাঙ্গনরোধে বালিভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হলেও ভাঙ্গন প্রশমনে তা সফল হয়নি। আকস্মিক বন্যা নিয়ন্ত্রণ মূল বাঁধ ভেঙ্গে গেলে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম জনকণ্ঠকে যমুনার ভাঙ্গন প্রসঙ্গে বলেছেনÑ অসময়ে যমুনায় এমন ভাঙ্গন এর আগে কখনও হয়নি। তবে পানি কম থাকায় ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। যমুনা নদীর ভাঙ্গন থেকে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলার খুদবান্দি, সিংড়াবাড়ি ও বাহুকা-শুভগাছা এলাকায় স্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক কাজের জন্য প্রকল্প হাতে নিয়ে তা উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠানো হয়েছে। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় চার শ’ পঁয়ষট্টি কোটি টাকা। প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। বন্যার পানির কবল থেকে মানুষের জানমাল রক্ষায় প্রশাসনিক অনুমোদনের আশ্বাস পেয়ে ইতোমধ্যেই ভাঙ্গন এলাকায় প্রায় দুই কি:মি: বিকল্প রিং বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়েছে।
×