ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

২০ জাতি শীর্ষ সম্মেলন

ট্রাম্প-পুতিন প্রথম শোডাউন

প্রকাশিত: ০৩:৩৮, ৮ জুলাই ২০১৭

ট্রাম্প-পুতিন প্রথম শোডাউন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান বিভক্তির মধ্যে ২০ জাতি শীর্ষ সম্মেলনে রুশ নেতা ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে শুক্রবার এক বৈঠকে মিলিত হন। খবর এএফপির। সিরিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধসহ বিশ্বের বিভিন্ন চলমান সঙ্কটের প্রেক্ষিতে এ দুই নেতার বৈঠক বেশ আকর্ষণীয় ও কৌতূহল উদ্দীপক কেননা, এর এক দিন আগেই অর্র্থাৎ গত বৃহস্পতিবার ওয়ারশতে বসে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পাশ্চাত্য বিশ্বকে অস্থিতিশীল করার প্রচেষ্টায় জড়িত বলে ট্রাম্প অভিযোগ করেছিলেন। শুধু তাই নয় ট্রাম্প ওয়ারশের হাজার হাজার উৎফুল্ল জনতার সমাবেশে রাশিয়ার বর্তমান ও অতীত নেতৃত্বকে তাদের যথাযথ ভূমিকা পালন না করার জন্য কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, অতীতে রাশিয়া পোল্যান্ডের ওপর কমিউনিস্ট শাসন চাপিয়ে দিয়েছিল ঠিকই কিন্তু তাদের নাৎসি জার্মানির ধ্বংসযজ্ঞ থেকে রক্ষা করতে পারেনি। বর্তমানেও তারা ইউক্রেনসহ অন্যত্র অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে তারা ইরান ও সিরিয়ার আসাদ সরকারকে নিরীহ জনগণের ওপর রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ করা সত্ত্বেও তাদের সমর্থন করে যাচ্ছে। এছাড়াও তিনি সরাসরি রাশিয়ার নাম উল্লেখ না করলেও পরোক্ষভাবে বলেন যে, আজ পাশ্চাত্য বিশ্বের স্বার্থ প্রচার প্রপাগান্ডা, অর্থনৈতিক দুর্নীতি ও সাইবার হামলার দরুন ব্যাপক হুমকির সম্মুখীন। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ট্রাম্পের এ ধরনের বিষোদগার ঘরে বাইরের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। যে রাশিয়ার জন্য আজ ট্রাম্প ক্ষমতায় আসীন, সেই ট্রাম্পই এখন রাশিয়ার দিকে আঙ্গুল তুলে কথা বলছেন। সিআইএসহ সবকটি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সুস্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে ট্রাম্পের নির্বাচনে পুতিনের সরাসরি হাত ছিল। এরপরই ট্রাম্পের কথার সুর বদলে গেল। তিনি বলে বসলেন, এখানে আমার কী করার আছে? নির্বাচনকালীন সরকারে ওবামা প্রশাসন কার্যকর ছিলÑ তিনি সিআইয়ের রিপোর্টে রুশ সংশ্লিষ্টতা জেনেও যদি নিষ্ক্রিয় থাকেন তবে সে জন্য আমাকে দায়ী করা ঠিক হবে না। ট্রাম্প এত দিন বলে আসছিলেন নির্বাচনে রুশ সংশ্লিষ্টতার কোন ভিত্তি নেই এটি ডেমোক্রেটদের প্রচারণা। পরবর্তীকালে এফবিআইপ্রধান জেম্্স কোমিকে বরখাস্ত করার সময় বললেন, ‘কোমি উইচহান্ট’ করছেন। এভাবে ট্রাম্প সুবিধা অনুযায়ী বারবার তার অবস্থান বদল করছিলেন মার্কিন জনগণও যা বোঝার তা বুঝে গেছে কিন্তু, কংগ্রেস ও সিনেটে রিপাবলিকানদের নিরঙ্কুশ আধিপত্য থাকায় ট্রাম্পের কেশাগ্রও কেউ স্পর্শ করতে পারবে না। এ ব্যাপারে একজন রাজনীতি সচেতন মানুষ বলেছেন, ট্রাম্পের জায়গায় কোন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট ক্ষমতাসীন থাকলে এত দিনে তার বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্টের খসড়া প্রস্তাব তৈরি হয়ে যেত। সে যাই হোক স্বদেশী গণমাধ্যমে তীব্র রুশবিরোধী মনোভাব এবং সিনেটের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের চাপে ট্রাম্পকে ২০ জাতি সম্মেলনে এসে রাশিয়া তথা পুতিনের বিরুদ্ধে এ ধরনের কঠোর অবস্থান নেয়া ছাড়া আর কোন বিকল্প ছিল না বলে অনেকে মনে করেন। সিনেটের প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাট সদস্যরা বলেছেন, মার্কিন নির্বাচনে মস্কোর হস্তক্ষেপের জন্য ট্রাম্প যদি পুতিনকে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হন তবে তা হবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার দায়িত্ব পালনে গুরুতর বরখেলাপ। সিনেটের গোয়েন্দা, সশস্ত্রবাহিনী ও পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ কমিটির সদস্য ও শীর্ষস্থানীয় ডেমোক্র্যাট নেতা চাকশুমার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় রাশিয়ার কারসাজিমূলক তৎপরতা কোনভাবেই সহ্য করা হবে না এটি রাশিয়াকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়ার জন্য ট্রাম্পকে বলা হয়েছে। অনেকে মনে করেন পোল্যান্ডে রাশিয়ার বিরুদ্ধে উচ্চারিত ট্রাম্পের গরম গরম বক্তৃতায় মূলত দুটি লাভ হয়েছে। এক স্বদেশীয় রাজনীতিতে তিনি যে সত্যিকার অর্থেই একজন স্বাধীন প্রেসিডেন্ট এবং পুতিনের ধামাধরন নয় সেটি পরিস্ফুট হয়েছে। দ্বিতীয়ত পোল্যান্ডে নিজের প্রভাব খাটিয়ে ট্রাম্প কয়েক বিলিয়ন ডলারের প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বিক্রির চুক্তিও সম্পাদন করেছেন। কিন্তু ন্যাটো জোটভুক্ত পোল্যান্ডে এ অস্ত্র বিক্রিতে রাশিয়া নাখোশ হবে নাতো? বিশ্লেষকরা এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে চমকে গেছেন, কেননা ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিনের শুক্রবারের বৈঠকে সে গোপন কক্ষে মাত্র তিনজন লোক উপস্থিত থাকার কথা। এ বিশেষ কক্ষটিতে ট্রাম্পের সঙ্গে তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন ও প্রেসিডেন্ট পুতিনের একান্তে বৈঠকের কথা রয়েছে। এ একান্ত বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা হোয়াইট হাউসের অভিজ্ঞ কূটনীতিকদের কেন রাখা হলো না তা নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে জবাব দেয়া হয় যে, প্রেসিডেন্ট পুতিন অল্পসংখ্যক মানুষের সঙ্গে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এর আগেই অবশ্য ব্রুকলিন্স ইনস্টিটিউশনের গবেষক টমাস রাইট বলেছিলেন, বৈদেশিক নীতি সম্পর্কে ট্রাম্প অথবা টিলারসন (তারা মূলত ব্যবসায়ী) কারও কোন অভিজ্ঞতা নেই। তাই তারা গোপন কক্ষ বেছে নিয়েছে ক্ষুব্ধ পুতিনকে বুঝিয়ে শুনিয়ে শান্ত করার জন্য। এ বিষয়ে রাশিয়ায় নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইকেল ম্যাকফল এ মর্মে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, যেখানে ট্রাম্পের সফরসঙ্গী হিসেবে তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা এইচ আর ম্যাক মাস্টার ও তার দল উপস্থিত ছিলেন, সেখানে তাদের বাদ দিয়ে পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের অর্থ পুরো বৈঠকের কার্যক্রম পুতিনের শর্ত ও তার ডিক্টেশন অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে।
×