ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

প্রকাশিত: ০৩:৩৫, ৮ জুলাই ২০১৭

অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

রাজধানীর গুলশান, বনানী, বারিধারা, ধানম-ি এবং উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকায় আবাসিক প্লটে গড়ে ওঠা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দশ মাস সময় বেঁধে দিয়েছে হাইকোর্ট। গত বছরের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জঙ্গী হামলায় ১৭ জন বিদেশীসহ মোট ২২ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠান এবং স্থাপনার তালিকা প্রস্তুত করে উচ্ছেদের অভিযান শুরু করার ব্যাপারে মালিক পক্ষকে জানান। ৫৫২টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রাজউক উচ্ছেদের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। রাজউকের এই ধরনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আলাদাভাবে ২৩৭টি রিট আবেদন দাখিল করে হাইকোর্টে। এসব রিট আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট ১০ মাসের মধ্যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান এবং স্থাপনা সরিয়ে নেবার নির্দেশ প্রদান করে। বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী এবং বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বুধবার এই রায় প্রকাশ করে। আদালতে রাজউকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল। রায়ে বলা হয়, দশ মাসের মধ্যে স্থাপনা এবং প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষ রাজউকের কাছে আবেদন করে তার একটা বিহিত করার জন্য ১০ মাস সময় পাবে। এর আগ পর্যন্ত রাজউক কোন ধরনের আইনগত ব্যবস্থা প্রয়োগ করতে পারবে না প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্ছেদের ব্যাপারে। এমনকি গ্যাস এবং বিদ্যুত কর্তৃপক্ষও কোন প্রকার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বৈধ অধিকারও পাবে না এই দশ মাস। কিন্তু দশ মাসের মধ্যে রাজউকের সঙ্গে মালিক পক্ষ কোন ধরনের আইনী প্রক্রিয়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হলে নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি রাজউকের পক্ষে চলে যাবে। অর্থাৎ দশ মাসের মধ্যে কোন কিছুর সুরাহা না হলে আইনগতভাবে রাজউক আবাসিক প্লটের আশপাশে বিভিন্ন স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে সরাসরি তার কার্যক্রম শুরু করতে পারবে। এসব প্রতিষ্ঠান আবাসিক এলাকায় চালাতে গেলে নিয়ম অনুযায়ী মালিক পক্ষকে কনভার্সন (রূপান্তর) ফি দিয়ে আবেদন করা অত্যন্ত জরুরী। কিন্তু সেই রূপান্তর প্রক্রিয়া আদৌ গ্রহণযোগ্য হবে কিনা তা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের উপরই নির্ভর করবে। দশ মাস সময়ের মধ্যে রাজউক এবং মালিক পক্ষের যৌথ কর্মপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্ধারিত হবে স্থাপনাগুলোর ভবিষ্যত। এই দশ মাসে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালাতে কোন ধরনের আইনী বাধার সম্মুখীন হবে না। বিভিন্ন আবাসিক এলাকার নির্ধারিত প্লটে যে সব ব্যবসায়িক, শিল্প এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে তা ঐ এলাকার পরিবেশ বিপর্যয় থেকে আরও হরেক রকমের সমস্যা তৈরি করতে পারে, যা মানুষের বসবাসের উপযোগী নয়। এতে সুস্থ এবং স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। ২০১৬ সালের ১ জুলাই হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় যে নৃশংস, হত্যাযজ্ঞের অবতারণা করা হয় সেখান থেকেই পারিপার্শ্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি বিশেষভাবে সামনে চলে আসে। এর পর থেকে আবাসিক প্লটের আশপাশ এলাকাজুড়ে যে সব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম অব্যাহত ছিল রাজউক সে সব জায়গায় উচ্ছেদ অভিযানের কাজ শুরু করলে সংশ্লিষ্ট মালিকরা প্রতিপক্ষ হয়ে আইনী বিধান চায় আদালতে। তারই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন আবেদনের শুনানির পর এই ধরনের একটি রায় ঘোষণা করে আদালত। পরিবেশ সুরক্ষায় অবৈধ স্থাপনাগুলোকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে পূর্ণাঙ্গ রায়ে। দেখা যাক রাজউক এবং প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবসায়ীরা বৃহত্তর স্বার্থে কতখানি ছাড় দিতে পারে। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি যদি বসবাসের উপযোগী না হয় তাহলে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে কোত্থেকে?
×