ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পণ্যমূল্য ও সিন্ডিকেট

প্রকাশিত: ০৩:৩৪, ৮ জুলাই ২০১৭

পণ্যমূল্য ও সিন্ডিকেট

আমাদের দেশে কোন পণ্যের দাম কমে না, সবকিছুর দাম শুধু বাড়তেই থাকে। পণ্যমূল্যের সেই পাগলা ঘোড়া যেন সর্বদা জেগে থাকে আর অস্থির হয়ে দাপিয়ে বেড়ায়। তার লাগাম টানার সহিস ধীরে ধীরে রীতিমতো দুর্বল ও অসহায় হয়ে পড়ে। কিন্তু এই অসহায়ত্ব কাম্য হতে পারে না। নাগরিকদের উপার্জন সপ্তাহে সপ্তাহে বৃদ্ধি পায় না। চাকরিজীবীরা বছরে একবার ইনক্রিমেন্ট পান, অর্থাৎ সারা বছরে একবার তাদের বেতন বাড়ে। তাও সেটি যথেষ্ট পরিমাণে নয়। প্রতি সপ্তাহেই নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির জন্য ব্যয় বেড়ে যাওয়া অনাকাক্সিক্ষত ও অস্বাভাবিক। এই ভারসাম্যহীনতার সঙ্গে পেরে উঠতে পারে না সাধারণ মানুষ। ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফা করার মানসিকতাই বাজারকে অস্থিতিশীল করে তোলে। মানুষ দুর্ভোগে পড়ে। নিত্যপণ্যের ভেতর সবার ওপরে রয়েছে চাল, দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য। এই চালের দাম দফায় দফায় বাড়তে বাড়তে বর্তমানে এমন অবস্থায় গেছে যে, স্বল্পবিত্ত বা শ্রমজীবী মানুষের জন্য সেটি পীড়াদায়ক হয়ে উঠেছে। বোরো ধানের জোগানদাতা হাওড়াঞ্চলে আগাম বন্যা হওয়ার সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট গড়ে তুলে চালের দাম অস্বাভাবিক বাড়িয়ে দিয়েছে। শুধু চালের দাম নয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় বেশ কিছু পণ্যের দামই সিন্ডিকেট করে বাড়িয়েছে ব্যবসায়ীরা। এদেশে ব্যবসায়ীরা কি এতটাই শক্তিশালী যে, তাদের নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হয়ে উঠছে? এটা ঠিক যে, বিভিন্ন উৎসবের সময় পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে। একই সঙ্গে কিছু পণ্য উৎসবকে ঘিরে অপরিহার্য হয়ে ওঠে। এ সুযোগকে ব্যবসায়ীরা কাজে লাগিয়ে পণ্যের দাম পড়িয়ে দেয়। ব্যবসায়ী চক্রই এ ফায়দা নেয়। বিশেষ করে খুচরা পর্যায়ে বেশি দাম বাড়ে। এ ছাড়া আমদানিকারকরাও অনেক সময় লাভ বেশি করার জন্য কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়ে দেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়মিত বাজার পরিদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে। তারপরও সব কিছু কতিপয় অসৎ ব্যবসায়ী এবং সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়ে থাকে। যেমন বিগত রমজান মাসে পণ্যমূল্য বাড়িয়ে দেয়। কাঁচা সয়াবিন তেল ও কাঁচা পামওয়েল যারা আমদানি করেন এবং শোধন করেন ভোজ্যতেলের বাজারে কলকাঠি তারাই নাড়িয়ে থাকেন বলে অভিযোগ উঠে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় সয়াবিন তেলের মধ্যে পামওয়েল মিশিয়ে বিক্রি করা হয় অধিক মুনাফার আশায়। আবার খোলা তেলের সঙ্গে বোতলজাত তেলের মূল্যে পার্থক্য থাকে অনেক। ভোগ্যপণ্য নিয়ে এ ধরনের স্বেচ্ছাচার রোধ করার জন্য সক্রিয় রয়েছে সরকারী প্রতিষ্ঠান ট্যারিফ কমিশন। এর আগেও আমরা সম্পাদকীয় কলামে বলেছি, বাজার সিন্ডিকেটের কারণেই অনেক সময় দেশে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির থাকে। বাজার সিন্ডিকেটই এর জন্য মূলত দায়ী। বাজার সিন্ডিকেট বলতে বোঝায় বিশেষ প্রভাবশালী ব্যবসায়ী চক্রকে। এই চক্রের বাইরে যে দেশব্যাপী বহু চক্র কাজ করছে তার খোঁজ ক’জন রাখে। পাতি ব্যবসায়ী থেকে শুরু“করে ফুটপাথের দোকানদারÑ সবাই এখন সিন্ডিকেটের সদস্য। যে যেভাবে পারছে লুটে নিচ্ছে। তাদের কাছে জনগণ অসহায় বা জিম্মি। পরিকল্পিতভাবে পণ্যের দাম বাড়ানোর অপপ্রয়াস রোধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপই কাম্য। নিয়মিত বাজার পরিদর্শন জরুরী। একই সঙ্গে সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ বা টিসিবিকে শক্তিশালী করারও কোন বিকল্প নেই। তবে বাজার পরিস্থিতি পাল্টানোর জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন বিক্রেতাদের লোভী ও প্রতারণামূলক মানসিকতার পরিবর্তন।
×