ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উছল

প্রকাশিত: ০৭:১২, ৭ জুলাই ২০১৭

উছল

চাঁদপুর সাহিত্য সম্মেলন ২০১৭ উপলক্ষে প্রকাশিত ছোট সাময়িকী উছল প্রকাশ পায় ২০১৭ সালের মে মাসে। সৌম্য সালেকের সম্পাদনায় এটি উছলের দ্বিতীয় প্রকাশন। প্রচ্ছদ এঁকেছেন সারাজাত সৌম। গত তিন বছরের পথচলায় উছল আজ চাঁদপুরের সীমাবদ্ধ গ-ি পেরিয়ে বাংলাদেশের বৃহত্তর সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সফলভাবে পদার্পণ করে জাতীয় পর্যায়ে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়। সাময়িকীটির শুরুতেই সম্পাদকীয় কলামে এমনই অভিমত ব্যক্ত করেন সৌম্য সালেক। সাময়িকীর ছোট্ট আবরণে উছলের পরিসর ব্যাপক। যে সব আলোচনা নিয়ে বইটিকে পরিপূর্ণ করা হয়েছে তা সাহিত্যের এক বিস্তৃত বলয়। প্রবন্ধ, বিশেষ রচনা, গল্প, অনুবাদ গল্প, কবিতা, গুচ্ছ কবিতা, নাটক থেকে আরম্ভ করে অনুবাদ কবিতা, মুক্তগদ্য, ভ্রমণ, ছড়া এমনকি বই পর্যালোচনা ও উছলের পরিসর সমৃদ্ধ করে। বেগম আখতার কামালের লেখা ‘শামসুর রাহমানের কবিতায় কাল্পোক্তি’ প্রবন্ধটি দিয়েই উছলের এই দ্বিতীয় সংখ্যা শুরু করা হয়। ‘কবিতা কল্পনালতা’ রবীন্দ্রনাথের এই বাক্য দিয়ে কবি মানসের কাল্পনিক অনুভবকে স্পষ্ট করার চেষ্টা করা হয়। রোমান্টিক কবিদের কল্পময়তা আধুনিক গদ্য কবিতার অনুষঙ্গ না হয়ে যখন সমান্তরাল হয় সেই বোধে ইংরেজ কবি এলিয়টের ভাবাদর্শের লালিত আধুনিক কবিরা কি আদৌ কল্পনাবিবর্জিত হতে পেরেছিলেন? হয়তবা এই কল্পনাই হয়ে ওঠে শোষিত সামাজিক অবয়বে নিঃসঙ্গ ক্লান্ত, বিচ্ছিন্ন অবসাদগ্রস্ত কবিদের নির্মোহ এক আবেগ। আর সেখান থেকেই বিচার করা হয় কবি শামসুর রাহমানের কল্পনাপ্রবণতা, প্রসঙ্গক্রমে জীবনানন্দের কল্পলোকে অভিগামিতাও তুলে ধরা হয়। জাকির তালুকদারের ‘বাংলাদেশের ছোটগল্প’ আলোচনাটি বাংলা সাহিত্যের ছোট গল্পের একটি পর্যায়ক্রমিক ধারার সুসংবদ্ধ রচনাশৈল। অবিভক্ত বাংলার ছোট গল্পের সূচনা পর্ব এবং বিকাশের ধারা বর্ণনায় সঙ্গত কারণে রবীন্দ্রনাথকেই যথার্থ নির্ধায়কের মর্যাদায় অভিষিক্ত করা হয়। তারপরে ’৪৭-এর দেশ বিভাগের পর কলকাতাকেন্দ্রিক এই সাহিত্যের আঙ্গিনাটিকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণের যৌক্তিক কারণ ব্যাখ্যা করা হয়। যেখানে চল্লিশের দশক থেকে বাংলাদেশের ছোট গল্প লেখকদের ধারাবাহিক সৃজনকর্মের একটি সুস্পষ্ট চিত্র পাঠকের কাছে তুলে ধরা হয়। এই দশকের শ্রেষ্ঠ ছোট গল্পকার হিসেবে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর নামটি বিশেষভাবে অঙ্কিত থাকে। পঞ্চাশের দশকের শুরুতে ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক ভাবাদর্শ দেশের প্রগতিশীল মননে যে নতুন চৈতন্যের সঞ্চার করে সেটাই পরবর্তীতে ছোটগল্প থেকে শুরু করে সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ আঙ্গিনায় যুগান্তকারী প্রভাব ফেলে। যার রেশ আজ অবধি সাহিত্যিক অঙ্গনকে নানামাত্রিক লালন করছে। ষাট, সত্তর, আশি, নব্বই এমনকি একবিংশ শতাব্দী প্রথম দু’দশকেও মাতৃভাষা, স্বাধীনতা, অধিকারসহ আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক অঙ্গনের হরেক রকম চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছে ছোটগল্পের বিশেষ অঙ্গনটি। খালেদ হামিদীর ‘সাম্প্রতিক কাব্য একটি ব্যক্তিগত সমীক্ষা। প্রবন্ধটি মূলত বাংলা সাহিত্যের কাব্যিক নির্মাণশৈলীর এক পর্যায়ক্রমিক ধারার অবতারণা করে। লেখক এই শতাব্দীর প্রতিষ্ঠিত এবং উদীয়মান এক ঝাঁক কবির কবিতার ওপর তার সুসংবদ্ধ অভিব্যক্তি উপস্থাপন করে বর্তমান কবিতার আঙ্গিক এবং শৈল্পিক মানের ওপর সুচিন্তিত মত দেন। প্রসঙ্গক্রমে বিশ্বায়নের যুগে অনলাইনের অবিচ্ছেদ্যতায় তরুণ কবিদের কবিতাকে প্রভাবিত করার বিষয়টিও উঠে আসে। প্রবন্ধগুলো সমৃদ্ধ এবং সুখপাঠ্য। সাহিত্যের বিভিন্ন আঙ্গিকের একটি পরিচ্ছন্ন চিত্রও পাঠকদের সামনে উন্মোচিত হবে। সাহিত্যকশ্রয়ী পাঠকদের জন্য সাময়িকীটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে। স্বল্পমূল্যের (১০০ টাকা) এই ছোট সঙ্কল্পটি পাঠকদের আয়ত্তের মধ্যে থাকার কারণে বহুল প্রচারের সম্ভাবনা আশা করাই যায়। উছলের সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করছি।
×