ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পরিবেশবান্ধব সাইকেল গাড়ি!

প্রকাশিত: ০৬:৫৯, ৭ জুলাই ২০১৭

পরিবেশবান্ধব সাইকেল গাড়ি!

ফেরারি বা পর্শে গাড়ির নাম শুনলেই দ্রুত গতি আর অনবদ্য ডিজাইনের কথা মনে আসে। কিন্তু সেই সব গাড়ির চরিত্র বদলে নতুন এক রূপ দিচ্ছেন অস্ট্রিয়ার এক শিল্পী। কিন্তু অস্ট্রিয়ার লিনৎস শহরে রেসে নামলে এক পর্শে গাড়িকে পেছনে ফেলে সাইকেলও এগিয়ে যায়। কারণ ১৫০ কিলো ওজনের এই গাড়িটিতে কোন ইঞ্জিনই নেই! হানেস লাঙেডার তাঁর পেশীশক্তি দিয়ে সেই গাড়ি ঠেলেন। তিনি বলেন, ‘ধীরে চলতে পারার মধ্যে অবশ্যই একটা আলাদা আরাম রয়েছে। এ এক দারুণ বিলাসিতা। আমার মতে, দ্রুত চলার থেকে ধীরে চলা আরও বড় বিলাসিতা। সবাই সবসময় দ্রুত চলতে চায় এবং সেটাই করে। তবে ধীরে চলাই কিন্তু আসল বিলাসিতা।’ স্বপ্নের এই গাড়ির সোনালি মোড়কের নিচে মূল্যবান উপকরণ রয়েছে। শিল্পী ও ভাস্কর হিসেবে তিনি প্লাস্টিকের পাইপ ও সেলোটেপ দিয়ে চলমান ভাস্কর্য গড়ে তুলেছেন। হানেস লাঙেডার বলেন, ‘আমি আসলে চাকাওয়ালা হাতি তৈরি করতে চেয়েছিলাম, যাতে চড়ে শহর ঘোরা যায়। খোঁজখবর নিয়ে দেখলাম, নির্দিষ্ট প্রস্থের বেশি এমন এক সাইকেল নিয়ে সাইকেলের জন্য বরাদ্দ পথে চালানোর নিয়ম নেই। অর্থাৎ গাড়ির পথই ব্যবহার করতে হবে। তখন আইডিয়াটা এলো। এমন কিছু করি, যার সঙ্গে গাড়ির মিল রয়েছে।’ এভাবেই এই পর্শে সৃষ্টি হলোÑ যার পোশাকি নাম জিটিথ্রি আরএস। এই শিল্পসৃষ্টি গাড়িকে ঘিরে ভক্তদের যে ‘কাল্ট’ রয়েছে, তা পুরোপুরি একাত্ম করতে চায়। একই সঙ্গে সেটি আবার সামাজিক-পরিবেশবাদী একটা বার্তাও বটে। ইউরোপের মিউজিয়ামগুলো তাঁর গ্যারেজে পরিণত হয়েছে। যেমন লিনৎস শহরের সমসাময়িক ও আধুনিক শিল্প মিউজিয়াম। পর্শে গাড়ির ক্ষেত্রে তিনি যেমনটা করেছেন, ঠিক সেভাবেই তিনি এক ফেরারি গাড়িরও নতুন রূপ দিয়েছেন। তৈলচিত্র ও ভাস্কর্যের মধ্যে শোভা পাচ্ছে সেটি। হানেস লাঙেডার বলেন, ‘আমার কাজ ছবি নিয়ে, শিল্প নিয়ে। সেই প্রেক্ষাপটেই আমি সৃষ্টির কাজ করি। গাড়ির জগত থেকেও অনেক ফিডব্যাক এসেছে। আমি যে আসলে কী, আমিই তা জানি নাÑ মোটর রেস ড্রাইভার না শিল্পী?’ হানেস লাঙেডার-এর সৃষ্টি ফ্যার্ডিনান্ড স্টুটগার্ট শহরের পর্শে কারখানায় প্রদর্শিত হয়েছে। ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরের আন্তর্জাতিক গাড়ি প্রদর্শনীতেও সেটি দেখা গেছে। ব্রিটেনের ‘টপ গিয়ার’ অনুষ্ঠানে তিনি আমন্ত্রণ পেয়েছেন। লাঙেডার নিজেই এক বিজ্ঞাপন ভিডিও তৈরি করে এই গাড়ি সম্পর্কে আগ্রহ সৃষ্টি করেছিলেন। ইন্টারনেটে সেটি ৩০ লাখেরও বেশি ক্লিক পেয়েছে। তিনি বলেন, ‘ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটারের বেশি গতি হলেই পেছনের রেয়ার উইং এ্যাক্সেলের ওপর বিশাল চাপ সৃষ্টি করে। সামনে থেকে বাতাস ঢোকার ব্যবস্থা থাকায় চালক ও তার পাশের আসনে বসে ঘেমে যাবার ভয় নেই। আসন প্রয়োজনমতো উপর-নিচ করা যায়। রিকাম্বেন্ট সাইকেলের প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে সেগুলো তৈরি হয়েছে, যাতে পায়ের ওপর কোন চাপ না পড়ে। তবে অর্থের কথা ভেবে গাড়িতে কোন ইঞ্জিন রাখা হয়নি।’ পেশী শক্তিচালিত যান হওয়ায় ফ্যার্ডিনান্ড অস্ট্রিয়ার শহরগুলোর কেন্দ্রস্থলেও চলার সুযোগ পায়। পথচারীদের জন্য নির্দিষ্ট এলাকায় সেটি চললে কেউ আপত্তি করে না। এই শিল্পকর্ম দিয়ে হানেস লাঙেডার সম্পূর্ণ নতুন ধারার এক যান সৃষ্টি করেছেন। তিনি নিজেও সেটি প্রায়ই ব্যবহার করেন। সূত্র: ডয়েচে ভেলে
×