ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাত

বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বাড়াতে থাইল্যান্ডের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৭ জুলাই ২০১৭

বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বাড়াতে থাইল্যান্ডের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বাড়াতে থাইল্যান্ডের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডন প্রামোদউইনেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাতে গেলে এ আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। এছাড়া বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের বৈঠকে এলপিজি প্রকল্পে বিনিয়োগের আগ্রহ জানিয়েছে থাইল্যান্ড। থাইল্যান্ডের সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডন প্রামোদ উইনেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। সাক্ষাতের পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। প্রেস সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে থাইল্যান্ড থেকে আরও বিনিয়োগ আহ্বান করেছেন, বিশেষ করে কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ খাত ও পর্যটনে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক শক্তিশালী করতে হবে এবং বাণিজ্য আরও বাড়াতে হবে। বাংলাদেশে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ রয়েছে দেড় বিলিয়ন ডলারের মতো। দুই দেশের বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ এক বিলিয়ন ডলার। থাইল্যান্ড বাংলাদেশের কাছে দুই লাখ মেট্রিক টন চাল বিক্রি করতে চাওয়ায় ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের খাদ্যের অভাব নেই। তারপরও বন্যার মৌসুম হওয়ায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে মজুদ বাড়ানো হচ্ছে। প্রেস সচিব বলেন, সফররত থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, থাইল্যান্ডের এশিয়ান ইনস্টিটিউট ফর টেকনোলজিতে বঙ্গবন্ধুর নামে একটি চেয়ার স্থাপন করা হয়েছে যেটির উদ্বোধন করবেন দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মেকং-গঙ্গা কোঅপারেশন ফোরাম এবং দ্য ইস্ট ওয়েস্ট ইকনোনিমক ফোরামের মতো আঞ্চলিক ফোরামে সদস্য হতে বাংলাদেশকে থাইল্যান্ড সমর্থন দেবে বলে তিনি জানান। এছাড়া আসিয়ানের সেক্টরাল পার্টনার হতেও বাংলাদেশকে সমর্থনের আশ্বাস দেন থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ২০১০ সালে থাইল্যান্ডের রাজকন্যা প্রিন্সেস শিরিন ধর্নের বাংলাদেশ সফরের কথা উল্লেখ করে আগামী বছরের শুরুর দিকে আবারও রাজকন্যা বাংলাদেশ সফরে এলে খুশি হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের পারস্পরিক সফরের কথাও বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত রাজা ভূমিবলের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। একই সঙ্গে বর্তমান রাজাকে অভিনন্দন জানান। সৌজন্য সাক্ষাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও থাইল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাঈদা মুনা তাসনিম উপস্থিত ছিলেন। দুই পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বৈঠক থাইল্যান্ড এলপিজি বোতলিকরণ প্রকল্পে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডন প্রামোদ উইনেই এই আগ্রহ প্রকাশ করেন। বৈঠক সূত্র জানায়, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠকে থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের সুবিধাগুলো তুলে ধরেন। বিশেষ করে ১০০ ইপিজেড প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন তিনি। দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ নতুন স্তরে নিতে কানেকটিভিটি ইস্যুতে আলোচনা হয়। এছাড়া সড়ক ও সমুদ্রপথে দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ মাধ্যম শক্তিশালী করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়। বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে প্রায় ১০ পৃষ্ঠার একটি ইস্তেহার সই হয়েছে। অচিরেই কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীরা ভিসা ছাড়াই একে অন্যের দেশ সফর করতে পারবেন। এ নিয়ে শীঘ্রই দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হবে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিত দুই দেশের মধ্যে এটি হচ্ছে সপ্তম যৌথ কমিশনের বৈঠক। ষষ্ঠ বৈঠকটি হয়েছিল আজ থেকে ১৯ বছর আগে ১৯৯৮ সালে। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কারিগরি সহযোগিতা, মানবপাচার প্রতিরোধ, যোগাযোগ, সামরিক, ক্রীড়া, সংস্কৃতি, পর্যটন এবং শ্রম খাত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। ধাপে ধাপে এ সব বিষয়ে চুক্তি সইয়ের বিষয়ে বৈঠকে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মতি জানিয়েছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে ঢাকায় এসেছেন থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বুধবার দুই দেশের মধ্যে পররাষ্ট্র কর্মকর্তা পর্যায়ের যৌথ কমিশন বৈঠক শুরু হয়। বৃহস্পতিবার দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠক করেন। আজ শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে যৌথ কমিশন বৈঠক শেষ হবে।
×