ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বব্যাংকের এক্সিলেন্সি এ্যাওয়ার্ড পেল ‘নতুন জীবন’

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৭ জুলাই ২০১৭

বিশ্বব্যাংকের এক্সিলেন্সি এ্যাওয়ার্ড পেল ‘নতুন জীবন’

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সারাবিশ্বে বিশ্বব্যাংকের চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের ‘নতুন জীবন’ বা এসআইপিপি-২ প্রকল্পটি জিতে নিয়েছে এক্সিলেন্সি এ্যাওয়ার্ড। এই প্রথম বাংলাদেশে কোন চলমান প্রকল্প বিশ্বব্যাংক কর্তৃক পুরস্কৃত হলো। এর মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন ও নারীর দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখায় বিশ্বব্যাংক থেকে প্রকল্পটিকে পুরস্কারের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিস সূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, রংপুর, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, সিলেট, বরিশাল, খুলনাসহ দেশের ২২ জেলার ৮৮ উপজেলায় সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (এসডিএফ) মাধ্যমে ‘নতুন জীবন তথা লাইভলিহুড ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্ট’ বাস্তবায়িত হচ্ছে। ৩০ লাখেরও বেশি দরিদ্র মানুষ এ প্রকল্পের মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে। উপকারভোগীদের মধ্যে ৯০ শতাংশই নারী। প্রকল্পের আওতায় ছোট ছোট রাস্তা ও স্কুল স্থাপন এবং পানি সমস্যা দূর করা হচ্ছে। প্রকল্পটির মাধ্যমে যুবসমাজসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। প্রকল্পটির মাধ্যমে নারীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে দেয়া হচ্ছে বিশেষ প্রাধান্য। উন্নত জীবিকার সুযোগ সৃষ্টি ও অংশীদারিত্বমূলক ব্যবসার সাহায্যে বাজারে প্রবেশের সুযোগ দেয়ার মাধ্যমে এ প্রকল্প গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন ঘটানোর ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। এছাড়া প্রকল্পটি পুষ্টি সচেতনতা বৃদ্ধি, কৃষিবিষয়ক জ্ঞান সম্প্রসারণ এবং যুব কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির ওপর জোর দিচ্ছে। প্রকল্প এলাকায় বিশেষ অবদান রাখায় বিশ্বব্যাংকের গ্রুপ প্রেসিডেন্ট ড. জিম ইয়ং কিমের কাছ থেকে ‘দক্ষিণ এশীয় অঞ্চল ভাইস প্রেসিডেন্ট ইউনিট (এসএআর ভিপিইউ)’ এ্যাওয়ার্ড অর্জনের স্বীকৃতিও পেয়েছে এটি। দক্ষিণ এশীয় ৩৯টি টিমের মধ্যে এ্যাওয়ার্ডের জন্য পাঁচটি দেশের ছয়টি প্রকল্পকে নির্বাচন করা হয়। এ ৩৯টি টিমের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে একমাত্র ‘এসআইপিপি-২ টিম’ নির্বাচিত হয়েছে। সাধারণত ছয়টি বিশেষ দিক মূল্যায়ন করে বিশ্বব্যাংক থেকে এ পুরস্কার দেয়া হয়। বিশেষ দিকগুলো হলোÑ ক্লায়েন্টের জন্য ফলাফল সরবরাহ; টিম ও টিমের বাইরে সহযোগিতা করা; পরিচালনা ও উদ্ভাবন; জ্ঞান সৃষ্টি, প্রয়োগ ও সম্প্রসারণ, ভঙ্গুরতা, দ্বন্দ্ব ও সন্ত্রাস মোকাবেলা এবং আঞ্চলিক জেন্ডার এ্যাকশন প্ল্যান কার্যকর করা। এ ছয়টি বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে ‘এসএআর ভিপিইউ’ মূল্যায়ন করা হয়েছে, যার সবকটিতেই ‘নতুন জীবন’ প্রকল্প বিশেষ নজর কেড়েছে। বিশ্বব্যাংক প্রকল্পটিতে ২২ কোটি মার্কিন ডলার অর্থায়ন করেছে। বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্বব্যাংকের যে কয়টি প্রকল্প বিশ্বজুড়ে চলমান রয়েছে তার মধ্যে এ প্রকল্পটি খুবই কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। বিষয়টি বিশ্বব্যাংকের অভ্যন্তরীণ অডিটেও উঠে এসেছে। দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, সহযোগিতা, কৃষিবিষয়ক জ্ঞান সম্প্রসারণ এবং যুব কর্মসংস্থানে প্রকল্পটি বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। তাই প্রকল্পটিকে এসএআর ভিপিইউ এ্যাওয়ার্ড দেয়া হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি ও গর্বের বিষয়। এ প্রকল্পের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, প্রকল্পটি দারিদ্র্য বিমোচন ও নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। এর ফলশ্রুতিতেই এসেছে বিশ্বব্যাংক টিমের এ্যাওয়ার্ড। এ পুরস্কার বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের জন্য অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। উল্লেখ্য, সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এসডিএফ) ২০০০ সালে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অধীনে একটি স্বায়ত্তশাসিত ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এসডিএফের মাধ্যমেই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর আগে ২০০৩ সালে ক্ষুদ্র পাইলট প্রকল্প হিসেবে প্রথম বাংলাদেশের দুটি দরিদ্রতম জেলায় প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল। পরবর্তীতে এটি পর্যায়ক্রমে আরও ১৪ জেলায় সম্প্রসারিত হয়।
×