ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নীরবে বিদায় নিয়েছে এল নিনো;###;সীমান্তবর্তী ভারতের কয়েকটি রাজ্যে অব্যাহত রয়েছে বন্যা ও ভারি বর্ষণ

ধেয়ে আসছে ঘোর বর্ষার মৌসুমি বায়ু, বন্যা দীর্ঘায়িত হতে পারে

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৭ জুলাই ২০১৭

ধেয়ে আসছে ঘোর বর্ষার মৌসুমি বায়ু, বন্যা দীর্ঘায়িত হতে পারে

নিখিল মানখিন ॥ দেশের বিভিন্ন জেলায় চলমান বন্যা দীর্ঘায়িত হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সীমান্তবর্তী ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে বন্যা ও ভারি বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকায় মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ চলছে। বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় রয়েছে মৌসুমি বায়ু। বৃহস্পতিবারও দেশের প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। দেশে প্রবল বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে চলমান বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জনকণ্ঠকে জানান, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মার পানিসমতল বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এই সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি আগামী ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। তবে সুরমা ও কুশিয়ারার পানিসমতল হ্রাস পাচ্ছিল। পর্যবেক্ষণাধীন ৯০ পানিসমতল স্টেশনের মধ্যে আটান্নটির বৃদ্ধি এবং ২৪ স্টেশনে হ্রাস পাচ্ছিল। অপরিবর্তিত ছিল দুটি স্টেশনের পানিসমতল। বিপদসমীর ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল ছয় নদীর পানি। সুরমা নদীর পানি কানাইঘাটে ৫৮ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারার পানি অমলশীদ স্টেশনে ৬৪ সেমি., শেওলায় ৬৫ সেমি. ও শেরপুর-সিলেটে ১৩ সেমি., কংস নদীর পানি জারিয়াজাঞ্জাইলে ৬০ সেমি. ও মাতামুহুরীর পানি চিরিলা স্টেশনে পানি ৪৩ সেন্টিমিটার বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সীমান্তবর্তী ভারতের কয়েকটি রাজ্যে ভারি বর্ষণ ও বন্যা অব্যাহত এএফপি’র বরাত দিয়ে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) বৃহস্পতিবার জানায়, ভারতের অসম রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৮ জনে দাঁড়িয়েছে। হাজার হাজার লোক বিভিন্ন অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে উঠেছে। এ বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির তেমন কোন লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। বৃহস্পতিবার কর্মকর্তারা একথা জানান। অসমের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার সিনিয়র কর্মকর্তা রাজিব প্রকাশ বড়ুয়া এএফপিকে বলেন, মৌসুমি বর্ষণ অব্যাহত থাকায় রাজ্যটিতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটছে। তিনি বুধবার সর্বশেষ এ মৃতের সংখ্যা নিশ্চিত করেন। রাজ্যের প্রধান নগরী গুয়াহাটি থেকে বড়ুয়া বলেন, গত এপ্রিলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এ রাজ্যে মৌসুমি বর্ষণ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৮ জন মারা গেছে। সরকারী কর্মকর্তারা জানান, এ পর্যন্ত অসমের ১৫ জেলার ৮৬৩ গ্রামের প্রায় তিন ৯৫ হাজার লোক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আবহাওয়ার ‘এল-নিনো’ অবস্থাটা (বৃষ্টি রোধকারী) কেটে গেছে নীরবে। ফলে বাংলাদেশ, ভারত, চীনেও বর্ষারোহী মৌসুমি বায়ুমালা ক্রমেই জোরদার হয়ে উঠেছে। সারাদেশে বিস্তার লাভ করার পরও অনেক সময় দুর্বল হয়ে পড়ে মৌসুমি বায়ু। এবার দীর্ঘদিন ধরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে এই বায়ু। ভারতের বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ থেকে শুরু করে উজানের দিকে এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অসম, ত্রিপুরা, মিজোরাম ও মেঘালয় ইত্যাদি পাহাড়ী রাজ্যে প্রবল বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। ভারত থেকে উজানের ঢল নেমে আসার মাত্রা যদি আরও বেড়ে যায় তাহলে পাহাড়ী ঢল ও বন্যার প্রকোপ বাড়তে পারে। আবহাওয়া অধিদফতর ইতোমধ্যে জানিয়েছে, জুলাই মাসের প্রথমার্ধে সুরমা, কুশিয়ারা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকাসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে (বৃহত্তর চট্টগ্রামের পার্বত্য অববাহিকা) ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। এ মাসে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবজনিত বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলের (রাজশাহী-রংপুর) কিছু কিছু স্থানে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া জুলাইয়ে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি মৌসুমি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এরমধ্যে অন্তত একটি ঘোর বর্ষার ঘনঘটা সৃষ্টিকারী মৌসুমি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়, এ মাসে বাংলাদেশে ‘স্বাভাবিক’ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও গত জুন মাসে সারাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে দেশের বিভিন্ন বিভাগ, জেলাওয়ারি বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রে তারতম্য বা অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়। যেমন- সিলেট বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে সর্বোচ্চ ৫০ ভাগ বেশি, চট্টগ্রাম বিভাগে ২১ ভাগ, ঢাকা বিভাগে ২ ভাগ বেশি বর্ষণ রেকর্ড করা হয়। অথচ রাজশাহী বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩৬ ও রংপুর বিভাগে ২৮ দশমিক ৫ ভাগ কম বৃষ্টিপাত হয়। আর গত মে মাসে সারাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৬ দশমিক ১ ভাগ কম বৃষ্টি হয়। আবার এপ্রিলে ১০৬ ভাগ এবং মার্চে ১৫১ ভাগ বেশি বৃষ্টিপাত হয়। যা ৩০ বছরের মধ্যে ওই মৌসুমের জন্য সর্বোচ্চ রেকর্ড।
×