ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বেশি এসেছে কাতার, ওমান, বাহরাইন ও কুয়েত থেকে

বড় বড় দেশ থেকে কম রেমিটেন্স এসেছে

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ৭ জুলাই ২০১৭

বড় বড় দেশ থেকে কম রেমিটেন্স এসেছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নানা পদক্ষেপের পরও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসী আয় কমেছে প্রায় সাড়ে ১৪ শতাংশ। এ সময় বেশিরভাগ দেশ থেকেই কমেছে রেমিটেন্স। বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ে যেসব দেশের বড় ভূমিকা রয়েছে, সেসব দেশ থেকেই এ সময়ে বেশি কমেছে রেমিটেন্স। এগুলো হলোÑ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, কুয়েত, যুক্তরাজ্য ও ওমান। প্রতিবছর দেশে যে পরিমাণ রেমিটেন্সের অন্তঃপ্রবাহ ঘটে তার প্রায় ৮০ শতাংশ আসে এই সাত দেশ থেকে। তবে সার্বিকভাবে বাংলাদেশের প্রধান শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে প্রবাসী আয় কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। এর জন্য বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দরপতনকে দায়ী করা হচ্ছে। কেননা জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ায় সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কুয়েতের মতো উপসাগরীয় দেশগুলোর অর্থনীতি ক্ষতির মুখে পড়েছে। এতে ওইসব দেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের বেতন ও মজুরি কমে গেছে। এছাড়া রেমিটেন্স কমার পেছনে ডলারের সঙ্গে বেশকিছু দেশের স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন, সৌদি আরবে আকামা (বসবাসকারী পরিচয়) সংক্রান্ত খরচ, প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিদেশে স্থায়ী হওয়া ও অবৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠানোর প্রবণতা বৃদ্ধি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র বলছে, প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুত হওয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশীরা অবৈধ উপায়ে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার করে দেশে অর্থ পাঠাচ্ছেন। এতে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স প্রবাহ কমে গেছে। তাই সম্প্রতি সময়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে নতুন অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় বেশ কিছু উদ্যোগের কথাও জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ প্রবাসী আয় প্রেরণ ব্যয় হ্রাস, বিদেশে কর্মরত ব্যাংকের শাখা ও এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোকে রেমিটেন্স প্রেরণে দক্ষ করে তোলা, প্রবাসীরা যেসব দেশে কর্মরত সেসব দেশের স্থানীয় ব্যাংকগুলোর সঙ্গে এ দেশের ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ড্রয়িং ব্যবস্থা জোরদারকরণ এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স প্রেরণে উদ্বুদ্ধকরণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের পুরো সময়ে দেশে মোট রেমিটেন্স এসেছে এক হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। যা গত ৫ অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। আগের অর্থবছরে রেমিটেন্স আসার পরিমাণ ছিল এক হাজার ৪৯৩ কোটি ১১ লাখ ডলার। সে হিসেবে গত অর্থবছরে প্রবাসী আয় কমেছে ২১৬ কোটি ডলার বা ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এই নিয়ে টানা দুই অর্থবছর রেমিটেন্স আয় কমল। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তার আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় আড়াই শতাংশ কমে যায় প্রবাসী আয়। ওই অর্থবছরে দেশে রেমিটেন্স এসেছিল ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ১১ লাখ ডলার। সেখানে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আসে ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। আর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রেমিটেন্স আসে ১ হাজার ৪২২ কোটি ৮৩ লাখ ডলার। প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মধ্যপ্রচ্যের দেশগুলো থেকে রেমিটেন্স এসেছে ৭৩০ কোটি ৭১ লাখ ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৮৫৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ফলে আগের অর্থবছরের তুলনায় গত অর্থবছরে রেমিটেন্স কম এসেছে ১২৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার বা ১৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব থেকে ২৯৫ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের রেমিটেন্স আসলেও গত অর্থবছরে এসেছে ২২৬ কোটি ৭২ লাখ ডলার। এ সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে রেমিটেন্স আসে ২০৯ কোটি ৩৫ লাখ ডলার, যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল ২৭১ কোটি ১৭ লাখ ডলার। গত অর্থবছরে কুয়েত থেকে রেমিটেন্স এসেছে ১০৩ কোটি ৩৩ লাখ ডলার, যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল প্রায় ১০৪ কোটি ডলার। ওমান থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৯০ কোটি ৯৬ লাখ ডলারের রেমিটেন্স আসলেও গত অর্থবছর এসেছে ৮৯ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। গত অর্থবছরে বাহরাইন থেকে ৪৩ কোটি ৭১ লাখ ডলারের রেমিটেন্স আসে, যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল ৪৮ কোটি ৯৯ লাখ ডলার। গত অর্থবছরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ লিবিয়া ও ইরান থেকেও রেমিটেন্স কমেছে। তবে এ সময়ে কাতার থেকে রেমিটেন্স বেড়েছে। আগের অর্থবছরে কাতার থেকে রেমিটেন্স আসে ৪৩ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। যা গত অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অর্থবছরে ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলো থেকেও কমেছে প্রবাসী আয়। এ সময়ে ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলো থেকে প্রবাসী আয় এসেছে ৫৪৬ কোটি ২২ লাখ ডলার। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬৩৭ কোটি ৬১ লাখ ডলার। এ হিসাবে এসব দেশগুলো থেকে গত অর্থবছরে রেমিটেন্স কমেছে ৯১ কোটি ৪০ লাখ ডলার বা ১৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৬৮ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের রেমিটেন্স এসেছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশটি থেকে রেমিটেন্স এসেছিল ২৪২ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। মালয়েশিয়া থেকে গত অর্থবছরে রেমিটেন্স এসেছে ১১০ কোটি ৩৬ লাখ ডলার। যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল ১৩৩ কোটি ৭১ লাখ ডলারে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে যুক্তরাজ্য থেকে ৮৬ কোটি ৩২ লাখ ডলারের রেমিটেন্স এলেও গত অর্থবছরে এসেছে ৮০ কোটি ৮১ লাখ ডলার। রেমিটেন্স কমেছে সিঙ্গাপুর, হংকং ও অস্ট্রেলিয়া থেকেও। গত অর্থবছরে সিঙ্গাপুর থেকে ৩০ কোটি, হংকং থেকে ১ কোটি ৮৯ লাখ ও অস্ট্রেলিয়া থেকে ৫ কোটি ২০ লাখ ডলারের রেমিটেন্স আসে, যা আগের অর্থবছরে ছিল যথাক্রমে ৩৮ কোটি ৭২ লাখ ডলার, ২ কোটি ৫৬ লাখ ডলার ও ৬ কোটি ৯১ লাখ ডলার। তবে গত অর্থবছরে ইতালি, জার্মানি, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে রেমিটেন্স বেড়েছে। গত অর্থবছরে ইতালি থেকে ৫১ কোটি, জার্মানি থেকে ৩ কোটি ১৭ লাখ, জাপান থেকে ২ কোটি ২৯ লাখ ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ৮ কোটি ডলারের রেমিটেন্স এসেছে।
×