ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তার পরও শাকিব খান...

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ৬ জুলাই ২০১৭

তার পরও শাকিব খান...

গত বৃহস্পতিবার ছিল ঈদের চর্তুথ দিন। নির্ধারিত ছুটি এক দিন আগেই শেষ হয়েছে কিন্তু, বেশিরভাগ জনসাধারণের মনে ঈদের আমেজ ছিল তখনও জমাট বাঁধা! যেভাবেই হোক অনন্ত পাঁচ থেকে ছয় দিনের ছুটি কাটাতে হবে, এমন পরিকল্পনা প্রায় সকলেরই! যে কারণে রাজধানী শহর ঢাকাও ছিল কোলাহল ও জনচাপ মুক্ত। কিন্তু ঢাকার বিনোদন পাড়াগুলোয় ছিল অগণিত মানুষের উচ্ছ্বাস। চুম্বকের আকর্ষণের মতো মানুষদের টানছিল বিনোদন কেন্দ্রেগুলোতে। তবে ঈদ আনন্দের সঙ্গে নতুন সিনেমা দেখার যে রেওয়াজ তা কতটা বেপরোয়া এটা হলে গিয়ে সিনেমা না দেখলে বোঝার উপায় নেই। ঈদে সিনেমা দেখার প্লান আগে থেকেই করা ছিল, কিন্তু টেলিভিশনের খবরে দেখা সিনেমা হলের সামনে মানুষের উপচে পরা ভিড়, কাউন্টারে বাংলাদেশ-ভারত ক্রিকেট ম্যাচের টিকেট নেয়ার মতো লাম্বা লাইন। একটু আরামের কথা বিবেচনা করে অফিস কলিগকে সঙ্গে নিয়ে ঈদের চতুর্থ দিন বেরিয়ে পরলাম সিনেমা দেখার মহারণে। প্রথমে নিউমার্কেটের বলাকা, শো শুরুর প্রায় দুঘণ্টা আগেই আমরা হলের গেটে। ভিতরে তখন তিন ছয়টা শো চলছে । টিকেট কাউণ্টার বন্ধ। খুলবে প্রায় এক ঘণ্টা পর। চলবে ‘বস২’। কিন্তু আমাদের মিশন ‘নবাব’! মূলত বাংলার নায়ক শাকিব খানের নবাবী দেখার ইচ্ছা আমাদের। বলাকায় বেশি সময় না দাঁড়িয়ে আসে পাশে কোথায় ‘নবাব’ চলছে খোঁজ শুরু হলো। একজন শুভাকাক্সক্ষী জানালেন ‘ছয়টা নয়টা দেখতে চাইলে নয়া পল্টনের জোনাকী ছাড়া টিকেট পাওয়া যাবে না, জোনাকী যান’। বুঝতে পাড়লাম সময় নষ্ট করা বোকামি। রিক্সা নিলাম। নয়া পল্টন। ছয়টার শো শুরু হতে দেড় ঘণ্টা বাকি। হলের সামনে মানুষের ভিড় ভালই। টিকেট কাউন্টারে গিয়ে বললাম, দুটা টিকেট দেন। উত্তর। নেই। শেষ। পাশেই লম্বা লম্বা দুটি লোক ঘুরছে, হাতের মধ্যে বাসের কন্ডাকটরের মতো টাকা ভাঁজ করা। এক জনের সঙ্গে কথা বলতে বলতে পকেট থেকে টিকেট বের করে দিচ্ছে। বুঝতে পাড়লাম উনিই আমাদের নবাবের কাছে নিয়ে যেতে পারবেন। গিয়ে বললাম, দুটা ডিসির টিকেট লাগবে। উত্তর দেয়া যাবে। দাম তিন শ’ টাকা। টিকেটের আসল মূল্য কিন্তু আশি টাকা অর্থাৎ এক শ’ ষাট টাকা। শখের দাম লাখ টাকা! কথা না বাড়িয়ে দুটা টিকেট নিলাম। শো শুরুর এখনও চল্লিশ মিনিট বাকি এরই মধ্যে হল থেকে ফুটপথ, ফুটপথ থেকে রাস্তা লোকারণ্য। কোলহলের মধ্যে সিনেমা নিয়ে অনেকের মনোবাসনা কান পেতে শুনতে বেশ লাগছিল। ‘বস ২ দেইখা লাভ নাই, বস আর বস২ একই’, ‘আরে নবাবের মইধ্যে শাকিব খানরে যা দেহাই বো না’। বোঝাই যাচ্ছে ‘নবান’ সিনেমা হিসেবে ভাল-মন্দ যাই হোক কেন তার থেকে, দর্শকের অধিক আগ্রহ শাকিবের নতুন পুরুষালী রূপে! আবশ্য এরকম আগ্রহ আমদেরও। ছয়টা বাজার আগ আগ ক্ষণে জোনাকীর সমনে মানুষ আর ধরে না। ঘরের গৃহবধূ থেকে প্রজন্মের বঙ্গ ললনা! আরও আবাক করার বিষয় কোলে ফুট ফুটে দুধের শিশু। হয়ত শাকিব খানের নতুন লুক দেখাতে শিশুটিও নিয়ে আসা হয়েছে! অবশেষে হলের অন্দর রাজ্যে প্রবেশ করলাম। ঢুকেই দেখছি, যে যার মতো ছিটে বসে পড়ছে, আসন বিন্যাসের কোন বালাই নেই। অবস্থা বুঝে বসে পড়লাম। প্রায় প্রতিটি সারিতে দু- থেকে তিনটি চেয়ার ভাঙ্গা। পর্দায় সিনেমা শুরু হয়নি। বিজ্ঞাপন চলছে। আসন, ভাঙ্গাচোরা যাই ছিল না কেন সব ফিলাপ। কিন্তু তারপরও দর্শক ঢুকছে। পারেত এক সিটে দুজন বসবে! সিনেমা শুরু হলো। আমাদের মনোযোগ সিনেমায়, দর্শকদের শাকিবে। অফুরন্ত মুখ দিয়ে বাজানো শীষ, আর হৈ হুল্লড়ে শেষ হলো, শাকিব খানের নবাবী। নবাব শাকিব খানের ‘নবাব’ সিনেমা নিয়ে কোন জ্ঞানগর্ভ বিবেচনা দরকার নেই। পর্দায় শাকিব খানের নতুন লুক ছাড়া বাকি সব পুরনো, এক কথায় সাত ঘাটের জল এক করে একটি শহুরে ককটেল বানিয়েছেন জয়দেব মুখার্জী ও আব্দুল আজিজ। অবশ্য দর্শকদের আশা এবং প্রাপ্তি কেবল এতটুকু। যৌথ প্রযোজানার নীতিমালা ভঙ্গের অভিযোগে ‘নবাব’ নিয়ে যে দক্ষযজ্ঞ হয়েছিল সিনেমা সম্পর্কে সাধরণের আগ্রহের এটাও ছিল একটা কারণ। অন্যদিকে ছবি মুক্তির কয়েক দিন আগে, শাকিব খানের দাম্ভিকতাপূর্ণ ভুল তথ্যের আলোড়িত সাংবাদিক সম্মেলন, সবমিলিয়ে নবাবের সিনেমেটিক যোগ্যতার আসল সত্যতা ঢাকা পড়ে যায়। ‘নবাব’ হিট, শাকিব খানের বদৌলতে! ঈদ উপলক্ষে চলছে, শাকিব খানের আর এক সিনেমা রাজনীতি। অবশ্য এই সিনেমার ভেতরের রাজনীতি (আলোচিত অপু-শাকিব জুটি) এবং যৌথ প্রযোজনার বিপরীতে এক শ’ ভাগ দেশী প্রযোজনার ছবি প্রর্দশনের জন্য হল সঙ্কট ও বিভিন্ন সময়ে রাজনীতি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন খবর দর্শকের দৃষ্টি আর্কষণ করেছে, কৌতূহল বাড়িয়েছে। সমগ্র দেশের চল্লিশটি সিনেমা হলের সব আসন পূর্ণ করে দর্শকরা দেখছে শাকিব খানের রাজনীতি। অবশ্য এ সিনেমা নিয়ে তাকে তেমন একটা সরব হতে দেখা যায়নি। গেল বছর শাকিব খান যৌথ প্রযোজনার সিনেমার তালিকায় নিজের নাম লেখন এবং ‘শিকারী’ সিনেমার মধ্যমে দুই বাংলায় নতুন রূপে আলোচনায় আসেন। তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে এমন জাঁকজমক পূর্ণ আলোচনা আর হয়নি। শাকিব উচ্ছ্ব¦সিত! যে করণে তিনি এখন যৌথ প্রযোজনা ছবির নিয়মিত নায়ক। আগামীতে তার অভিনীত বেশিরভাগ সিনেমা এই ধারণাই পরিষ্কার করছে। শাকিবের চকচকে বাহারি রূপে দর্শকদের আপাতত মনোযোগ! একথা বলতেই হবে! অশেষ আলোচনা সমালোচনার এবং ব্যক্তিগত দম্ভ’র পরও দর্শক কিন্তু শাকিবেই মুগ্ধ! এখনো, বাংলাদেশে অসংখ্য সিনেমাপ্রেমীর স্বপ্নের নায়ক তিনি! কিন্তু শাকিবের স্বপ্ন কতটা রঙিন তার জন্য হয়ত অপেক্ষা করতে! শাকিব এখন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিবার থেকে বহিষ্কৃত হওয়া শিল্পী। দেশীয় চলচ্চিত্রে তার উপস্থিতি নিয়ে আমরা আপাতত সন্ধিহান! তাহলে, বেঁচে থাকার জরুরী অনুষঙ্গ বিনোদন, তার জন্য কী আমাদের অন্যের আকাশে উঁকি মারতে হবে!
×