ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

লোকনাট্য দলের তিন যুগ পূর্তি উৎসব উদ্বোধন

প্রকাশিত: ০৬:১২, ৬ জুলাই ২০১৭

লোকনাট্য দলের তিন যুগ পূর্তি উৎসব উদ্বোধন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালাজুড়ে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। ঈদ-উল-ফিতরের ছুটির পর বুধবার একাডেমি যেন রূপ নিয়েছে চিরচেনা মুখরতায়। মেঝেতে রয়েছে হলুদ গাঁদা ফুল দিয়ে নানা আঙ্গিকের সাজ। যেদিকে তাকানো যায় সেদিকেই হলুদ রংয়ের ছড়াছড়ি। তরুণ-তরুণী নাট্যকর্মীদের গায়ে হলুদ রংয়ের টি-শার্ট, ব্যানারেও হলুদের সমারোহ। সেখানে শিল্পানুরাগীদের সমাগমের কারণ লোক নাট্যদলের তিন যুগ পূর্তির উৎসব। মূূল মিলয়ানতনের ভেতরের লবিতে সাজানো হয়েছে উৎসবের উদ্বোধনী মঞ্চ। তার একপাশে আছে একটি গ্রান্ড পিয়ানো। অতিথিরা যারাই আসছেন তাদের গোলাপ আর বেলুন দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হচ্ছে। উদ্বোধনী আয়োজনের পুরোটা জুড়েই ছিল ভিন্নতা। সন্ধ্যায় মনির হোসেনের পিয়ানো সুর দিয়ে সূচনা হয় চারদিনব্যাপী এই উৎসবের। অপূর্ব সেই বাদন দোলা দিয়ে গেল সবার মনে। তারপর পরই লোক নাট্যদলের শিল্পীরা পিয়ানোর সুরে সুরে গাইলেন ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা/ আমাদের এই বসুন্ধরা’ গানটি। এরপর লোক নাট্যদলের প্রাণপুরুষ লিয়াকত আলী লাকীর লেখা ও সুর করা ‘এ মাটি নয় জঙ্গীবাদের/এ মাটি মানবতার গানটি’ গাওয়ার পাশাপাশি নৃত্যান্দনের শিল্পীরা পরিবেশন করে নৃত্য। আনুষ্ঠানিকভাবে উৎসবরে উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ। এর পরপরই ছিল সংক্ষিপ্ত আলোচনা পর্ব। দলের প্রতিষ্ঠাতা ও অধিকর্তা লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি সচিব ইব্রাহীম হোসেন খান, সম্মানিত অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের সেক্রেটারি জেনারেল আকতারুজ্জামান। লিয়াকত আলী লাকী বলেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নাট্যধারাকে সামনে রেখেই তিন যুগের এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছে লোক নাট্যদল। আর এ সময়ে লোকজ ধারার নাটক থেকে শুরু করে শেক্সপিয়ার, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, মুনীর চৌধুরী রচিত নানা বিষয়ধর্মী প্রযোজনা মঞ্চে আনা হয়েছে। একইসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে উপজীব্য করেও নাটক নির্মাণ করা হয়েছে। এভাবেই আমরা মূল ধারার সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিয়েছি। আমাদের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কথা বলতেই চাই সেটি হচ্ছে আমরা নিয়মিতভাবে শিশুদের নিয়ে কাজ করে গেছি এবং আগামীতেও সেটি অব্যাহত থাকবে। উদ্বোধনী দিনে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ছাড়াও প্রদর্শিত হয় দুটি নাটক। সুকুমার রায়ের ‘অবাক জলপান’ এবং বাংলাদেশের সর্বাধিক মঞ্চায়িত নাটক তারিক আনাম খান রূপান্তরিত মলিয়েরের ‘কঞ্জুস’। দুটি নাটকেরই নির্দেশনা দিয়েছেন দিয়েছেন লিয়াকত আলী লাকী। এই উৎসবে লিয়াকত আলী লাকী নির্দেশিত ৮টি নাটকের প্রদর্শনী হবে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তন ও এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে। উৎসবের দ্বিতীয় দিন আজ বৃহস্পতিবার সাড়ে ৬টায় সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে নাটককেন্দ্রিক আলোচনা। আলোচনা শেষে মঞ্চায়ন হবে ডাঃ আব্দুস সেলিম অনূদিত গাও সিং জিয়ানের নাটক ‘মাঝরাতের মানুষেরা’। তৃতীয় দিন শুক্রবার বিকেল ৪টা থেকে অনুষ্ঠিত হবে তিন নাটকের প্রদর্শনী। প্রযোজনাগুলো হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনালেখ্য ‘মুজিব মানে মুক্তি’ এবং রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি অবলম্বনে ‘ডাকঘর’ ও ‘রথযাত্রা’। একই দিনের সন্ধ্যায় এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চায়ন হবে ময়মনসিংহ গীতিকা অবলম্বনে পদাবলী যাত্রা ‘সোনাই মাধব’। উৎসবের সমাপনী দিন শনিবার। এদিন সকাল ১১টায় একাডেমির সেমিনার কক্ষে ‘লোক নাট্যদলের কর্মমুখর তিন যুগ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। সমাপনী সন্ধ্যায় এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হবে নাসরীন মুস্তাফা রচিত নাটক ‘লীলাবতী আখ্যান’। থিয়েটারওয়ালা রেপার্টরির ‘জবর আজব ভালোবাসা’ নাটকের উদ্বোধন শিল্পকলায় থিয়েটারওয়ালা রেপার্টরির ‘জবর আজব ভালোবাসা’ নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে বুধবার সন্ধ্যায়। অন্তন চেখভের নাটক অবলম্বনে এটি অনুবাদ করেছেন মোবারক হোসেন খান। তিনটি চরিত্রে সাজানো প্রযোজনাটির রূপান্তর ও নির্দেশনা দিয়েছেন সাইফ সুমন। নাটকের কাহিনীতে দেখা যায়, প্রয়াত স্বামীর শোকে সারাক্ষণ বিলাপ করতে থাকা গৃহকর্ত্রী প্রভার ওপর ভীষণ বিরক্ত বাসার কেয়ারটেকার সবুর। তার কাছে জীবন মানে খাও-দাও-ফুর্তি করো। কিন্তু প্রভা মৃত স্বামীর প্রতি এতটাই কাতর যে, দিন-দুনিয়া ভুলে গৃহবন্দী জীবনযাপন করছে। একদিন সন্ধায় কাঁটাবনের এ্যানিম্যাল ফুড ব্যবসায়ী নাভিদ বাসায় আসে প্রভার সঙ্গে দেখা করতে। নাভিদ জানায়, প্রভার স্বামী তার দোকান থেকে নিয়মিত কুকুরের জন্য খাবার কিনতো এবং বকেয়া বিল বাবদ তার কাছে পঞ্চাশ হাজার টাকা পাওনা আছে। সে জানায় টাকাটা শোধ করে দেবে কিন্তু তাকে দুইদিন সময় দিতে হবে। নাভিদ জানায়, টাকাটা তার আজই লাগবে। একজন টাকা দিতে পারবে না, আরেকজন টাকা না নিয়ে যাবেই না। দু’জনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের এক পর্যায়ে নাভিদ বলে, এসব টাকা না দেবার কৌশল। দু’জনের কাথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে নাভিদ আবিষ্কার করে সে প্রভাকে ভালবেসে ফেলেছে এবং সে প্রভাকে প্রস্তাব দিয়ে ফেলে। প্রভা শুনে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে, নাভিদকে গুলি করে মেরে ফেলতে চায়। ঘরে থাকা স্বামীর পিস্তলও নিয়ে আসে। কিন্তু সে জানে না কীভাবে গুলি চালাতে হয়। এক সময়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের টপটেরর নাভিদের কাছে পিস্তল চালানো ডাল-ভাত। প্রভা তার কাছে পিস্তল চালানো শিখতে চায়। অতঃপর এই পিস্তল চালানো শেখাতে ও শিখতে গিয়ে দু’জন আরও কাছাকাছি চলে আসে। দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক আরও নিবিড় হয় এবং দু’জনই পরস্পরকে ভালবাসতে সম্মত হয়। নাটকটির তিনটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন রিয়াজ হোসেন, সংগীতা চৌধুুরী ও রামিজ রাজু।
×