ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এ মাসের শেষ সপ্তাহে লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া

প্রকাশিত: ০৬:১১, ৬ জুলাই ২০১৭

এ মাসের শেষ সপ্তাহে লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া

শরীফুল ইসলাম ॥ লন্ডন সফরে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। চিকিৎসা, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কিছুদিন একান্তে সময় কাটানো ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে এ মাসের শেষ সপ্তাহে তিনি লন্ডন যাচ্ছেন। এ ছাড়া এ বছর নবেম্বরে তিনি ভারত সফরে যেতে চান। এ জন্য কূটনৈতিক তৎপরতাও শুরু করেছেন। ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সবুজ সঙ্কেত পেলে ভারত সফরের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করবেন তিনি। সূত্র মতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে খালেদা জিয়ার লন্ডন সফর বিএনপির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এ সফরকালে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক তৎপরতায় অংশ নেবেন। ছেলে তারেক রহমান ও লন্ডন বিএনপির কিছু নেতার সহযোগিতায় তিনি তা করবেন। এ ছাড়া লন্ডন থেকেই তিনি বিজেপি সংশ্লিষ্ট একটি মহলের মাধ্যমে ভারত সফরের বিষয়ে তৎপরতা চালাবেন। জানা যায়, এবার লন্ডন সফরকালে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দলের সাংগঠনিক বিষয়, সহায়ক সরকারের রূপরেখা ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের ব্যাপারে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করবেন। এ ছাড়া নির্বাচন পরিচালনার কৌশল কি হবে এবং এ বিষয়ে দলের কোন্ নেতাকে কোন্ দায়িত্ব দেয়া হবে সে বিষয়েও ছক চূড়ান্ত করা হবে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একান্তে সময় কাটানোর পাশাপাশি লন্ডনে অবস্থানকালে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া তার পা ও চোখসহ শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার চিকিৎসা করাবেন। এ সময় তিনি ছেলে তারেক রহমান, ছেলেবউ ডাঃ জোবাইদা রহমান ও নাতনি জায়মা রহমানের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাবেন। উল্লেখ্য, লন্ডনের কিংসস্টনে ভাড়া বাড়িতে পরিবার নিয়ে থাকেন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান। লন্ডনে গেলে সেখানে বেশিরভাগ সময় কাটান তিনি। সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন। মামলাজনিত কোন সমস্যা না হলে এ মাসের শেষ সপ্তাহে তিনি লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। ইতোমধ্যেই লন্ডনে তার সকল কর্মসূচী ঠিক করা হয়েছে। এ ছাড়া তিনি যে চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা গ্রহণ করবেন সেখানেও যোগাযোগ করা হয়েছে। আর লন্ডন বিএনপি আয়োজিত দলীয় কর্মসূচীও চূড়ান্ত করা হয়েছে। বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও যুক্তরাজ্য কমিটির সাবেক সভাপতি মাহিদুর রহমান ও যুক্তরাজ্য বিএনপির বর্তমান সভাপতি এম এ মালেকসহ ক’জন নেতা বিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়নের কাজ সমন্বয় করছেন। এ ছাড়া লন্ডন থেকে ফেরার পথে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ওমরাহ করতে সৌদি আরবও যেতে পারেন খালেদা জিয়া। এ মাসের ১৭ বা ১৮ তারিখ খালেদা জিয়ার লন্ডনে যাবার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ২০ তারিখে একটি মামলার দিন ধার্য থাকায় এ সময়ে তিনি লন্ডনের উদ্দেশে রওনা দিতে পারছেন না। তবে ২০ তারিখের পর অন্তত এক মাসের মধ্যে যেন মামলাজনিত কোন সমস্যায় পড়তে না হয় এ জন্য তার আইনজীবীদের মাধ্যমে তৎপরতা চালানো হচ্ছে। আর লন্ডন থেকে ফেরার আগ পর্যন্ত জরুরী প্রয়োজনে তার অনুপস্থিতিতে যেন আইনজীবীরা মামলা পরিচালনা করতে পারেন সে ব্যবস্থাও করা হচ্ছে । বিএনপি নেতাকর্মীরা মনে করছেন, ভারতের সহযোগিতা না পাওয়ায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও বিএনপি সেই সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে পারেনি। তাই এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করতে চায় দলটি। আর এ কারণেই বিভিন্ন মাধ্যমে ভারতের ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পর্ক করতে চায় তারা। এর আগে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সেখানে তিনি চোখ ও পায়ের চিকিৎসা নেন। এ ছাড়া লন্ডন বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশ নেয়ার পাশাপাশি ছেলে তারেক রহমানের বাসায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একান্তে সময় কাটান। দুই মাসের বেশি সময় লন্ডনে অবস্থান শেষে ওই বছর ২১ নবেম্বর দেশে ফিরে আসেন তিনি। ২০১৫ সালে খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরের পরই বিএনপির রাজনীতিতে কিছুটা পরিবর্তন আসে। সেখান থেকে এসেই তিনি সর্বস্তরে কমিটি পুনর্গঠন ও জাতীয় কাউন্সিলের তোড়জোড় শুরু করেন। এরই প্রেক্ষিতে গত বছর ১৯ মার্চ জাঁকজমকভাবে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। আর জাতীয় কাউন্সিলের পর ৫৯২ সদস্যের নতুন ঢাউস নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। তবে এ কমিটিতে স্থায়ী কমিটির ৩টি পদসহ বেশ ক’টি পদ শূন্য রয়েছে। এবার লন্ডন সফরকালে এসব পদ পূরণের বিষয়েও ছেলে তারেক রহমানের মতামত নেয়া হবে বলে জানা যায়। আর বিএনপির ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মধ্যে এখনও যে ক’টির কমিটি পুনর্গঠন বাকি আছে সে বিষয়েও খালেদা জিয়া এবার ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে আলাপ করবেন। লন্ডনে যাওয়ার আগে ইতোমধ্যেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বেশ ক’টি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে দলের কিছু সিনিয়র নেতা ও জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবীদের মতামত নিয়েছেন খালেদা জিয়া। তাদের মতামত অনুসারে ইতোমধ্যেই ১ জুলাই থেকে ২ মাসব্যাপী দলের সদস্য সংগ্রহ ও সদস্য নবায়ন অভিযান শুরু হয়েছে। এ ছাড়া ২০ দলীয় জোটের বাইরে সমমনা কিছু রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করেছেন খালেদা জিয়া। বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গেও যোগাযোগ বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, এ মাসেই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া লন্ডন যাবেন। তবে দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি। প্রায় ২ বছর পর তিনি লন্ডন যাচ্ছেন তাই এ সফরের রাজনৈতিক গুরুত্ব আছে। লন্ডন থেকে ফিরে তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা দেবেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান বলেন, খালেদা জিয়া এ মাসের শেষের দিকে লন্ডনে যাচ্ছেন। লন্ডনে গিয়ে তিনি চিকিৎসা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একান্তে কিছুদিন কাটাবেন। এ ছাড়া দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে তিনি নির্বাচন ও সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনা করবেন। এ ছাড়াও তিনি লন্ডন বিএনপির নেতাদের সহযোগিতায় আরও কিছু রাজনৈতিক কর্মসূচীতে অংশ নিতে পারেন। তবে খালেদা জিয়া ভারত সফরে যাচ্ছেন কি না তা এখনও জানি না। তবে ভারত আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র। অতীতেও তিনি ভারত সফর করেছেন ভবিষ্যতেও ভারত সফরে যেতে পারেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএনপি নেতা জানান, খালেদা জিয়া এ মাসের শেষ সপ্তাহে লন্ডন যাচ্ছেন। লন্ডনে চিকিৎসা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একান্তে কাটানোর পাশাপাশি তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আরও কিছু কর্মসূচীতে অংশ নেবেন। এ ছাড়া সহায়ক সরকারের রূপরেখা, সহায়ক সরকারের দাবি আদায় না হলে কি ধরনের আন্দোলন করা যেতে পারে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই ও দলীয় কিছু বিষয় নিয়ে ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে একান্তে আলোচনা করবেন। আর এ বছর নবেম্বর মাসে প্রতিবেশী দেশ ভারত সফরেও যেতে চান খালেদা জিয়া। ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সবুজ সঙ্কেত পেলে ভারত সফরের যাবতীয় প্রস্তুতি চূড়ান্ত করবেন তিনি।
×