ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বড় অঙ্কের বাজেট ঘাটতি মেটাতে বিকল্প চিন্তাভাবনা ॥ মুহিত

প্রকাশিত: ০৬:১০, ৬ জুলাই ২০১৭

বড় অঙ্কের বাজেট ঘাটতি মেটাতে বিকল্প চিন্তাভাবনা ॥ মুহিত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বড় অঙ্কের বাজেট ঘাটতি মেটাতে বিকল্প চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন না হওয়ায় রাজস্ব আয়ে ২০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হবে। এটা পূরণ করা কঠিন। এ বিষয়ে এখনও করণীয় নির্ধারণ করা হয়নি। তবে শীঘ্রই বিকল্প ঠিক করা হবে। আগামী অর্থবছরের সময় পরিবর্তনের আভাস দিয়ে অর্থমন্ত্রী আরও বলেছেন, এটা নিয়ে দেশে আরও বেশি পাবলিক ডিবেট হতে পারে। এছাড়া চট্টগ্রামের শিকলবাহায় কর্ণফুলী পাওয়ার প্ল্যান্ট নামে ১১০ মেগাওয়াট নতুন প্ল্যান্টের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বারাকা পাওয়ার লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড বিদ্যুতকেন্দ্রটি নির্মাণ করবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রে সরকারী ব্যয় বেড়েছে ৪০ কোটি টাকা। ক্রয়সংক্রান্ত একটি সংশোধনী প্রস্তাবে এ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বুধবার ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার পথে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। বাজেট ঘাটতির বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আই শ্যাল নট স্পিক এ্যাবাউট ইট নাও। আই এ্যাম হ্যাভিং ভেরিয়াস মিটিংস Ñসেগুলোর পরে দেখব কোথায় কী করতে হবে। তিনি বলেন, ২০ হাজার কোটি টাকা ওয়াজ দি এ্যাডিশনাল ইনকাম আন্ডার দি নিউ ভ্যাট ল’। এই ২০ হাজার কোটি টাকা হবে না, কম হবে। হাউ টু মিট ইজ এ ভেরি ক্রিটিক্যাল প্রবলেম; সুতরাং এখনই বলতে পারব না। প্রসঙ্গত, নতুন আইন কার্যকর করে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় ধরে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট সংসদে প্রস্তাব করেছিলেন মুহিত। বিশাল বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৮৭ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর থেকে ৯১ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা আসবে বলে ধরেছিলেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু চারদিকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে ভ্যাট আইন কার্যকর দুই বছর পিছিয়ে দিতে বলেন সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে করে বাজেট বাস্তবায়নে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। যদিও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে রাজস্ব ঘাটতি পূরণে সরকারের সামনে করজাল সম্প্রসারণের বিকল্প থাকবে না। আর সেই চাপ সামাল দিতে হবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে। ভ্যাট আইন স্থগিত হওয়ায় নতুন করে সংসদে পরিকল্পনা নিতে হবে কিনা- এ প্রশ্নে মুহিত বলেন, এর প্রয়োজন নাও হতে পারে। বর্তমানে ১৯৯১ সালের ভ্যাট আইন কার্যকর নয় জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, গত ২০১২ সালের আইনই সংশোধন করে করে চলছে। প্রতিবছরই সংশোধন করি। ভ্যাট আইন কার্যকর স্থগিত করলেও ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প শুরু হয়ে গেছে বলে জানান তিনি। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ঘাটতি থাকলেও বাজেটের আকার পরিবর্তনের কোন সম্ভাবনা নেই। তবে বছরশেষে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী ও সংশোধিত বাজেটের আকারে কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে, বাড়তে পারে ঋণের পরিমাণ। সেক্ষেত্রে জিডিপির আকার বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হবে। বিশাল বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। এই ঘাটতি ব্যাংক ঋণ, সঞ্চয়পত্র বিক্রি, নন-ব্যাংকিং ঋণ ও বৈদেশিক অনুদান থেকে মেটানোর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। শিকলবাহায় হচ্ছে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র চট্টগ্রামের শিকলবাহায় কর্ণফুলী পাওয়ার প্ল্যাট নামে ১১০ মেগাওয়াট নতুন প্ল্যান্টের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বারাকা পাওয়ার লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড বিদ্যুতকেন্দ্রটি নির্মাণ করবে। বিশেষ আইনের আওতায় নতুন এই প্ল্যান্টির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। জানা গেছে, বিদ্যুতকেন্দ্রটি চট্টগ্রামের শিকলবাহাতে স্থাপিত হবে। এ কেন্দ্র থেকে সরকার ১০ দশমিক ৫৪ সেন্ট বা প্রায় ৮ টাকা ২৯৩৩ পয়সা দরে বিদ্যুত কিনবে। প্রকল্পটির মেয়াদ হবে ১৫ বছর। বারাকা পাওয়ার হচ্ছে অনিবাসী বাংলাদেশীদের একটি কোম্পানি। মোট ৬০ জন এনআরবি এ কোম্পানি গঠন করে। ২০০৮ সালে কোম্পানিটি ৫১ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুতকেন্দ্র দিয়ে যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে কোম্পানিটির সহযোগী প্রতিষ্ঠান বারাকা পতেঙ্গা চট্টগ্রামে ৬০ মেগাওয়াটের আরও একটি বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ করে। এখন কর্ণফুলীর নামে ১১০ মেগওয়াট পাওয়ার প্ল্যাট করার দায়িত্ব দিল সরকার। এটি হবে একটি আইপিপি। প্রতিষ্ঠানটি সরকারের সঙ্গে ১৫ বছর মেয়াদী চুক্তি করবে। এছাড়া সরকারী ব্যয় বাড়ল দেশের অন্যতম বড় প্রকল্প পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্পে। নতুন করে এ প্রকল্পে সরকারকে গুনতে হবে ৫ মিলিয়ন ডলার বা ৪০ কোটি টাকা। ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর করা সাধারণ চুক্তির ( জেনারেল কন্ট্রাক্ট) রুশ ফেডারেশন অংশের ক্রেডিট ৫ মিলিয়ন ডলার হ্রাস করা হয়েছে। হ্রাসকৃত এ অংশের ৫ মিলিয়ন ডলার বা ৪০ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকারকে দিতে হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, ২০১৫ সালের চুক্তি অনুযায়ী, পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্পের মোট চুক্তিমূল্য দাঁড়ায় ১ হাজার ২৬৫ কোটি মার্কিন ডলার। প্রতি ডলার ৮০ টাকা হিসাবে ধরা হলেও এতে টাকার অঙ্ক দাঁড়ায় ১ লাখ ১ হাজার ২০০ কোটি। এর মধ্যে রুশ ফেডারেশন দেবে ১১ দশমিক ৩৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থাৎ ৯০ শতাংশ। অবশিষ্ট ১০ শতাংশ দেবে সরকার। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার ও রুশ ফেডারেশনের মধ্যে ১১ দশমিক ৩৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার একটি ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।
×