ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জনকণ্ঠে খবর প্রকাশ

শিকলে বাঁধা সেই শিশু ঝন্টুর পাশে দাঁড়িয়েছে অনেকেই

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৬ জুলাই ২০১৭

শিকলে বাঁধা সেই শিশু ঝন্টুর পাশে দাঁড়িয়েছে অনেকেই

নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর, ৫ জুলাই ॥ দৈনিক জনকণ্ঠে খবর প্রকাশের পর শেরপুরের নকলা উপজেলায় শিকলে বাঁধা সেই শিশু ঝন্টুর পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন। বুধবার বিকেলে জেলা মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি রাজিয়া সামাদ ডালিয়া ও সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট শক্তিপদ পালের নেতৃত্বে একটি টিম টালকী ইউনিয়নের বিবিরচর গ্রামে গিয়ে শিশু ঝন্টুর পাশে দাঁড়ায়। ওইসময় তারা ঝন্টুর চিকিৎসা ব্যয়ভার বহনসহ তার ভরণপোষণে এক বছর পর্যন্ত প্রতিমাসে এক হাজার টাকা করে সহায়তার ঘোষণা দেন। একই সময় হাস-মুরগি পালনের মাধ্যমে স্বাবলম্বিতা অর্জনের লক্ষ্যে নকলা অসহায় সহায়তা সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আবু শরীফ কামরুজ্জামানের দেয়া নগদ ১০ হাজার টাকা ঝন্টুর মা জোসনা খাতুনের হাতে তুলে দেন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি শামীম আহমেদ। এছাড়া ঝন্টু ও তার মার সংসারের উন্নয়নে উপজেলা ছাত্রলীগের তরফ থেকে সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল আজাদ ডেভিড একটি ছাগল কিনে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। আর শিশু ঝন্টুর সহায়তায় মানবাধিকার কমিশন নেতৃবৃন্দের পাশে দাঁড়ানোর সংবাদে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীব কুমার সরকার ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ বদরুজ্জামানও মোবাইল ফোনে সহায়তার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। ওইসময় জেলা মানবাধিকার কমিশনের নেতা শামীম আহমেদ, নকলা শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম সোহাগ, স্থানীয় ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম ও সমাজসেবী হাফিজুর রহমানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। ওইসময় দীর্ঘ ৬ বছর পূর্বে শিশু ঝন্টুর দুপায়ে পুরনো শিকল খুলে দিয়ে তাকে মুক্ত করা হয়। সহায়তার হাত বাড়ানোর কারণে ঝন্টুর মা জোসনা খাতুনসহ উপস্থিত সবাই মানবাধিকার কমিশনসহ অন্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। আর সকলের আদর-সোহাগে ভরে ওঠে শিশু ঝন্টুর মন। উল্লেখ্য, ২ বছর বয়সে বাবা আব্দুস সামাদ মেম্বার মারা গেলে শিশু ঝন্টুকে নিয়ে তার মা জোসনা খাতুনের সংসারে নেমে আসে চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধা। ওইসময় অভাবে তাড়নায় জোসনা খাতুনকে অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতে যেতে হতো। ঝন্টুর বয়স সাড়ে ৬ বছরে গড়ালে বেড়ে যায় তার চঞ্চলতা। আর তখন খাবারের আশায় প্রায়ই ঝন্টু পথচারীদের পিছু নিয়ে মাঝে-মধ্যেই এদিক-সেদিক চলে যেত। ফলে ঝিয়ের কাজ সেরে রাত অবধি খুঁজে ফিরতে হতো ঝন্টুকে। ওই অবস্থায় কিছুটা মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ে ঝন্টু। বিড়ম্বনা আর পরিস্থিতি সামাল দিতে ৬ বছর আগে সন্তান ঝন্টুর পায়ে শিকল পরিয়ে দেয় মা। ওই অবস্থা চলতে চলতে ঝন্টুর বয়স গড়ায় সাড়ে ১২ বছরে। ততক্ষণে তার মানসিক প্রতিবন্ধিতা বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে ওই দীর্ঘ সময় ধরে শিকলে বাধার কারণে ঝন্টুর দুইপায়ের গোড়ালিতে দগদগে ঘা হয়ে যায়। এরপরও তা কারও হৃদয়কেই গলাতে পারেনি। ওই বিষয়ে মঙ্গলবার দৈনিক জনকণ্ঠের শেষ পৃষ্ঠায় ‘৬ বছর ধরে শিকলবন্দী শিশু ঝন্টু’ শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হলে তা দৃষ্টি আকর্ষণ করে মানবাধিকার কমিশনসহ হৃদয়বান অনেকেরই।
×