ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মোহাম্মদ অংকন

ধস রোধে করণীয়

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ৬ জুলাই ২০১৭

ধস রোধে করণীয়

আমরা লক্ষ্য করছি, প্রতিবছরই ভারি বর্ষণে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে। এ যেন একটি নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এত পাহাড় ধস ও প্রণহানির পরও সরকারের পক্ষ হতে এর যথাযথ প্রতিকার দেখা যাচ্ছে না। পাহাড় ধস প্রতিরোধের বিষয়ে গত দু’দশক ধরে যথেষ্ট আলোচনা ও সমালোচনা হয়ে আসছে। ২০০৭ সালে চট্টগ্রাম বন্দর নগরীর তিনটি স্থানে একই দিনে ১২৩ জন মারা যাওয়ার নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর সরকারের উর্ধতন মহলে হৈ চৈ উঠেছিল। বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের সরিয়ে নেয়ার দাবি জোরাল হয়েছিল। কিন্তু আশানুরূপ ফল আমরা লক্ষ্য করিনি। বরং দেখা যায়, প্রতিবার যখন পাহাড় ধস ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে, তখন সরকার ও প্রশাসনের টনক নড়ে। কিছু সময় অতিক্রম হওয়ার পর তারপর দৃশ্য হয় ভিন্ন রকম। তখন সরকার ও প্রশাসনকে নির্বিকার থাকতেই দেখা যায়। রীতিটা কবে পরিবর্তন হবে? পাহাড় ধস ও পাহাড় ধসের প্রাণহানি প্রতিরোধ করতে হলে পাহাড় রক্ষার ব্যাপারে সরকারের কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে। পাহাড় কাটা প্রতিরোধের জন্য সঠিক পদক্ষেপ ও সময়োপযোগী নীতিমালা অবিলম্বে প্রণয়ন করা প্রয়োজন। সে সঙ্গে পাহাড়ের অবৈধ দখলদার, ভূমিদস্যু তথা ডেভেলপার ও রিয়েল এস্টেট কোম্পানিসহ পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িত ও সহযোগিতাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, পাহাড় কোন ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পত্তি নয়। এটা প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পূর্ণ জাতীয় সম্পদ। এর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণই পারে দেশকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে। চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, সিলেট, মৌলভীবাজার ইত্যাদি জেলা মূলত পাহাড় ঘেরা প্রকৃতি নিয়ে সজ্জিত। এ সব এলাকা এক সময় পাহাড় দ্বারা আবৃত ছিল। কালের পরিক্রমায় জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে এসব পাহাড়ী এলাকার বন-জঙ্গল ও পাহাড় কেটে সমান্তরাল করা হয়েছে। এমন চললে অদূর ভবিষ্যতে দেশে পাহাড় থাকবে কিনা তা বলা বড়ই মুশকিল। সবুজ-শ্যামল এই বাংলাদেশে যদি কখনও পাহাড় শূন্য তথা মরুভূমির দেশে পরিণত হয়, তাহলে আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য দুর্ভাগ্যের। কাজেই পাহাড় সংরক্ষণ তথা প্রকৃতি প্রদত্ত এই জাতীয় সম্পদ রক্ষার্থে দেশের সমাজ সচেতন মানুষসহ আপামর জনসাধারণকে এখন থেকে এর প্রতিকারের কথা গুরুত্বসহকারে ভাবতে হবে। বর্ষার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাহাড়ী এলাকায় বিশেষ করে যেখানে যেখানে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে ঘনবসতি রয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে সেখানে বিশেষ নজরদারি ও তদারকি করা প্রয়োজন। দেশের বিভিন্নস্থান থেকে অভাবের তাড়নায় ছুটে আসা উদ্বাস্তু ও নিম্ন আয়ের লোকেরা সাধারণত এসব ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়ে থাকে। এদের কারণে যে পাহাড় ধসে তা বলছি না। আসলে যৌক্তিক কারণ ছাড়া পাহাড় কখনও ধসে না। যেসব কারণে পাহাড় ধসে সেসব কারণ খতিয়ে বের করলে পাহাড় ধস প্রতিরোধ করা সম্ভব। পাহাড়ী এলাকার প্রতিটি পাহাড়েই এখন ভূমিদস্যুদের কুদৃষ্টি ও লোলুপ দৃষ্টি রয়েছে। পাহাড় কাটা নিষিদ্ধ করে আইন প্রণয়ন করা হলেও থেমে নেই পাহাড় কাটা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ লক্ষ্যই করা যায় না। কিন্তু কেন এরকম হয়? প্রশাসন কেন নির্বিকার থাকে? পাহাড় কেটে ক্ষত-বিক্ষত করে রাখে ভূমিদস্যুরা। ফলে দেশে পাহাড় ধসের ঘটনা এখন একটি প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাহাড় কাটার কারণে বৃষ্টির সময় পাহাড়ের বালিগুলো ড্রেনে নেমে আসে এবং পলি জমাতে ড্রেনের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। যার ফলে নগরীতে জলাবদ্ধতা চরম আকারে দেখা দিচ্ছে। তাছাড়া পাহাড় কাটার ফলে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় হচ্ছে বলে সচেতন সবাই ধারণা করছি। অতএব পাহাড় ধস রোধে যা করণীয় তা অবশ্যই পালন করতে হবে, করণীয়গুলো যেন পাহাড়ের মানুষগুলোর মতো মাটি চাপা না পড়ে। ঢাকা থেকে
×