ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বন্যার পদধ্বনি

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ৬ জুলাই ২০১৭

বন্যার পদধ্বনি

সারাদেশে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে, বিশেষ করে উত্তর-পূর্বাংশে ও সিলেট বিভাগে। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব জেলা হলো- গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, জামালপুর, নীলফামারী, সিলেট ও মৌলভীবাজার। এর বাইরেও কোন কোন জেলার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে নতুন করে। তবে তিস্তা, সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি স্থিতিশীল। বিভিন্ন স্থানে কয়েক লাখ মানুষের পানিবন্দী হওয়ার খবরও আছে। বন্যার পানিতে ডুবে কক্সবাজারে মৃত্যুর খবরও মিলেছে। বন্যাকবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে খাদ্যাভাব ও সুপেয় পানির সঙ্কট। পয়োনিষ্কাশন এবং হাঁস-মুরগি-গবাদিপশু সংরক্ষণসহ পশু খাদ্যের অভাব প্রকট। সর্বাধিক যেটা দুঃখজনক তা হলো, কয়েকদিন অতিবাহিত হলেও বন্যাদুর্গত এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণ তৎপরতার খবর নেই। ফলে মানুষ প্রায় অর্ধাহারে দিনাতিপাত করতে বাধ্য হচ্ছেন। স্থানীয়ভাবে কোথাও কোথাও কিছু ত্রাণের ব্যবস্থা নেয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। অনেক দুর্গম-দুর্গত এলাকায় বিশেষ করে প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে ত্রাণ তৎপরতার আদৌ কোন খবর নেই। অনেক জায়গায় কিছু মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থানে খোলা আকাশের নিচে দিনাতিপাত করতে বাধ্য হচ্ছেন। রোগ, শোক, আমাশয়, পেটেরপীড়া, সর্দি-কাশি-জ্বরের প্রকোপও লক্ষণীয়। বীজতলাসহ ফসলহানির খবরও আছে। উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে তিস্তার গজলডোবা বাঁধের সমস্ত গেট খুলে দেয়ায়। আর সিলেটে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে। অতঃপর প্রশাসনের জরুরী কর্তব্য হবে সব রকম সাহায্য-সহায়তা নিয়ে বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ানো। এনজিওগুলো এক্ষেত্রে জরুরী ত্রাণ ও চিকিৎসা সেবার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে পারে। এটা সত্য যে, আষাঢ়ের মাঝামাঝি এবার সারাদেশে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে উত্তরাঞ্চল ও সিলেট ব্যতিরেকে দেশের অন্য নদ-নদীগুলোর পানি বিপদসীমা অতিক্রমের খবর নেই। বাংলাদেশের যেসব অংশে বর্তমানে বন্যা দেখা দিয়েছে সে সবই মূলত সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা পানির ঢল ও অতিবৃষ্টি, যা অনেক সময় বাঁধ উপচে পড়ার কারণে ছেড়ে দেয়া হয়। একদিকে তিস্তা-ধরলা-তোরসা, অন্যদিকে অসমের ব্রহ্মপুত্রের বন্যার অনিবার্য প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশে। প্রতিবেশী দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত অভিন্ন নদ-নদীগুলোর বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিত বাঁধ ও ব্যারাজ নির্মাণের কারণেই প্রতিবছর এমন ঘটনা ঘটে থাকে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। আর এর অনিবার্য অসহায় শিকার হচ্ছে দু’দেশের সীমান্তবর্তী লাখ লাখ গরিব মানুষ। প্রধানত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আপত্তির কারণে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘদিন থেকে বিরাজমান অভিন্ন নদ-নদীর পানি সমস্যার নিরসনসহ তিস্তা-ফেনীর পানি সমস্যাটিও ঝুলে আছে। অথচ বন্যাদুর্গত ও নদীভাঙ্গন কবলিত অসহায় মানুষের সাংবাৎসরিক দুর্দশা লাঘবে দু’দেশের মধ্যে পানি সমস্যার মীমাংসা ছাড়া গত্যন্তর নেই। আমরা যথাসম্ভব দ্রুত এ বিষয়ে ভারত সরকারের হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করি। বন্যা-ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ প্রশাসনের ব্যবস্থাপনা দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। উত্তরাঞ্চলের খড়া মৌসুমে মঙ্গাপরিস্থিতি অনেকটাই সামাল দেয়া হয়েছে দরিদ্র ও বিধবা ভাতা, কাবিখা-টাবিখা ইত্যাদি প্রকল্পের মাধ্যমে। এবার হঠাৎ করে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় হয়ত প্রশাসনের প্রস্তুতি ছিল না তেমন। যা হোক, এখন ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের উচিত সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া। বন্যাদুর্গতদের উদ্ধার করার পাশাপাশি প্রয়োজন বিশুদ্ধ খাবার পানি, শুকনা খাবার, জরুরী ওষুধপত্র, তাঁবু ইত্যাদি। গরিব ও অসহায় মানুষদের কাছে এখনই সেসব পৌঁছে দেয়া প্রশাসনের জরুরী কর্তব্য।
×