ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মাহিয়ান দ্বীপ

এমন বিয়ে আবার কবে?

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ৫ জুলাই ২০১৭

এমন বিয়ে আবার কবে?

অবশেষে মহা ধুমধামেই হয়ে গেল ফুটবলের রাজপুত্র লিওনেল মেসির বিয়ে। গত শুক্রবার রোজারিওর সিটি সেন্টারে সম্পন্ন হলো লিওনেল মেসি ও এ্যান্তোনেলা রোকুজ্জোর বিয়ে। আদর করে যে জুটিকে ডাকা হয় ‘এ্যান্তো-লিও’। স্পেনের জায়ান্ট ক্লাব বার্সিলোনা এবং আর্জেন্টিনার অনেক তারকা ফুটবলার ছিলেন অনুষ্ঠানে। ছিলেন শো-বিজ জগতের অনেক তারকাও। সব সংশয় উড়িয়ে শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠানে গান গেয়েছেন মেসির বার্সা সতীর্থ জেরার্ড পিকের কলম্বিয়ান গায়িকা স্ত্রী শাকিরাও। হুলস্থুল আয়োজনে সম্পন্ন হওয়া লিওনেল মেসির বিয়েকে বলা হচ্ছে, আর্জেন্টিনার শতাব্দীর সেরা বিয়ে। বর্তমান বিশ্বসেরা খেলোয়াড়ের এই বিয়েটিকে ঘিরে গণমাধ্যমের উৎসাহের কমতি ছিল না। দুই সন্তানের জননী রোকুজ্জোর সঙ্গে এই বিয়ের অনুষ্ঠানটিকে ‘শতাব্দীর সেরা বিয়ে’ হিসেবে উল্লেখ করেছে সংবাদমাধ্যমগুলো। এ সময় রোমাঞ্চিত হয়ে মেসি শুধু বলেন, ‘আমি পেরেছি’। আনন্দঘন এ অনুষ্ঠানে নবদম্পতি জুটি ছিলেন বেশ নির্ভার এবং সুখী চেহারা নিয়ে রাজকীয়ভাবে লালগালিচার ওপর হেঁটে বিবাহ অনুষ্ঠানে হাজির হন। ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ঠিক ৯টা। ফটোসেশনের পর হলঘরে ঢুকে পড়েন দুইজনে। যেখানে মিডিয়া ছিল না। সেই ঘরে ছিলেন ভিআইপি অতিথি ও ম্যারেজ রেজিস্ট্রার গঞ্জালো ক্যারিও। তিনিই দুইজনকে ধর্মীয় এবং আইনগতভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করেন। রোকুজ্জোর প্রিয় গায়ক আবেল পিন্টো। ৩৩ বছর বয়সী এই শিল্পী মেসি-রোকুজ্জোর বিবাহ-চুম্বনের আগে সুরের লহরী তোলেন। মেসি-দম্পতির সঙ্গে অতিথিরাও কোরাসে গলা মেলান ‘আই লাভ ইউ উইদাউট বিগিনিং অর এ্যান্ড’ গানে। যে গান শেষ হতেই রোকুজ্জোকে ‘লিপ-লক’ করতে এগিয়ে যান আধুনিক ফুটবলের খুদে যাদুকর লিওনেল মেসি। একটি হোটেল-কাম ক্যাসিনোতে আয়োজিত বিয়ের এই অনুষ্ঠানে এ সময় আমন্ত্রিত অতিথির পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেনÑ শত শত সাংবাদিকও। এ সময় রোকুজ্জোর পরনে ছিল স্প্যানিশ ডিজাইনার রোজা ক্লারার ডিজাইনে তৈরি একটি গাউন। মেসির পরনে ছিল সাদা শার্টের ওপর স্যুট-প্যান্ট। সংবাদমাধ্যমের গুঞ্জন, রোকুজ্জো আর তার শাশুড়ি সেলিয়ার মধ্যে চলছিল ঠা-া লড়াই। কিন্তু তারপরও অনুষ্ঠানে স্বামী জর্জে ও মেয়ে মারিয়াকে নিয়ে উপস্থিত ছিলেন মেসির মা। মেসির বাবা জর্জে এদিন হাসিমুখে মিডিয়াকে বলে যান, ‘এটাই লিওনেল মেসির জীবনের সবচেয়ে বড় ম্যাচ।’ ২৬০ জন আমন্ত্রিত অতিথির সামনে পাত্র-পাত্রীর আসনে এই জুটির সঙ্গে ছিলেন তাদের দুই সন্তান থিয়াগো এবং মাতেও। থিয়াগোর বয়স চার বছল অন্যদিকে মাতেও বয়স এক বছর। উল্লেখযোগ্য অতিথিদের মধ্যে ছিলেন পপ তারকা শাকিরা ও তার স্বামী মেসির সতীর্থ জেরার্ড পিকে। এছাড়াও বার্সিলোনার ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার নেইমার, উরুগুয়ের তারকা সুয়ারেজ, জাভিরা এসেছিলেন। এসেছিলেন অনেক ফুটবলারের স্ত্রী-পরিবারও। ছিলেন সস্ত্রীক কার্লেস পুয়োল। স্যামুয়েল ইতো আর দানি আলভেজরা ছিলেন। আর আর্জেন্টিনার ফুটবলারদের মধ্যে সস্ত্রীক এ্যাগুয়েরো, লাভেজ্জি, ডি মারিয়া, মাসচেরানোরা বিয়ের আসর মাতিয়ে রাখলেন নেচে গেয়ে। সুয়ারেজের সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী সোফিয়া বালবি। এ্যান্তোনেল্লার সঙ্গে সোফিয়া বার্সিলোনায় বিলাসবহুল ডিজাইনার জুতোর ব্যবসা করেন। আর্জেন্টিনা ও স্পেনের বেশ কয়েকজন অভিনেতা, অভিনেত্রী, গায়ক-গায়িকা, সুপার মডেলরাও ছিলেন অনুষ্ঠানে। তবে বিয়েতে দাওয়াত পাননি লিওনেল মেসির কোন কোচই। লুইস এনরিক, পেপ গার্ডিওলা এমনকি তার স্বদেশী কিংবদন্তি দিয়াগো ম্যারাডোনাও। প্রিয় শিষ্যর বিয়েতে ম্যারাডোনাকে দেখা যাবে, এমনটাই হয়তো ভেবেছিলেন অনেকে। কিন্তু এখন জানা যাচ্ছে, ম্যারাডোনা নাকি মেসির বিয়ের সেই আমন্ত্রণপত্রটিই হারিয়ে ফেলেছেন! এ বিষয়ে এক সাক্ষাতকারে ম্যারাডোনা বলেন, ‘আমি মেসিকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। সে জানে যে, আমি তাকে কত ভালবাসি। আমার আমন্ত্রণপত্রটা কোথাও হারিয়ে গেছে। কিন্তু মেসির প্রতি আমার মনোভাব কখনই বদলাবে না। সে খুবই ভাল খেলোয়াড় ও একজন ভাল মানুষ।’ ২০১০ সালের বিশ্বকাপে অংশ নেয়ার সময় ম্যারাডোনা ছিলেন আর্জেন্টিনার কোচ। মেসি ছিলেন অধিনায়ক। দুজনের যুগলবন্দীকে সে সময় শিরোপা জয়ের আশা জাগিয়েছিল আর্জেন্টিনা সমর্থকদের মনে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য দলকে সাফল্য এনে দিতে পারেনি ‘মেসিডোনা’। কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির কাছে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল আর্জেন্টিনাকে। তবে সেটা অতীত, শুক্রবার অনুষ্ঠিত মেসির বিয়েতে ম্যারাডোনার অনুপস্থিতি অবাক করেছে অনেককেই। এদিকে মেসি-রোকুজ্জোর বিয়ের ম্যারেজ প্ল্যানার মারিয়ানা ফিলিপ। বিয়ের খরচ ২.৫ বিলিয়ন ডলার। ফিলিপ জানিয়েছেন, খাওয়াদাওয়া, অতিথি আপ্যায়ন, হোটেলের ঘর ভাড়ার চেয়েও দামী ফুল দিয়ে বিবাহ বাসর সাজানো, উৎসবমুখর পরিবেশ, চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা এবং ইন্টিরিয়র ডেকোরেশনের কারণে এত পরিমাণ ব্যয় হয়েছে। এসব কারণেই মায়াবী পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিল বিয়ের অনুষ্ঠানে। তবে মেসি- রোকুজ্জো কোন উপহার গ্রহণ করেননি। কিন্তু অতিথিদের জন্য রাখা ছিল বিশেষ স্মারক বাক্স। সে বাক্সে ছিল ফ্যামিগলিয়া বিয়াঞ্চির ওয়াইন। ছিল জনপ্রিয় ডেজার্ট, পারফিউমও। আলোচিত এই জুটির হাতে হাত রেখে পথচলার শুরুটা সেই শৈশব থেকেই। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে রোকুজ্জো-মেসির প্রথম দেখা। তিনি ছিলেন মেসির ঘনিষ্ঠ বন্ধুর আত্মীয়। মাত্র ১৩ বছর বয়সেই আর্জেন্টিনা ছেড়ে স্পেনে পাড়ি জমান লিওনেল মেসি। কিন্তু রোকুজ্জোর সঙ্গে তার সম্পর্ক অটুট ছিল। ৩০ বছর বয়সী মেসি ও ২৯ বছর বয়সী রোকুজ্জো দীর্ঘদিন ধরেই এক ছাদের নিচে ছিলেন। ২০১২ সালে এই জুটির ঘর আলো করে আসে প্রথম সন্তান থিয়াগো। ২০১৫ সালে জন্ম নেয় তাদের দ্বিতীয় সন্তান মাতেও। বিয়ে শেষ। এবার দুই পুত্র থিয়াগো ও মাতেওকে নিয়ে এ্যান্টিগা উড়ে যাবেন মেসি-রোকুজ্জো। সেখানেই হবে দুইজনের মধুচন্দ্রিমা।
×