ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

উবার কেলেঙ্কারি

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ৫ জুলাই ২০১৭

উবার কেলেঙ্কারি

বর্তমান প্রজন্মের সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রযুক্তি কোম্পানির অন্যতম উবার টেকনোলজিস ইনকর্পোরেটেডের যুগ্ম প্রতিষ্ঠাতা ট্রাভিস কালানিক প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। বেশকিছু স্ক্যান্ডাল ও বিপর্যয়ের পর বিনিয়োগকারীদের চাপের মুখে তিনি পদত্যাগে বাধ্য হন। তবে উবারের ৪০ শতাংশ মালিকানার বদৌলতে কোম্পানিতে তার প্রভাব থেকে যাবে। উবার প্রধানের পদত্যাগ সিলিকন ভ্যালিজুড়ে শকওয়েভ সৃষ্টি করে। তার মতো একজন ডায়নামিক নেতার বিকল্প খুঁজে পেতে কোম্পানির পরিচালকম-লীকে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে। কালানিকের প্রস্থান বিশ্বের সর্ববৃহৎ রাইড-সার্ভিস কোম্পানির এক টালমাটাল অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটাল। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, কালানিকের বিচিত্র ও বিতর্কিত কর্মপদ্ধতি ও কৌশন সত্ত্বেও সেটা ট্যাক্সি শিল্পে বিপ্লব ঘটিয়েছে এবং সারা বিশ্বের পরিবহন আইনকানুনের প্রতি চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। গত ৮ বছরে এ রাইড-হেইলিং কোম্পানি বিশ্বের এক পাওয়ার হাউজে পরিণত হয়েছে যার মূল্য প্রায় ৭ হাজার কোটি ডলার। এ কোম্পানি বিশ্বের ৭৬টি দেশের ট্যাক্সি শিল্পে বিপর্যয় ঘটিয়েছে এবং এমন এক এ্যাপ তৈরি করেছে যার ওপর কোটি কোটি মানুষ ট্যাক্সি ভাড়া করা এবং ভাড়া দিয়ে আয় করার ওপর নির্ভর করছে। কিন্তু অতি সফল এ কোম্পানিটি শুরু থেকেই নানা ধরনের কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত ছিল। বিভিন্ন মামলা-মোকদ্দমা হয়েছে। ড্রাইভারদের বিদ্রোহ হয়েছে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সম্প্রতি উন্মোচিত যৌনতার সংস্কৃতি। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে উবার ট্যাক্সি সার্ভিসের এক ড্রাইভার যাত্রীকে মারধর করেছে বলে অভিযুক্ত হয়। উবার এ ব্যাপারে নিজ দায়দায়িত্ব অস্বীকার করে। পরের বছর জানুয়ারি উবারের এক ড্রাইভার ৬ বছরের এক বালিকাকে হত্যা করলে উবারের বিরুদ্ধে মামলা হয়। উবার দায়দায়িত্ব অস্বীকার করলেও পরে আদালতের বাইরে মামলার নিষ্পত্তি করে। ২০১৫ সালে জানুয়ারি এক ভারতীয় মহিলা দিল্লীতে উবারের এক ড্রাইভারের দ্বারা ধর্ষিত হয়েছে এ অভিযোগে কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করে। পরে সেটার ফয়সালা হয়ে যায়। ২০১৬ সালের জানুয়ারি নিউইয়র্কের এ্যাটর্নি জেনারেল উবাকে তার ‘গডর্স ভিউ’ নামক সরঞ্জামের জন্য ২০ হাজার ডলার জরিমানা করে। এর সাহায্যে উবার নাকি গোপনে গ্রাহকদের ট্র্যাক করত। এদিকে ড্রাইভাররাও তাদের আইনগত অবস্থান কি হবে তা নিয়ে মামলা করে। তারা দাবি করে তাদের উবারের কর্মচারী হিসেবে গণ্য করতে এবং এর জন্য প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। কেউ কেউ অভিযোগ করে তারা ন্যূনতম মজুরিও আয় করতে পারছে না। প্রতিযোগী কোম্পানি লিফট অভিযোগ করে যে, ছোট প্রতিদ্বন্দ্বীদের ঘায়েল করতে উবার ট্যাক্সি সার্ভিস কল করা ও পরে তা বাতিল করার মতো অপকৌশলও নিয়ে থাকে। তবে উবারকে প্রবলভাবে ঝাঁকুনি দেয় এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কোম্পানির সাবেক ইঞ্জিনিয়ার সুশান ফাউলারের লেখা ২৯০০ শব্দের একটি ব্লগ পোস্ট। সেখানে তিনি উবারের অভ্যন্তরে যৌন হয়রানির বিভিন্ন অভিযোগ আনেন। এ নিয়ে চারদিকে সমালোচনা উঠে। কালানিক যৌন হয়রানি, নারী-পুরুষ ও বর্ণগত বৈষম্য ও প্রতিহিংসাপরায়ণতার অভিযোগ তদন্তে এরিক হোল্ডারের ল’ ফার্মকে নিয়োগ করেন। গত মার্চ মাসে প্রেসিডেন্ট জেফ জোন্স নেতৃত্বের কৌশল নিয়ে মত পার্থক্যের কারণে পদত্যাগ করেন। মে মাসে বিচার বিভাগ পৌর কর্তৃপক্ষকে ফাঁকি দেয়ার কাজে ব্যবহৃত উবারের গ্রেবল সফটওয়্যারের ব্যাপারে তদন্ত শুরু করে। জুন মাসে ২০১৩ সালের একটি ই-মেইল ফাঁস হয়। তাতে দেখা যায় যে কোম্পানির অবকাশের সময় কিভাবে সেক্স করতে ও ড্রাগ নিতে হয় সে ব্যাপারে কালানিক উবার কর্মচারীদের পরামর্শ দিচ্ছেন। একই মাসে হোল্ডারের তদন্তের ফলাফল ঘোষণা করা সংক্রান্ত এক বৈঠকে সেক্সি মন্তব্য করার পর উবারের বোর্ড সদস্য ডেভিড বন্ডারম্যান পদত্যাগ করেন। উবারের আরও কিছু ভুলভ্রান্তি ও বিচ্যুতি আছে। গত বছর উবার ম্যাসাচুসেটস ও ক্যালিফোর্নিয়ার ড্রাইভারদের আইনগত মামলার নিষ্পত্তি করতে গিয়ে ৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার পরিশোধ করে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নীতির প্রতি উবারের সমর্থনের প্রতিবাদে প্রায় ২ লাখ গ্রাহক উবারের এ্যাকাউন্ট বাদ দেয়। এছাড়া উবার গুগলের স্বচালিত গাড়ি বিভাগ ওয়াইমো থেকে ১৪ হাজার দলিল চুরি করেছে বলে অভিযোগ আছে। এ নিয়ে ওয়াইমো উবারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। চলমান ডেস্ক সূত্র : টাইম
×