ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুনাফার পরিবর্তে ক্ষতির আশঙ্কা

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ৫ জুলাই ২০১৭

মুনাফার পরিবর্তে ক্ষতির আশঙ্কা

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ রেলের পূর্বাঞ্চলে সরবরাহকারীদের বকেয়া পাওনা প্রায় ৩০ কোটি টাকা। সরবরাহকারীদের অর্থ পরিশোধ না করে রেল কর্তৃপক্ষ ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের হিসাবের খাতা বন্ধ করার অপচেষ্টায় মেতে উঠেছে গত ১৯ জুন থেকে। এদিকে উপ-অর্থ উপদেষ্টা ও হিসাব অধিকর্তার (কারখানা) দফতরে সরবরাহকারীদের বিল পরিশাধে বৈষম্য সৃষ্টি করার অভিযোগ উঠেছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। অপরদিকে, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে সরবরাহকারীদের প্রত্যেক বিলের বিপরীতে শতকরা ১৫ ভাগ ভ্যাট গুনতে হবে। যা গত অর্থবছরের তুলনায় আরও ১০ ভাগ বেশী। ফলে চলমান অর্থবছরে বকেয়া পাওনা আদায় করতে না পারায় সরবরাহকারীদের মাঝে ক্ষতির আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, অতিরিক্ত অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তার (স্টোর) দফতরে সরবরাহকারীদের বকেয়া পাওনার পরিমাণ প্রায় ২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিভিন্ন জ্বালানী তেল কোম্পানির ১১ কোটি টাকা ও বাকী প্রায় ১৬ কোটি টাকা স্টোর কেন্দ্রিক সরবরাহকারীদের। উপ-অর্থ উপদেষ্টা ও হিসাব অধিকর্তার (ডিএফএ/কারখানা) আওতায় সরবরাহকারীদের বকেয়া পাওনার পরিমাণ প্রায় ২৩ কোটি টাকা ছিল। কিন্তু অর্থ বছরে বাজেট বরাদ্দ ছিল প্রায় ২১ কোটি টাকা। আগামী অর্থ বছরের বাজেট থেকে আগেভাগেই প্রায় ২ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলীর (সিএমই) অনুরোধে গত ১৯ জুন পর্যন্ত বিল দেখিয়ে প্রায় ১ কোটি টাকা অতিরিক্ত পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু গত ২২ জুন পর্যন্ত ডিএফএ কারখানার আওতায় থাকা ডিজেল শপের সরবরাহকারীদের প্রায় ৮০ লাখ টাকার বিল পরিশোধ না করে সরবরাহকারীদের মাঝে বৈষম্য সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এদিকে, ডিএফএ/সিটিজির দফতর থেকেও আগামী অর্থবছরের প্রায় এক কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ করা হয়েছে যা পরে সমন্বয় করা হবে। শুধু তাই নয় প্রত্যেকটি অর্থ বিভাগকে প্রধান অর্থ উপদেষ্টা ও হিসাব অধিকর্তা (এফএএ্যান্ডসিএও) সরবরাহকারীদের বিল পরিশোধে আগামী অর্থবছরে সমন্বয়ের সুযোগ দিলেও উপ-অর্থ উপদেষ্টা ও হিসাব অধিকর্তার (কারখানা) আওতায় থাকা ডিজেল শপের অর্থ পরিশোধে অতিরিক্ত খরচে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এমনকি এফএএন্ডসিএও দফতর থেকে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে যেন বাজেটের বাহিরে কোন অর্থ খরচ করা না হয়। এ ব্যাপারে পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান অর্থ উপদেষ্টা ও হিসাব অধিকর্তা কামরুন নাহার জনকণ্ঠকে জানান, বাজেটের তুলনায় ক্রয়সীমা অনেক বেশি। ফলে সরবরাহকারীদের বিল অপরিশোধিত থেকে যায়। তিনি আরও বলেন , যে সকল বিভাগ ক্রয়ের সঙ্গে জড়িত তাদের একটু হিসেব-নিকেশ করে ক্রয় করা উচিত। নতুন আইনে ভ্যাট গ্রহনের বিষয়টিও সরবরাহকারীদের হিসেব করতে হবে। এ ব্যাপারে উপ-অর্থ উপদেষ্টা ও হিসাব অধিকর্তা (কারখানা) সুকেন্দ্র হালদার জনকন্ঠকে জানান, ডিজেল শপের সরবরাহকারীদের বিল পরিশোধে কোন অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়নি। ফলে এসব সরবরাহকারীদের প্রায় ৮০ লাখ টাকা বিল পরিশোধ করা যায়নি। গত ২১ জুন সরবরাহকারীরা বিল আদায়ে তার দফতরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময়ক্ষেপণও করেছেন। কিন্তু বরাদ্দ না থাকায় বিল পরিশোধ সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে বিভাগীয় অর্থ উপদেষ্টা ও হিসাব অধিকর্তা/ টিএ জনকন্ঠকে জানান, কয়েকদিন আগে ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ১ কোটি টাকা রাজশাহীতে পাঠানো হয়েছে, ৩ কোটি টাকা তেল কোম্পানি নেয়ার পর ২ কোটি টাকা সরবরাহকারীদের আংশিক বিল হিসেবে প্রদান করা হয়েছে। বাকী বিল পরিশোধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আবার পরবর্তী বাজেট বরাদ্দ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে সরবরাহকারীদের। এক্ষেত্রে নতুন আইনে ভ্যাট গ্রহনের বিষয়টিও নিশ্চিত করেছেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, সরবরাহকারীরা গত অর্থবছরের হিসেব অনুযায়ী, স্ল্যাব অনুযায়ী ট্যাক্স ও ভ্যাট হিসেব করেই দরপত্রে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করেই পণ্য সরবরাহ করেছেন। কিন্তু নানা জলপনা-কল্পনার পর শেষ পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী শতকরা ১৫ ভাগ ভ্যাট নির্ধারণে ও আদায়ে অটল থাকায় এবং সংশোধিত ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করায় বেকায়দায় পড়েছেন ঠিকাদাররা। ফলে গত অর্থবছরে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করে প্রধান অর্থ উপদেষ্টা ও হিসাব অধিকর্তার দফতরে বিল জমা দিলেও বকেয়ার খাতায় থেকে গেল প্রায় ৩০ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ৪র্থ দফায় সরবরাহকারীদেরকে প্রদেয় ৩০ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ না দেয়ায় গচ্চা দিতে হবে আগামী অর্থ বছরে এমন অভিযোগ সরবরাহকারীদের। আরও অভিযোগ রয়েছে, যেসব প্রতিষ্ঠানের বিলের পরিমাণ যত বেশি ওই সকল প্রতিষ্ঠান আনুপাতিক হারে কম বিল পেয়েছে। তবে যেসব প্রতিষ্ঠানের মাত্র একটি বিল ছিল সেসব প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ বিল পেয়েছে। এতে সরবরাহকারীদের মাঝে ক্ষোভ জন্ম নিয়েছে। কারণ, অত্যধিক কাজ করার বিপরীতে রেলের কাছে বকেয়া পাওনার আধিক্য বেড়েছে। অর্থ বছরের শেষ লগ্নে রমজানের ঈদ পড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের খরচের পরিমাণ বাড়লেও রেল কর্তৃপক্ষ প্রায় ৩০ কোটি টাকা বকেয়া পরিশোধ না করায় বেকায়দায় পড়েছে সরবরাহকারীরা।
×