ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে মদদ দেয়ার ভারতের অভিযোগ সমর্থন ইসরাইলের

ইসরাইলে প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৬:২১, ৫ জুলাই ২০১৭

ইসরাইলে প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে মদদ দেয়ার ভারতের অভিযোগ সমর্থন করেছে ইসরাইল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ইসরাইলে ‘ঐতিহাসিক’ সফরে যাওয়ার একদিন আগে ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা একথা জানিয়েছেন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও এনডিটিভি। নরেন্দ্র মোদি তিনদিনের সফরে মঙ্গলবার ইসরাইল পৌঁছেছেন। তার এ সফরের একদিন আগে ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল মার্ক সোফার বলেন, ‘পাকিস্তানের দিক সন্ত্রাসী তৎপরতা চালানো হচ্ছে বলে ভারতের দাবি সঠিক। লস্কর ই তৈয়বা একটি জঙ্গী সংগঠন, পাকিস্তানী ভূখন্ড থেকে তারা ভারতে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাচ্ছে। আমরা মনে করি, ভারতের নিজেকে রক্ষা করার অধিকার রয়েছে। যেমন অধিকার রয়েছে ইসরাইলের নিজেকে রক্ষার ক্ষেত্রে। লস্কর ই তৈয়বা এবং হামাসের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। সন্ত্রাসী সন্ত্রাসীই।’ তিনি বলেন, দুই দেশই একই রকম সন্ত্রাসের হুমকির মধ্যে রয়েছে। উভয় দেশকে তাই সমম্বিতভাবে এ সমস্যা মোকাবেলা করতে হবে। ভারতে নিযুক্ত ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত ড্যানিয়েল কারমন বলেছেন, ‘অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ে দুই দেশ ২০১৪ সালে একটি চুক্তি সই করেছে। চুক্তি অনুযায়ী উভয়দেশ এ বিষয়ে পরস্পরকে সহযোগিতা করছে।’ মোদি ইসরাইল সফরকারী প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। দু’দিনের এ সফরে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুসহ দেশটির সিনিয়র মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বুধবার দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে। এছাড়া ইসরাইলের একটি পুষ্প উদ্যান ও হলোকস্ট মিউজিয়াম পরিদর্শনও মোদির সফরসূচীর মধ্যে রয়েছে। সোফার ইতোপূর্বে ভারতে ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, মোদির ইসরাইল সফরকালে দুইদেশের মধ্যে তিনটি মহাকাশ সহযোগিতা চুক্তি হবে, ইসরাইলে একটি ভারতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন, পানি ও কৃষি বিষয়ক একটি যৌথ উদ্যোগ এবং একটি যৌথ সিইও ফোরাম গঠন করা হবে। ইসরাইলে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত পাভান কাপুর সোমবার বলেছেন, দুইদেশের মধ্যকার সম্পর্ক ভারত আর আড়ালে রাখতে যে ইচ্ছুক নয় প্রধানমন্ত্রী এ সফরের মধ্য দিয়ে সে বার্তাটিই দিতে চান।’ মোদির এ সফরের উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে তিনি রামাল্লায় ফিলিস্তিনী কর্তৃপক্ষের সদর দফতর পরিদর্শনে যাচ্ছেন না। ২০১৫ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী ইসরাইল সফরকালে রামাল্লা গিয়েছিলেন। ২৫ বছর ধরে ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকলেও মুসলিম জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনায় নিয়ে ভারত সবসময় ইসরাইল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে ভারসাম্যপূর্ণ প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে আসছিল। এসব কারণেই মোদির এ সফরকে ভারতের আগের মধ্যপ্রাচ্য নীতির ধারাবাহিকতা থেকে সরে আসা হিসেবে দেখছেন পর্যবেক্ষকরা। ভারত ও ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের সম্পর্ক ‘গভীর ও শতাব্দী প্রাচীন’। কয়েক বছর ধরে দেশ দুটি সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ, প্রতিরক্ষা, কৃষি, পানি ও জ্বালানি খাতে একসঙ্গে কাজ করে আসছে। ইসরাইলও মোদির এই সফরকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করছে। নেতানিয়াহু ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আসন্ন বৈঠককে দুইদেশের সম্পর্ক জোরদারে ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইসরাইল। যুক্তরাষ্ট্র সফরের পরে ইসরাইল সফরেও সন্ত্রাসবাদই যে আলোচনার অন্যতম ইস্যু হবে সম্প্রতি এক সাক্ষাতকারে মোদি সে ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলেন। ইসরাইলের একটি সংবাদপত্রকে মোদি বলেছিলেন, বিশ্বের অন্যতম বড় অভিশাপ হলো সন্ত্রাসবাদ। তাই যারা তা সৃষ্টি করছে তাদের রেহাই দেবে না ইসরাইল ও ভারত। নিরীহ মানুষ যারা হত্যা করছে তাদের কোন ভাবেই প্রশ্রয় দেবে না দুইদেশ। জার্মানির হামবুর্গে জি-২০ সম্মেলনে যাওয়ার আগে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ইসরাইলে অবস্থান করবেন মোদি। এদিকে মোদির এই সফর উপলক্ষে ইসরাইলী সঙ্গীতশিল্পী লিওরা আইজ্যাক রাজধানী তেল আবিবে পারফর্ম করবেন বলে জানা গেছে। দুইদেশের জাতীয় সঙ্গীতও তিনি গাইবেন।
×